ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ইবির অনলাইন ক্লাস: ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর দায় কে নেবে?

তারিকুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
ইবির অনলাইন ক্লাস: ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর দায় কে নেবে?

ইবি: করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারি আদেশে গত ১৭ মার্চ থেকে ছুটি ঘোষণা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে বিভাগগুলোতে চলছে অনলাইন ক্লাস।

তবে অনলাইন ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ মাত্র ৪৭ শতাংশ।  

১০ শতাংশ শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত অনীহা থেকে ক্লাস না করলেও বাকি ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাস করছেন না নানা প্রতিকূলতার কারণে। এসব প্রতিকূলতা দূর করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করতে নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যত কোনো উদ্যোগ। যার ফলে একাডেমিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছেন তারা।
 
অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব ফান্ড থেকে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে আসছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন সিম কোম্পানির সঙ্গে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবার চুক্তিও করেছে।

কিন্তু ইবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আর্থিক সহায়তাসহ অন্য কোনো সুবিধা পাননি শিক্ষার্থীরা। গত ১৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে তিন লাখ ৪৩ হাজার টাকার অনুদান দিলেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের ডিভাইস কিনতে ইউজিসির আর্থিক সহায়তা পেতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট দুই হাজার ৪৭ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। এ তালিকা ইউজিসিতে পাঠিয়েছে প্রশাসন। তবে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সে সহায়তা পাননি শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে গত ৭ মে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। প্রশাসনের নির্দেশক্রমে বিভাগগুলো জুম অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের অনলাইন ক্লাস শুরু করে। তবে ক্লাস শুরুর আগে থেকেই এর বিপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের দুর্বল অবস্থা, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের ডিভাইস ও ডাটা প্যাক কেনায় টাকার অভাবসহ বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছেন তারা।  

ক্লাস চালু করার পরপরই সিংহভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকছেন। সময়ের আবর্তে কিছু কিছু বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের ক্লাসে ৬০-৭০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও বর্তমানে বেশিরভাগ বিভাগে ৩৫-৪৫ ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত থাকেন।  

শিক্ষার্থী ও বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩৪টি বিভাগের সবগুলোতেই অনলাইন ক্লাস চলছে। প্রতিটি বিভাগই তাদের এক শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস সম্পন্ন করেছে। কিছু বিভাগ আবার এক শিক্ষাবর্ষের দুটি সেমিস্টারের ক্লাসও সম্পন্ন করেছেন। তবে বিভিন্ন বিভাগের সভাপতিরা জানান, অনলাইনে সেমিস্টারের ক্লাস সম্পন্ন করা হলেও ক্যাম্পাস খোলা হলে কিছু ক্লাস নিতে হবে। অন্তত এক সপ্তাহ ক্লাস নিয়ে তারপর পরীক্ষায় যেতে হবে।

ইচ্ছা থাকার পরও ক্লাসে অংশগ্রহণ না করা ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। আবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকায় ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। তাছাড়া তাদের ডিভাইস থাকলেও সম্ভব হচ্ছে না উচ্চ মূল্যে ডাটা প্যাক কেনা। এভাবে ডাটা কিনে ক্লাস করা অসম্ভবই বলে দাবি করেছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, টিউশনি করে পরিবার, নিজের খরচ চালানোর পর কিছু টাকা জমিয়ে ফোন কিনেছিলাম। করোনার জন্য এখন আমার টিউশনি নেই। বাড়ি এসে কৃষি কাজই আমার ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফোন থাকলেও আমার ক্লাসে অংশ নেওয়ার সামর্থ্য নেই। যেখানে দিনে একমুঠো ভাত জোগাড় করতেই আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে ডাটা কিনে ক্লাসে অংশগ্রহণ করাটা অসম্ভব। অনলাইন ক্লাস টাকা বিত্তশালী শিক্ষার্থীদের জন্য, আমার মতো শিক্ষার্থীর জন্য নয়।
করোনায় অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের একাডেমিক বিষয়ে অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছেন। বাকি ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পিছিয়ে আছেন তাদের একাডেমিক কার্যক্রমে। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীর বিষয়টি বাদ দিলে বাকিদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও নেটওয়ার্কের দুর্বলাবস্থার কারণে। তাহলে বাকি ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীদের দায়ভার নেবে কে? অনলাইন ক্লাস কি তাহলে ধনী ও নেটওয়ার্কের আওতার শিক্ষার্থীদের জন্য?

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, যদি এক শতাংশ শিক্ষার্থীও ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তাদের বাদ দিয়ে ক্লাস নেওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। শতভাগ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুবিধা নিশ্চিত করে আমাদের ক্লাসে যাওয়া উচিত। সে লক্ষ্যে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ক্লাসে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ইউজিসির। আমি আশাবাদী, ইউজিসির তরফ থেকে যে লোন দেওয়া হয়েছে, সে লোন মার্জনা করে বিনামূল্যে এ সুবিধা দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন কেনার জন্য ইউজিসি যাতে আর্থিক অনুদানের বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়, সেজন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
 
উপচার্যের অবর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান সামগ্রিক বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনায় ইউজিসির তত্ত্বাবধানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা মহামারীর মধ্যেও গত মার্চ মাস থেকে সব বিভাগে অনলাইন ক্লাস চলছে। অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকরা অত্যন্ত আন্তরিক। যে জরিপের কথা উপস্থাপিত হয়েছে, সে সংখ্যক শিক্ষার্থী ডাটা/ডিভাইসের অভাবে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকার কথা নয়। এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি সব শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়া নিশ্চিত করতে ডাটা দিয়েছে। সে কারণে সব শিক্ষার্থীই অলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।