ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবি ভর্তি জালিয়াতে অভিযুক্ত ছাত্রী এখন সিআর!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
ঢাবি ভর্তি জালিয়াতে অভিযুক্ত ছাত্রী এখন সিআর! মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সুবাহ লিয়ানা তালুকদারের নম্বর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে মেধা তালিকায় সুযোগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে একাধিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ভর্তি জালিয়াতির অভিযুক্ত এক ছাত্রী আইন বিভাগের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ (সিআর) হয়েছেন।

২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি জলিয়াতি নিয়ে বাংলানিউজ প্রথম ‘৯ লাখ টাকায় ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটে মেধাক্রম ৫ম!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। নিউজের সূত্র ধরে মেধা তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজনকে পুনরায় পরীক্ষা নেয় কর্তৃপক্ষ।

সেখানে অনেকে ফেল করেন, আবার অনেকে ন্যূনতম নম্বর পান।  

ভর্তি পরীক্ষার নম্বর আর পুনরায় পরীক্ষার নম্বরে ব্যবধান ছিল অনেক বেশি। এ কারণে মেধা তালিকায় বেশ কয়েকজনকে ভর্তির সুযোগ দেয়নি প্রশাসন। পাশাপাশি শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয় কয়েকজনকে।

বাংলানিউজের সংবাদ আমলে নিয়ে মেধা তালিকায় ৫ম হওয়া তাজরিন ভাইভা দিতে এলে পুনরায় পরীক্ষা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় তাজরিন ভাইভা বোর্ডে থাকা শিক্ষকদের বলেন, মেধা তালিকার সামনের সারিতে থাকা এই রকম কয়েকজনের পরীক্ষা নিলে তারাও ফেল করবে।
ঢাবিতে সুবাহর ভর্তি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনাতার কথার সূত্র ধরে দেখা যায়, ‘ঘ’ ইউনিটে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মেধা তালিকায় তৃতীয় হওয়া অয়ন কুমারকে শাহবাগ থানায় দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে ২য় হওয়া সুবাহ লিয়ানা তালুকদারের বিরুদ্ধেও। অভিযুক্ত এই ছাত্রী বর্তমানে আইন বিভাগের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ (সিআর) হয়েছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই ছাত্রী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল পরীক্ষায় অংশ নিলেও কৃতকার্য হননি। ঢাবির ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’, ‘ডি, ‘এইচ’ ইউনিট এবং রুয়েট ও মেডিকেলের পরীক্ষায় ফেল করেন তিনি।

ঢাবির ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় সুবাহ পান পদার্থ বিজ্ঞানে ১৪, রসায়নে ১৬, গণিতে ৩.৫০ ও জীববিজ্ঞানে ১২। সর্বমোট ৪৫ পেয়ে অকৃতকার্য হন সুবাহ। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পান মাত্র ২৪ নম্বর।

অন্যদিকে ‘ঘ’ ইউনিটে তিনি বাংলায় পান ২৭ দশমিক ৩০, ইংরেজিতে ২২ দশমিক ৫০, সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ অংশে ২৩ দশমিক ১০ ও আন্তর্জাতিক অংশে ২৫ দশমিক ৮০ পেয়ে সর্বমোট নম্বর দাড়ায় ৯৮ দশমিক ৭০। এতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি মেধা তালিকায় ২য় স্থান অর্জন করেন।
ঢাবিতে সুবাহর ভর্তি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনাভিকারুন নিসা থেকে এইচএসসি পাস করা এই শিক্ষার্থীর বাসা ও ৫ম হওয়া তাজরিনের বাসা বগুড়ায়। ২১ নভেম্বর ২০১৬ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সুবাহ লিয়ানা স্ট্যাটাসে দেন- university of dhaka, department of law, definition of satisfaction।  

স্ট্যাটাসে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের এক শিক্ষার্থী কমেন্ট করেছেন ‘আপা কোয়েশ্চান কত টাকা দিয়ে নিয়েছিলেন। ’ এই রকম একই কমেন্ট তাজরিন আহম্মেদ খান মেধার ক্ষেত্রেও এসেছে।
 
একই ক্যাটাগরির নম্বর:
মেধা তালিকায় সামনের সারিতে থাকা সবাই বাংলা ও ইংরেজিতে প্রায়ই একই নম্বর পেয়েছেন। শুধু এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ এর ব্যবধানের কারণে তাদের অবস্থান ভিন্ন হয়েছে।

মেধা তালিকায় ৯ লাখ টাকা দিয়ে (বিজ্ঞান বিভাগ) পঞ্চম হওয়া তাজরিন খান মেধা বাংলায় পেয়েছের ২৭ নম্বর। ঠিক একই নম্বর পেয়েছিলেন (বাণিজ্য বিভাগ) থেকে তৃতীয় হওয়া অয়ন কুমার দাস। জালিয়াতির অভিযোগ ওঠা ২য় হওয়া সুবাহ লিয়ানা তালুকদারও বাংলায় পেয়েছেন ২৭ নম্বর। বিজ্ঞান বিভাগের আরেক অভিযুক্ত ছাত্রও বাংলায় পেয়েছেন ২৭। ইংরেজিতেও এরা সবাই ২২-২৪ নম্বর করে পেয়েছেন।
 
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুবাহ লিয়ানা তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয়। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ১ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে দু’একজন জালিয়াতি করলে এটা হিসেবের মধ্যে পড়ে না। পরীক্ষা চলাকালে অনেককে আটক করা হয়। আর ভর্তির পরে জালিয়াতির প্রমাণ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, অভিযুক্তদের বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহ চলছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য আমরা মিলিয়ে নিচ্ছি। সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

এদিকে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানেও সুবাহ লিয়ানার নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে ওই ছাত্রীর ভর্তির বাতিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন প্রশাসনের কাছে।

যেভাবে ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নফাঁস
২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ওই পরীক্ষায় বিভিন্নভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়। প্রেস কর্মচারীর মাধ্যমে, হোয়াটস আপ ও বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভর্তি জালিয়াতি করেন। পরীক্ষার দিন জালিয়াতির দায়ে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ৯ জনকে আটক করা হয়। পরে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সাপেক্ষে ৭ জনকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল এলাকা থেকে আটক করা হয় আবদুল্লাহ আল মুহসী ও আজিমুল আবিদ খান রিফাতকে। তাদের মোবাইলে হোয়াটসাপের মাধ্যমে প্রশ্ন এবং উত্তর আসার বিষয়টি ধরিয়ে দেন ছাত্রলীগের শহীদুল্লাহ হলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিউর রহমান রকি।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে শিক্ষার্থী মুহসী কার্জনের একপাশে মোবাইল ফোনে কী জানি দেখছিলো। পরে সে ফোন তথ্য কেন্দ্রে জমা দিয়ে পরীক্ষা দিতে চলে যায়। তখন ফোন চেক করে দেখা যায় ফোনে প্রশ্ন ও উত্তর রয়েছে। পরীক্ষার আগে সেই উত্তরগুলো একটু মিলিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে। পরীক্ষা শেষে তার এক বন্ধু আসে যার ফোনেও একই এসএমএস আছে। তখন আমরা তাদেরকে প্রক্টরের হাতে তুলে দিই।

পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আহমেদ বাওয়ানি কলেজ কেন্দ্রের আবু সাঈদকে আটক করা হয়। আটক বাকি শিক্ষার্থীরা হলেন, উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের লিমন, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের তৌহিদুল ইসলাম সবুজ ও ইনামুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
এসকেবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।