ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

'স্মৃতি তুমি সততই সুখের'

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৭
'স্মৃতি তুমি সততই সুখের' শামসুন্নাহার হলের প্রাক্তন ছাত্রীদের পুনর্মিলনী, ছবি: রানা

ঢাকা: শীতের সোনালী রোদ পড়েছে শামসুন্নাহার হল প্রাঙ্গণে। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে অবন্তি। দূর থেকে নাম ধরে কে যেন ডাক দেয়, পেছন ফিরে তাকাতেই হাসিতে ঝলমল করে ওঠে অবন্তির মুখ।

আর নাম ধরে ডাকলো যে- সেও পুরোনো আলিঙ্গন পেতে দুহাত প্রসারিত করে উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কাছাকাছি হতেই একে অপরকে জড়িয়ে ভুলে যায় প্রিয় বন্ধুর দীর্ঘদিনের না পাওয়া আলিঙ্গন সুখ।

শুক্রবার (০৬ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শামসুন্নাহার হলের প্রাক্তন ছাত্রীদের পুনর্মিলন অনুষ্ঠানে এ রকম অসংখ্য দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। চোখের কোনে আনন্দ অশ্রু নিয়ে দীর্ঘদিনের হল সঙ্গী ও পুরোনো বন্ধুকে পেয়ে সবাই মেতেছেন হাসি-ঠাট্টা, স্মৃতিচারণ আর আড্ডায়।

দীর্ঘদিন পর একে অপরকে দেখে, কি রে তুই বেশ মোটা হয়ে গেছিস, ও মা! এ কি তোর দুইটা বাচ্চা! আর বলিস না কি যে ভালো লাগছে। দেখ, কতোদিন পর তোকে দেখলাম, তুই একটা ফোন দিস না-পুরো হল প্রাঙ্গণ জুড়ে ছিলো বন্ধুদের দেখা পেয়ে এমন আবেগ-অনুভুতি সমৃদ্ধ বাক্যের ছড়াছড়ি।

পুরোনো বন্ধুদের পেয়ে ষাট পেরিয়েও যেন তারুণ্য ফিরে পেয়েছেন উম্মে বাতুল মাহমুদা খাতুন। '৭০-৭৩ ব্যাচের শামসুন্নাহার হলের অ্যাটাচ ছিলেন এই শিক্ষার্থী।

তারই ব্যাচের অপর শিক্ষার্থী উম্মুল ওয়ারা খাতুনকে জড়িয়ে ধরে বলেন, এ হলে আমাদের বিরাট স্মৃতি। কত দুরন্তপনা যে করেছি, আজও চোখের সামনে ভাসে। এই স্মৃতিগুলো আজীবনের জমানো সুখ। অনেক বান্ধবী ছিলো যারা কেউ প্রবাসী, দু’একজন জান্নাতবাসীও হয়েছেন।
সামসুন্নাহার হলের প্রাক্তন ছাত্রীদের পুনর্মিলনী

মিলন মেলার এই প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল, পুরোনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা গল্প গুজবের সঙ্গে সেলফি-ছবি তুলে মুহুর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখছেন। একটি কোম্পানির দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীকী ট্রেনের  মুখ বাড়িয়ে ছবি তোলার হিড়িক দেখা গেল। দীর্ঘদিনের অসাক্ষাতের পর দেখা হওয়ায় কেউ কেউ নিজের ছেলে-মেয়েদের সাফল্যের বর্ণনা দিচ্ছেন বন্ধুকে।

১৯৯৯-২০০০ ব্যাচের কামরুন নাহার দাঁড়িয়ে রয়েছেন তার বান্ধবীদের সঙ্গে। মৃদুলা নামে তারই দুই বছরের জুনিয়র দৌঁড়ে এসে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরে।

মৃদুলা বাংলানিউজকে বলেন, হলে আমার প্রিয় মুখ ছিলো কামরুন নাহার আপা। অনেক দিন তার দেখা পাইনি,আজকে খুব ভালো লাগছে।

পাশ থেকে মৃদুলার আপা কামরুন বলে উঠে 'ও আগের মতো চঞ্চলই আছে। আমাদের হলে জুনিয়রা সিনিয়রদের সম্মান করতো, সিনিয়ররাও তাদের আদরে করতো।

সালমা আখিঁ সব বন্ধুদের এক সঙ্গে পেয়ে কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না। অনুভুতি জানতে চাইলে বলে, 'এতো ভালো লাগছে, এতো ভালো লাগছে যে ভাষা নেই বলার। '

অনেকেই প্রিয় বন্ধু, রুমমেট ও বড় আপুদের মুখগুলো খুঁজে বেড়াচ্ছেন। দেখা হলে ফিরে যাবেন পুরোনো সেই রঙ্গিণ দিনগুলোতে। কিন্তু ব্যস্ততা ও যোগাযোগের ঘাটতির কারণে এ মিলন মেলায় কেউ কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না তার প্রিয়মুখগুলোকে।

শামসুন্নাহার হলে প্রাক্তন ছাত্রীদের এই প্রাণাচ্ছ্বল মিলন মেলা দেখে ‘স্মৃতি তুমি সততই সুখের’ বাক্যটি অন্য ক্ষেত্রে পুরোপুরি সত্য না মানলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের  হল জীবনের স্মৃতির  ক্ষেত্রে বাক্যটি পুরোপুরি সত্য বলে মানাই যায়..

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৭
এমসি/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।