ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘পাঠ্যপুস্তক সংশোধন নয় বাতিল করতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
‘পাঠ্যপুস্তক সংশোধন নয় বাতিল করতে হবে’

ঢাকা: বিতর্কিত ও অবৈজ্ঞানিক মানব সৃষ্টিতত্ত্ব অনুপ্রবেশ, ট্রান্সজেন্ডার, পৌত্তলিক ও ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির আধিপত্য, ইসলামকে ভিনদেশি সাব্যস্ত করা এবং প্লেগারিজমের মতো নিন্দনীয় কাজের আশ্রয় নিয়ে মাধ্যমিক স্তরের যে পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা হয়েছে তা সংশোধন নয়, বাতিলের দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

রোববার (২৯ জানয়ারি) রাজধানীর পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি দাবি তুলে ধরেন।

সেই সঙ্গে পাঠ্যপুস্তক বাতিলের দাবিতে দুই দিনের করর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, পাঠ্যসূচির অধিকাংশ অধ্যায়ে আদিম সভ্যতা, হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের শাসন, ইতিহাস এবং নগরায়ণের কথা বলা হয়েছে। আর শেষের অধ্যায়ে অল্প পরিসরে সুলতানি আমলের ইতিহাস আলোচিত হয়েছে। বাংলায় প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসনকে আগেকার মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য, সেন, পাল আমল এবং পরের ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ বেদকে এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। পাল ও সেন আমলকে ইতিহাসের প্রাচীন যুগ বলে মুসলিম শাসনকে বহিরাগত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সুলতানি শাসনব্যাবস্থার বৈশিষ্ট্য হিসেবে জবরদখল করে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা, একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক সুবিধাজনক অবস্থান, বর্ণভেদ চালু করা, নারীদের শোচনীয় অবস্থা ইত্যাদি বিষয় চিত্রায়ন করা হয়েছে ।

ইসলামি আন্দোলনের আমির বলেন, স্বদেশি আন্দোলন এবং ক্ষুদিরাম-সূর্যসেনদের সশস্ত্র আন্দোলনের কথা এসেছে। বাংলার ইসলামী আন্দোলনের একমাত্র উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে নবম-দশম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইতে। সেখানেও বৈষম্যটা স্পষ্ট। ফকির বিদ্রোহ, তিতুমীরের আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন এক পৃষ্ঠা করেও আলোচনায় স্থান পায়নি।  

ক্ষমতাসীন সরকারে সমালোচনা করে রেজাউল করিম বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি- এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাঠ্যপুস্তকের বিকৃতি ঘটানো ও  ইতিহাস থেকে মুসলমানদেরকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলার প্রচলিত ইতিহাসের বিরুদ্ধে যেয়ে পাঠ্যপুস্তকে প্রতিবেশী ব্রাক্ষ্মণ্যবাদীদের সুরে সুর মিলিয়ে মুসলিম শাসনকে দখলদারিত্ব ও ঔপনিবেশিক শাসন বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে, এই বই সংশোধন না, বাতিল করে সত্যনিষ্ঠ শিক্ষাবিদ ও উলামাদের সমন্বয়ে নতুনভাবে লিখতে হবে। সেই সঙ্গে এই বই রচনায় জড়িতদের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে কিনা তা খুঁজে বের এবং তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সুইডেন ও ডেনমার্কে কোরআন অবমাননা প্রসঙ্গ টেনে  লিখিত বক্তব্যে রেজাউল করিম বলেন, পশ্চিমাদের আচরণে এটা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত যে, ইউরোপ আজও মধ্যযুগীয় সংকীর্ণ চিন্তা থেকে বের হতে পারেনি। সম্প্রতি সুইডেনে ও ডেনমার্কে যেভাবে ঘোষণা দিয়ে পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার প্রতি আঘাত করা হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

এ সময় দাবি আদায়ে ইসলামী আন্দোলন দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাবে বলে জানানো হয়। এর অংশ হিসেবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরে বিক্ষভ মিছিল ও ১০ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সুশিল সমাজের সঙ্গে গোল টেবিল বৈঠকের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিথত ছিলেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাও. সৈয়দ মুহাম্মাদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাও. ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মাও. গাজী আতাউর রহমান, মুহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাও. ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম প্রমুখ

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
এসআর/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।