ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

খুলনায় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৪
খুলনায় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

খুলনা: নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি খুলনাতে আওয়ামী দোসর ট্রাস্টি এবং দোষী প্রশাসনের বহিষ্কার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহানগরীর মজিদ সরণিতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ও সামনের সড়কে এ বিক্ষোভ করেন তারা।

 

এ সময় শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি তুলে করেন। দাবিগুলো হলো-
১. ট্রাস্টি তৌহিদুল ইসলাম আজাদ দুবার খুলনার মেয়র নির্বাচন (২০১৮ ও ২০২৩) এ ভার্সিটিতে মিটিং করে ভার্সিটির শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খালেক তালুকদারের পক্ষে প্রচারণায় বাধ্য করেছেন। ভার্সিটি ফান্ডের টাকা এ প্রচারণা খাতে ব্যয় করে ভিন্ন পন্থায় ভার্সিটি থেকে প্রচুর টাকা উত্তোলন করেছেন। এর সঙ্গে সার্বক্ষণিক প্রভাব বিস্তার করেছেন ট্রাস্টি সৈয়দ মো. ওবায়দুল্লাহ রিপন ও ট্রাস্টি পবিত্র কুমার সরকার। অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা খরচ করার শাস্তি চাই।

২. ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে যেসব শিক্ষক-ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সমর্থন জানিয়েছিল, তাদের স্ক্রিনশট রেখে দিত পবিত্র কুমার সরকার ও সৈয়দ মো. ওবায়দুল্লাহ রিপন। এদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে মেয়র অফিসে (খুলনা সিটি করপোরেশন) জমা দিত তৌহিদুল ইসলাম আজাদ। গণঅভ্যুত্থান সফল না হলে এসব শিক্ষকরা চাকরিচ্যুত পর্যন্ত হতে পারতো। অবিলম্বে এ অপরাধে তিনজনের বহিষ্কার চাই।

৩. ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন মৃত্যু মুখে, তখন নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফেসবুক পেজ ২-৮ আগস্ট, ২০২৪ অ্যাডমিশন ফেয়ারের বিজ্ঞাপন দেয়। উক্ত তিনজন ট্রাস্টি ভিসি ও ট্রেজারারকে ব্যবহার করে আন্দোলনের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করতে এ কাজ করায়। শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে তাদের বিজ্ঞাপন বড়! ফ্যাসিস্ট প্রশাসনকে এর জবাব দিতে হবে।

৪. ২০১৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার অধিক এ ট্রাস্টি বোর্ড আত্মসাৎ করেছে। শুরু থেকে এর সঠিক হিসাব চাই।

৫. প্রতিষ্ঠার ১২ বছরে পার্মানেন্ট ক্যাম্পাস না করে একের পর এক কথা শুনিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছে। উপরন্তু তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, ওবায়দুল্লাহ রিপন প্রায় ১ কোটি টাকার কাজ বিনা টেন্ডারে করিয়েছে ভিসি ও ট্রেজারারকে ব্যবহার করে। সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

৬. প্রতিষ্ঠার ১২ বছরে সমাবর্তন না করে বর্তমান ফান্ড থেকে টাকা আত্মসাতের পথ খুঁজছে। এ টাকা আত্মসাৎ বন্ধ করতে পরিচালনা পরিষদে সুষ্ঠু তদন্তের আগ পর্যন্ত ছাত্র-শিক্ষক প্রতিনিধি চাই।

৭. বর্তমান ট্রাস্টিদের ভেতর কেউ চেয়ারম্যান পদে থাকতে পারবে না, নতুন গ্রহণযোগ্য কাউকে দিতে হবে। অন্যথায় জুলাই বিপ্লবের শিক্ষার্থীরা হুমকির ভেতর থাকবে এবং বর্তমান দোষী ট্রাস্টিদের বাঁচাতে চাইবে।

শিক্ষার্থীরা এসব লোকের ব্যক্তিগত অপরাধের আমলনামাও তুলে ধরেন।

ক. পবিত্র কুমার সরকার অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক ফেসবুক পোস্ট, ২০১৯ সালে ছাত্রলীগ নেতার মাধ্যমে আইন বিভাগের সমস্যা সমাধানের কথা বলে ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎসহ অন্যান্য অভিযোগ।

খ. ওবায়দুল্লাহ রিপনের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘জেনারেল কম্পিউটার’ থেকে ইলেকট্রনিক এবং কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ভার্সিটিকে কিনতে বাধ্য করা, খালেক তালুকদারের সঙ্গে ভার্সিটিতে এসে বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করাসহ প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ।

গ. তৌহিদুল ইসলাম আজাদ তার প্রতিষ্ঠান ‘আজাদ ইঞ্জিনিয়ারিং’ খালেক তালুকদারের সঙ্গে অবৈধভাবে ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ (বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত), দুদকের মামলা, পার্মানেন্ট ক্যাম্পাস এর ৫ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল, নিজের মেয়ে (নুজহাত নৌরি ইসলাম) কে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী প্রভাষক হিসেবে যোগদান করানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ থাকে যে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তড়িঘড়ি করে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে সিরাজুল হক চৌধুরীকে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করে বিএনপিকে ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের ৪ তলায় বসে তৌহিদুল ইসলাম আজাদ ও ওবায়দুল্লাহ রিপন ঘোষণা দেন প্রয়োজনে বিএনপিকে টাকা দিয়ে হলেও ম্যানেজ করবো। এজন্য শিক্ষার্থীরা আরও চিন্তিত বিএনপিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এরা পার পেয়ে যাবে এবং পরে টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাবে। এছাড়া সাবেক রেজিস্ট্রার এবং অর্থ ও হিসাব শাখার প্রধান ও ৫ আগস্ট এর পর পদত্যাগ করে, যা সন্দেহজনক। টাকা আত্মসাৎ করার জন্য আগের দুজনকে বিদায় করে নতুন হিসাব শাখার প্রধান ও রেজিস্ট্রারকে বসানো হতে পারে বলে শিক্ষার্থীরা মনে করে।

বিক্ষোভে বক্তব্য দেন নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রিফাত, রাফিদ, রাব্বি, ফরহাদ হোসেন নাহিদ, তাসিক প্রমুখ।

এ বিষয়ে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সেখ মো. এনায়েতুল বাবর বাংলানিউজকে বলেন, ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার নেই আমার। তারপরও বলছি সংস্কারের অংশ হিসেবে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেককে পরিবর্তন করা হয়েছে। ৩০ জন ছাত্র আন্দোলনে নেমেছে এটা কতটা যৌক্তিক তা আমার জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৪
এমআরএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।