ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৪
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু ভোট দিতে অপেক্ষায় ভোটাররা। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: বিএনপিসহ ১৬টি দলের ভোট বর্জনের মধ্যে দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।  

রোববার (০৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে ২৯৯টি আসনে, যা বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে।

 

এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকার প্রতীকের প্রার্থীদের ভোটের লড়াই করতে হচ্ছে ঈগল ও ট্রাক প্রতীকের দলটিরই স্বতন্ত্র ও ‘ডামি’ প্রার্থীদের সঙ্গে।
 
ইতোমধ্যে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট বিডি নামের অ্যাপের দুই ঘণ্টা পর পর ভোট পড়ার হার জানানো হবে। এছাড়া অ্যাপটিতে ভোটাররা জানতে পারবেন ভোটার নম্বর, কেন্দ্রের নাম ও লোকেশনসহ নানা তুলনামূলক চিত্র।
 
নির্বাচনে মোট এক হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দল এক হাজার ৫৩২ জন প্রার্থী দিয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে ৪৩৭ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ঈগল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৮০ জন, আর ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতদ্বিন্দ্বিতা করছেন ১৩৩ জন, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা।
 
নির্বাচনে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণ ফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পাটি, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পাটি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল) ও গণতন্ত্রী পার্টি; এই মোট ২৮ টি দল এক হাজার ৫৩২ জন প্রার্থী দিয়েছে।
 
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। হাইকোর্ট থেকে ৩ জন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় দলটির নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৫ জন। জাতীয় পাটির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ২৬৪ জন, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আম প্রতীকের ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের ৯৬ জন ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী আন্দোলনের নোঙ্গর প্রতীকের ৫৬ জন।
 
নির্বাচনে তৃতীয় লিঙ্গের দুইসহ ৯৮ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর ৬৭ জন এবং স্বতন্ত্র থেকে ২৯ জন প্রার্থী রয়েছে। অন্যদিকে ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
 
ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানিয়েছেন, ২৯৯ আসনের নির্বাচনে ৪২ হাজার ২৪টি কেন্দ্রের দুই লাখ ৬০ হাজার ৮৫৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে নয় লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ করছেন।
 
নির্বাচনে ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯ জন, আর নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৮৪৮ জন।
 
ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট লাখের বেশি সদস্য। তারা ভোটের এলাকায় ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়োজিত থাকবে।
 
৬৪ জন জেলা প্রশাসক ও দুইজন বিভাগীয় কমিশনার রিটার্নিং কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। ভোটের অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার করতে দায়িত্ব পালন করছেন ৬৫৩ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। আর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় দুই হাজার ৭৬ জন।  

এ ছাড়াও ৩০০ আসনের জন্য নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন ৩০০ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
 
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বলেছেন, কোনো রকম অনিয়মন, কারচুপি, দায়িত্বে অবহেলা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বাতিল করা হতে পারে পুরো আসনের নির্বাচনও।
 
নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে নৌকার এক প্রার্থীকে এক লাখ টাকা ও আরেক প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এছাড়াও ১০ প্রার্থীসহ ৫০ জনের বেশি প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের দায়ে মামলা করেছে। আাবার নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিও ৭৪০টির বেশি শোকজ করেছে। এছাড়া ৩৩ লাখ ১৫ হাজার ৩০০ এক হাজার ৫১ জনকে বিভিন্ন অপরাধে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
 
নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবনের প্রার্থিতাও বাতিল করে ইসি, যদিও তিনি হাইকোর্ট থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
 
নির্বাচনে ২০ হাজার ৭৭৩ জন দেশি পর্যবেক্ষক ও ১৭৬ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। এছাড়া রয়টার্স, এএফপি, বিবিসহ বিভিন্ন দেশের ৭৬ জন বিদেশি সাংবাদিক ভোটের খবর পরিবেশন করবেন। এছাড়া দেশি কয়েক হাজার সাংবাদিক থাকবেন ভোটের মাঠে।
 
এদিকে নির্বাচন কমিশন তাদের পর্যবেক্ষক ও প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। তারা ও জেলা পর্যায়ে গঠিত মনিটরিং সেল ও নির্বাচন ভবনের কেন্দ্রীয় সেলে তথ্য দেবে। কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল মাঠের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
 
গত ১৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের তফসিল ঘোষণা করেন। এর মধ্যে এক বৈধ প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় নওগাঁও-২ আসনের নির্বাচন বাতিল করে ইসি। তাই ৭ জানুয়ারি ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৪
ইইউডি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।