ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সরেজমিন ৮ কেন্দ্র

কেটলির এজেন্টকে প্রাণনাশের হুমকি, দিনভর গাজীর ক্যাডারদের মহড়া

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৪
কেটলির এজেন্টকে প্রাণনাশের হুমকি, দিনভর গাজীর ক্যাডারদের মহড়া

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে: নারায়ণগঞ্জ -১ আসনের রূপগঞ্জের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ভোটের পুরো দিন ছিল নৌকার প্রার্থী এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ক্যাডারবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তার লোকজন আসনের কেটলি মার্কার প্রার্থী আলহাজ্ব শাজাহান ভূইয়ার এজেন্টকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে।

জানা গেছে, গাজীবাহিনী ভোট কেন্দ্রগুলোর সামনে ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে দিনভর প্রভাব বিস্তার করে। অন্য প্রার্থীর ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বিভিন্ন কৌশলে বাধাও সৃষ্টি করে তারা।

ভোট দিতে না পারা অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া আসনের আটটি কেন্দ্রে গিয়ে গাজীবাহিনীর প্রতাপ দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেটলি মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র ভোট করা আলহাজ্ব শাজাহান ভূইয়ার এজেন্টদের কেন্দ্রে না আসতে হুমকি দিয়েছে গাজীবাহিনী। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোয় সরেজমিনে গিয়ে দস্তগীর গাজীর নেতাকর্মীদের শো-ডাউন দেখা গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভোটের আগের রাতে তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে। সকাল থেকে গাজীর লোকজন ভোট কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে দখল ধরে রেখেছিল। অন্য প্রার্থীর এজেন্টদেরও হুমকি দিয়েছে তারা।

কেটলি প্রতীকের এজেন্ট ইলিয়াস মিয়া বলেন, শনিবার রাত থেকে আমাদের হুমকির ওপর রেখেছে গাজীবাহিনী। পারলে তারা আমাকে মেরে ফেলে। মোবাইলে হুমকি দেওয়ায় সেটি বন্ধ রেখেছি। এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে তারা।

কেটলি আরেক এজেন্ট এলাচি বেগম বলেন, ভয়ের মধ্যে আছি৷ অনবরত হুমকি দিচ্ছে দস্তগীর গাজীর লোকজন।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের একটি কেন্দ্রে আটটি বুথ স্থাপন করা হয়েছিল। জানা গেছে, বেশিরভাগ বুথে নৌকা ও ঈগলের এজেন্ট ছিল। এছাড়া কেন্দ্রের বাইরে সড়কজুড়ে ছিল কিশোর গ্যাং ও যুবকদের জমায়েত। তারা কেন্দ্রের চারপাশে ঘোরাফেরা করে কেটলি মার্কার কোনো এজেন্ট আছে কিনা খোঁজ নিচ্ছিল।

আসনের ৪ নম্বর বুথে নূর আলম ও বিউটি নামে দুজন নৌকার এজেন্টকে দেখা যায়। এ ছাড়া ঈগল ও আলমিরা প্রতীকের এজেন্ট পরিচয়ে নৌকার জন্য কাজ করছেন কয়েকজন। নূর আলম-বিউটি পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন কক্ষে আসা-যাওয়া করছেন।

একপর্যায়ে তাদের বাধা দেন কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান। তার সঙ্গে নূর আলম ও বিউটি তর্ক শুরু করেন। এ সময় এক সাংবাদিক নূর আলমের হম্বিতম্বি সম্পর্কে জানতে গেলে তাকে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে জানালে নূর আলম তার কক্ষে যান।

স্থানীয় ভোটারদের কয়েকজন জানান, ওই কেন্দ্রের ৮ বুথের আলমারি ও ঈগল প্রতীকের নামে নৌকার লোকজন এজেন্ট সেজে বসে ছিলেন। বেশিরভাগ এজেন্ট প্রার্থীর নাম জানেন না। তাদের অনেকের কাছে কোনো কার্ডও ছিল না।

সকালের দিকে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান দাবি করেন, সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়ার পর সারাদিন সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৬৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৮৪১ ও নারী ভোটার ১৮৪৮ জন।

এসআই হাবিবুর রহমান জানান, তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। কাউকে ছাড় দেননি।

পশ্চিমগাঁও বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে কেটলির লোকজনকে ঘিরে রাখে গাজীর লোকজন
জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নে ১২২ নম্বর পশ্চিমগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে কেটলির লোকজনকে ঘিরে রাখে গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে প্রচার চালানো দুর্বৃত্তরা। তারা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে মারমুখী ভূমিকায় ছিল। ‘এখানে গাজীর লোক ছাড়া কেউ কথা বলবে না’ বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ভোটার বলেন, গাজীর লোকজন এখানে কেটলিসহ অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের কোণঠাসা করে রেখেছিল। ভোট কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে যারা নৌকায় ভোট দিচ্ছে না তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। কেটলির পক্ষে কথা বললেই তাকে ধরে আড়ালে নিয়ে যাচ্ছিল গাজীর লোকজন।

ঈগলের এজেন্ট সেজে নৌকার হয়ে গাজীর লোকজন কাজ করেছে জানিয়ে একজন বলেন, ভোট দিতে এসে যদি প্রাণটা চলে যায়, তাহলে ভোট দিব কীভাবে?

স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মর্তূজার (ঈগল) লোকজন ডামি হয়ে গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে কাজ করেছে। গোলাম মর্তূজা মন্ত্রী গাজীর ছেলে।

আরেকটি কেন্দ্রের বুথে ইসমত আরা ও নুরুন্নাহার নামে দুজন ঈগলের এজেন্ট সেজে নৌকার জন্য কাজ করেছেন। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোতালেব খান বলেন, আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। কেউ কোনো সমস্যার মুখে পড়েনি।

চনপাড়া আল-আমিন মডেল একাডেমি, আল আরাফাহ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (পশ্চিম ভবন কেন্দ্র-১), আল আরাফাহ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (দক্ষিণ ভবন কেন্দ্র-২), জনকল্যাণ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও বড়ালু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা কেন্দ্রগুলোও গাজীর লোকজনের আওতায় ছিল। সারা দিন ধরেই তারা কেন্দ্রের সামনে মহড়া দিয়েছে।

দুপুর দেড়টার দিকে জনকল্যাণ আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, নৌকার লোকজন নিয়ম ভেঙে চলাফেরা করছিল। তাদের আধিপত্যের কারণে কেটলির কোনো এজেন্ট সেখানে বসতে পারেননি।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেটলির কোনো এজেন্ট না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই প্রার্থীর কোনো এজেন্ট কেন নেই সেটা আমার জানা নেই।

পুরো রূপগঞ্জে দস্তগীর গাজীর আধিপত্য ও ভয়ভীতির কারণে কেটলি প্রতীকের প্রার্থী এজেন্ট দিতে পারেননি বলে অভিযোগও করেছেন তার নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৪
এইচএমএস/ইএসএস/জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।