ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

যথাসময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন: ইসি আলমগীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
যথাসময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন: ইসি আলমগীর নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর

ঢাকা: নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, যথা সময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন তিনি।



এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ইসি সচিবালয় ও সংসদ সচিবালয়ের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক করে তফসিলের সিদ্ধান্ত নেবেন।

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কার্যভার গ্রহণ করেন। সে মোতাবেক তাঁর দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল।

এদিকে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদটি শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে।

সংবিধানের এ বিধানের আলোকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ করতে হবে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব মো. ফরহাদ আহাম্মদ খান জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে এবং তারপর একমাসের মধ্যেই তফসিল ঘোষণাসহ নির্বাচন অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

এছাড়া সময় গণনা শুরু না হলে তফসিলও ঘোষণা করা যাবে না। তাই সময় গণনা শুরু হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। এক্ষেত্রে ভোট হবে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে।

২০১৮ সালে সর্বশেষ এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ওই বছর ২৫ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় ছিল ১০ ফেব্রুয়ারি এবং ভোটগ্রহণের সময় রাখা হয়েছি ১৮ ফেব্রুয়ারি। সে সময় ২২ দিনের মধ্যে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে সে সময় বর্তমান রাষ্ট্রপতি একক প্রার্থী থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

‘সাবেক’ রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে মো. আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ওই বছর ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে মো. আবদুল হামিদ সেদিন থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে  ২২ এপ্রিল তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর তিনি ২০১৮  সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ওই বছর ২৪ এপ্রিল ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।

সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি আর এই পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।

সংবিধানে যা আছে:

সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে ওই পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইনানুযায়ী সংসদ সদস্যরাদের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি ৪৫ বছরের কম বয়স্ক হন; অথবা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হন, অথবা কখনও এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকেন।

অন্যদিকে ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদে তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।

আবার একাধি ক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। স্পিকারের উদ্দেশে সইযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর কার্যভারকালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া যোগ্য হবেন না এবং কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতি রূপে তাঁর কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তাঁর আসন শূন্য হবে।

নির্বাচন পদ্ধতি:

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনানুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘নির্বাচনী কর্তা’ হিসেবে এই নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এজন্য একটি জাতীয় সংসদ কক্ষে সংসদ সদস্যের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নির্বাচনী কর্তা সভাপতিত্ব করবেন।

সংসদের অধিবেশন চলাকালে নির্বাচনের প্রয়োজন হলে কমিশন ভোটগ্রহণের অন্যূন সাতদিন আগে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের সময়সূচি নির্ধারণ করবে। আর সংসদ অধিবেশন না থাকলে ভোটগ্রহণের দিনে স্পিকারের সঙ্গে অন্যূন্য সাতদিন আগে আলোচনা করে সংসদের বৈঠক সরকারি প্রজ্ঞাপনের আহ্বান করবে।

রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনোনয়নপত্রে একজন সংসদ সদস্যের প্রস্তাবক ও একজন সংসদ সদস্যের সমর্থক হিসেবে সই থাকতে হবে।

এছাড়া যিনি মনোনীত হবেন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সম্মতিসূচক তারও একটি বিবৃতি থাকতে হবে। এ নির্বাচনে ভোটার হবেন সংসদ সদস্যরা। কমিশন একটি ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে।

বৈধ একাধিক প্রার্থী থাকলে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন শেষে একাধিক প্রার্থী থাকলে সংসদের বৈঠকে নির্ধারিত দিনে দুপুর ১২টার পর ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

ভোটগ্রহণ যেমন প্রকাশ্যে হবে, তেমনি ভোট গণনাও প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সর্বোচ্চ ভোট যদি একাধিক প্রার্থী পেয়ে যান, তবে তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করবেন। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণাই চূড়ান্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।