ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবি গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন প্রকল্পে নয়-ছয়

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২০
রাবি গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন প্রকল্পে নয়-ছয়

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের আধুনিকায়নে বিশ্বব্যাংক ‘হেকেপ’ (হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট) বাস্তবায়িত হয়। গ্রন্থাগারের অবকাঠামোগত ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেয় হেকেপ। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে গ্রন্থাগারের তৎকালীন প্রশাসক অধ্যাপক ড. সফিকুন্নবী সামাদীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

প্রকল্পের টাকায় ট্রেনিংয়ের নামে বিদেশ ভ্রমণও হয়েছে। প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্তে এ প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের বিষয়টি উঠে এসেছে।

 

হেকেপ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তিন কোটি ২৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। মূলত বিশ্বব্যাংক ‘হেকেপ’ প্রকল্পের মাধ্যমে এ অর্থ সহায়তা দিয়েছিল। এ সময় গ্রন্থাগারে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিকুন্নবী সামাদী।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় প্রকল্প পরিচালকের কক্ষটি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী গ্রন্থাগারে প্রশাসকের কক্ষটি সংস্কার হওয়ার কথা। কিন্তু বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে তিনি গ্রন্থাগারের বাইরে বাংলা বিভাগের শহীদুল্লাহ কলা ভবনের ব্যক্তিগত চেম্বার (২২১নং কক্ষ) শুধু সংস্কার ও সাজসজ্জাই নয়, নিজের ব্যবহারের জন্য প্রিন্টার, স্ক্যানার ও দামি টি-টেবিলও কিনেছেন।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ড. সামাদী দায়িত্ব পালনকালে গ্রন্থাগার কমিটির ছয়টি, গ্রন্থাগার উপ-কমিটির ১০টি এবং গ্রন্থাগারের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বিষয়ে ৫২টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোনো সভায় প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রেজুলেশনভুক্ত করা হয়নি। এসব সভার যথার্থতা, উপস্থিতি এবং ব্যয় নিয়েও নানা অসঙ্গতি ওঠে।

প্রশাসনের তদন্তে উঠে এসেছে, ড. সামাদী গ্রন্থাগার উন্নয়নের নাম করে নিজের বিলাসিতার পরিচয় দিয়েছেন নানাভাবে। যার প্রমাণ মিলছে প্রকল্পের অর্থে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দুটি কলম কেনার মধ্য দিয়ে। পাঁচ হাজার এবং ছয় হাজার করে মোট ১১ হাজার টাকা দিয়ে দুটি কলম কিনেছেন তিনি। কিন্তু এই কলম কোন ব্র্যান্ডের, বাজার মূল্য কত বা এর কার্যকারিতা কী- তা খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি।

অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান নিয়েও। দরপত্রে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে ড. সামাদীর কক্ষেই। নিজে ব্যবহারের জন্য প্রকল্পের এক লাখ ৪৫ হাজার টাকায় একটি ল্যাপটপ এবং ২২ হাজার টাকায় মাইক্রোসফট অফিস লাইসেন্স ক্রয় করেন, যা এখতিয়ার বহির্ভূত।

হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট।  ছবি: বাংলানিউজপ্রকল্পের টাকায় ট্রেনিংয়ের নামে ১২ লাখ টাকা খরচ করে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেছেন চারজন। আরএফআইডি ট্যাগ কেনার নাম করে ২০ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, যার কোনো হিসাব মিলছে না। ডাটা এন্টি কাজের জন্য ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় করা হয় মাত্র ২১ লাখ টাকা। অথচ এটিই ছিল প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ খাত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, প্রকল্পের আওতায় গ্রন্থাগারের এক লাখ ৮০ হাজার বই ডাটা এন্ট্রির কাজ পায় ‘স্যাপ্রোন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। দরপত্র অনুযায়ী কাজের বেশিরভাগ শর্তপূরণ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।  

এছাড়া গ্রন্থাগারের বইয়ের কল নম্বর অনলাইনে (কোহা সফটওয়্যারের মাধ্যমে) ডাটা এন্ট্রি করতে ৪৫ লাখ টাকার টেন্ডার হয়। দরপত্র অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠান ডাটা এন্ট্রি করবে পুনরায় যাচাই করে আপলোডও তাদের দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে প্রশাসক গ্রন্থাগারের কর্মকর্তাদের দিয়ে রুটিন কাজের বাইরে তা করিয়ে নিয়েছেন।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার দাপট দেখিয়ে গ্রন্থাগারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে একক সিদ্ধান্তে করেছেন প্রশাসক। নিজের পক্ষের লোকজন দিয়ে প্রকল্পের সব কাজ করিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি। বরং তাকেই দ্বিতীয় মেয়াদে প্রশাসক নিয়োগ করেছিলেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে শিক্ষক ড. সামাদীর ব্যক্তিগত ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরিচয় জানিয়ে এসএমএস পাঠানের পর তাকে পুনরায় কল করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহান বলেন, প্রকল্পটির অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় আগের প্রশাসনের সময়ে হয়েছে। তবে প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত করছে। তদন্ত অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।