ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ফেনীতে অ্যাসাইনমেন্ট বিড়ম্বনায় শিক্ষার্থীরা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০
ফেনীতে অ্যাসাইনমেন্ট বিড়ম্বনায় শিক্ষার্থীরা

ফেনী: করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ প্রায় আট মাস বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায়  সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণলায়।

অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া, মূল্যায়নের ব্যাপারে নির্দিষ্ট নীতিমালাও নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু ফেনীতে মানা হচ্ছে না সেই নীতিমালা। ফলে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
 
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসাইনমেন্টের জন্য নেওয়া হচ্ছে টাকা, কোনো প্রতিষ্ঠানে আগের বকেয়া পরিশোধ ছাড়া জমা নেওয়া হচ্ছে না, আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত উপকরণ ছাড়া শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট করতে পারছে না।

এ নিয়ে হয়রানি বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন জেলার শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের অ্যাসানইনমেন্টর ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্ল্যাহও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানান।  

জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্তানের অ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন মানতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের।

সদর উপজেলার শাহীন একাডেমি স্কুলের ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, করোনাকালে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকলেও এখন পুরো সময়ের বেতন জমা দেওয়া ছাড়া অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিচ্ছে না। এছাড়াও অ্যাসাইনমেন্ট প্রস্তুত করা নিয়েও শুরু হয়েছে বিভিন্ন জটিলতা।  

কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির জন্য আলাদা কাগজ ( এ৪ সাইজ) এবং ফি নির্ধারণ করে দিচ্ছে বলে জানান অভিভাবকরা। তারা জানান, বাজারে অ্যাসাইনমেন্টের জন্য বিভিন্ন শিট পাওয়া যাচ্ছে। সেটিতে অ্যাসাইনমেন্ট করলে সুন্দর দেখায়, তাই তারা কিনছেন।

ফেনী সিটি গার্লস স্কুলের ফি আদায় সংক্রান্ত রশিদে দেখা যায়, অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ ৩শ টাকা ও বকেয়া বেতন আদায় করা হচ্ছে। আলাদা ফি আদায়ের কথা স্বীকার করে অধ্যক্ষ এম মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য স্কুল থেকে কাগজ, প্রশ্ন দিচ্ছি। যা অনেকে করছে না।  

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা দেওয়ার আগেই আমরা তা নেওয়া শুরু করেছিলাম।

ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজকঞ্জুরা স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মুস্তাফিজ বলেন, আমার বোনের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির জন্য স্কুলের নির্দেশনা মতে ৬০ টাকা দিয়ে ২০ পাতা (এ৪ সাইজ) কাগজ নিয়েছি। কিন্তু পুরো বছরের ২ হাজার ৪শ টাকা বেতন দিতে না পারায় স্কুলের শিক্ষকরা অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেননি।

পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর তৌহিদ একাডেমির ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিবাবক বলেন, স্কুলে পুরো বছরের বেতন জমা না দিলে অ্যাসাইনমেন্ট এবং পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করবে না বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করে শহরের ট্রাংক রোডের এক ফটোকপি সেন্টারের মালিক জানান, গত কয়দিন ধরে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিবাবকরা অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির জন্য ‘এ ফোর’ সাইজের ছাপানো কভার কাগজ নিয়ে যাচ্ছে। এগুলো ৫শ কপির একটি বক্স আমরা ১৮৫ টাকায় কিনলেও চাহিদা বাড়ায় এখন অনেক দোকানি দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত লাভে বিক্রি করছে।

অ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের করণীয় উল্লেখ করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্ল্যাহ বলেন, শিক্ষার্থীকে প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে ৬ সপ্তাহে মোট ১৮টি অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হবে। নির্ধারিত বিষয়ের প্রস্তাবিত অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া, মূল্যায়ন, পরীক্ষকের মন্তব্যসহ শিক্ষার্থীকে দেখানো এবং পরে প্রতিষ্ঠানে সেটি সংরক্ষণ করার কাজ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে।  

অ্যাসাইনমেন্ট প্রস্তুত ও জমাদানের নিয়মাবলী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাদা কাগজে লিখে অ্যাসাইনমেন্ট (কাজ) জমা দেবে। অ্যাসাইনমেন্টের আওতায় ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন, সৃজনশীল প্রশ্ন, প্রতিবেদন প্রণয়ন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত আছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ ফি আদায় ও আলাদা পেপার নির্ধারণ সম্পর্কে বলেন, অ্যাসাইনমেন্টের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আলাদা করে ফি নিতে পারবে না। এটি বাজারের যেকোনো ধরনের সাদা কাগজে প্রস্তুত করে জমা দিলেই হবে।

প্রতিষ্ঠানের বেতন আদায় করার ব্যাপারে তিনি বলেন, আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন আদায় সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারির কথা রয়েছে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা এলে আমরা তদন্ত করে অতিরিক্ত ফি বা বেতন আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০ 
এসএইচডি/এএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।