ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

বয়সের ফাঁদে ময়মনসিংহে ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭
বয়সের ফাঁদে ময়মনসিংহে ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা শিশু শিক্ষার্থী। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ: বয়সের ফেরে এবার ময়মনসিংহের নামি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছেন শিশুরা।

১০ এর অধিক বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ হলেও শুধুমাত্র ১১ বছর বয়সসীমার বাধ্যবাধকতার কারণে তারা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনই করতে পারছে না।

এ ঘটনায় হতাশায় ভুগছেন প্রায় হাজার খানেক ছোট্ট সোনামণি।

শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন তাদের অভিভাবকরাও।

বয়সের জটিলতা নিরসনে তারা হন্যে হয়ে ছুটছেন সরকারি নামি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দ্বারে।

ছোট্ট শিশুদের এমন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের বিষয়টি মাথায় রেখেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দানে বয়সের বাধ্যবাধকতা শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহে চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় হাজার খানেক শিক্ষার্থী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন।

তাদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরীর নামকরা ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি।

স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, এসব বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্চু বেশিরভাগ শিশুদের বয়স ১১+ হতে হবে। নয়তো ভর্তির আবেদনের সুযোগ বঞ্চিত হবেন তারা।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমানের কাছে দেয়া এক আবেদনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের পক্ষে শামসুন নাহার হেনা, পারভীন বেগম, সুলতানা শবনম দীপু ও মো. মুক্তার উদ্দিন উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় শিশুদের নির্ধারিত কোন বয়স সীমার বাধ্যবাধকতা না থাকায় পরীক্ষার্থীরা পিইসি পরীক্ষায় সফলভাবে অংশগ্রহণ করে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও সম্প্রতি জারিকৃত ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি ল্যাবরেটরি হাই স্কুলগুলোতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু বেশিরভাগ শিশুদের বয়স ১১+ না হওয়ায় ভর্তির আবেদনের সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

কোমলমতি শিশুদের মনে গভীর ব্যথা ও হতাশার উদ্রেক হয়েছে। বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকার শিশুদের ঝরে পড়া রোধ ও শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু ময়মনসিংহে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে বয়সের বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সরকারের এ সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক। অভিভাবক হিসেবে আমরা মর্মাহত ও হতাশাগ্রস্ত। ’

বাংলানিউজকে একাধিক অভিভাবক বলেন, সমাপনীতে যেসব শিক্ষার্থীরা যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে তাদেরকেই ভর্তিতে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তাদের মেধা থাকলেও শুধুমাত্র বয়সের জটিলতার কারণে তারা সরকারি বিদ্যালয়ে আবেদনের সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তির নীতিমালা প্রণয়নে উল্লেখ রয়েছে, জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ক্লাস ওয়ানে শিক্ষার্থীর বয়স হবে ৬ প্লাস।

সেই অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে গেলে ক্লাস সিক্সে হবে ১১ প্লাস বয়স। অভিভাবকরাই নিজেদের ইচ্ছামাফিক বয়স কমান, বাড়ান। এ কারণেই এ জটিলতা তৈরি হয়েছে।

তবুও তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলবো। ’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপ-পরিচালক এ.এস.এম.আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি স্কুলের ভর্তি কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক।

তিনি ডাকলে আমরা মতামত দিতে পারি। এসব শিক্ষার্থীদের বয়সের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন। ’

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে বয়সের জটিলতা নিরসনে অভিভাবকদের আবেদনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

বাংলাদেশ সময় ১০০১ ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৭
এমএএএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।