ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রযুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে কার্প জাতীয় মাছ চাষে নতুন সম্ভাবনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
প্রযুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে কার্প জাতীয় মাছ চাষে নতুন সম্ভাবনা

বরিশাল: নতুন প্রযুক্তির গবেষণায় দক্ষিণাঞ্চলে মাছ চাষে নতুন এক সফলতা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন গবেষকরা।  

বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলাতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম-ফেজ ও (এনএটিপি ২) এর পিবিআরজি প্রকল্পের আওতায় কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প প্রভৃতি কার্প জাতীয় মাছের গবেষণা কার্যক্রমে এ সফলতা ও সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।



পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ও শাখা প্রধান মুহাম্মাদ ইমাদুল হক প্রিন্স এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানান, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় তিন বছর ধরে চলা নতুন এই কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তি উপ-প্রকল্পের প্রধান গবেষক হলেন পবিপ্রবির একুয়াকালচার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এবং সহকারী প্রধান গবেষক হিসেবে আছেন পবিপ্রবির ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল আলম।  

তিনি জানান, বাজারে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, কমন কার্প প্রভৃতি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই জাতীয় মাছ দ্রুত বড় হয়, রোগাক্রান্ত কম হয়, খাদ্য ও জায়গার জন্য একে অপরের প্রতিযোগী নয়, পানির সব স্তর থেকে প্রাকৃতিক খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হয় তাই পুকুরের পরিবেশ ভালো থাকে এবং সর্বোপরি এসব মাছ খেতে সুস্বাদু।  

দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্যচাষিরা সাধারণত ছোট আকারের এই জাতীয় মাছ পুকুরে মজুদ করেন। এই ছোট আকারের মাছগুলোর বাজারজাতের উপযোগী হতে সাধারণত ২-৩ বছর সময় লাগে। এছাড়া ছোট আকারের মাছ পুকুরে মজুদ করলে মাছের মৃত্যুহারও অধিক হয়। কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তিতে সাধারণত বড় আকারের যেমন ৪-৬ শত গ্রাম ওজনের কার্প জাতীয় মাছ পুকুরে মজুদ করা হয়। এতে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য প্রযোগ করে ৭-৮ মাসেই মাছ বাজারজাত করা হয়। যা দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্যচাষিদের কাছে ছিল অকল্পনীয়। কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তিতে মৎস্যচাষিরা মাছ চাষ করে অল্প সময়ে অধিক পরিমান মাছ উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া চাষিদের মধ্যে মাছ চাষের ব্যাপক আগ্রহও সৃষ্টি হয়েছে।

কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তিতে গবেষকরা ২টি গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। প্রথম গবেষণাতে পানির স্তরভেদে কার্প জাতীয় মাছের সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন। দ্বিতীয় গবেষণাতে কার্প জাতীয় মাছের মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণ করেছেন। তৃতীয় গবেষণাতে কার্প জাতীয় মাছের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সম্পূরক খাদ্য নির্ধারণে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া পানির গুণাগুণ পরীক্ষা, পাংটনের প্রাচুর্যতা, মাছে ও পানিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি, মাছ ও পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি নিয়ে গবেষকরা কাজ করছেন।

কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তির পাশাপাশি উপ-প্রকল্প এলাকায় গ্রামীণ নারীদেরকে সম্পৃক্ত করে ছোট আকারের জলাশয়ে শিং, মাগুর, গুলশা মাছ নিয়েও গবেষকগণ গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তি উপ-প্রকল্পের মাধ্যমে সুফলভোগীদের মধ্যে মাছ চাষের সব উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মৎস্যচাষিরা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং রাজশাহী অঞ্চলে কার্প ফ্যাটেনিং কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।  

উপ-প্রকল্পের সুফলভোগী মো. মিলন খলিফা জানান, কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের এই অঞ্চলের মৎস্যচাষিদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।

আরেক সুফলভোগী শামীম মাতব্বর জানান, কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষে আমার নিজের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে এবং আশেপাশের মানুষের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।  

উপ-প্রকল্পের সহকারী প্রধান গবেষক ড. মো. আরিফুল আলম জানান, কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তিতে মাছ চাষের ফলে কোস্টাল অঞ্চল তথা পুরো দক্ষিণাঞ্চলে কার্প জাতীয় মাছ চাষে বিপ্লব ঘটে যাবে এবং মৎস্যচাষিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে বলে আমি বিশ্বাস করি।  

এ ব্যাপারে উপ-প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক জানান কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তির প্রধান বাধা স্থানীয়ভাবে বড় আকারের কার্প জাতীয় মাছের অপ্রতুলতা-স্থানীয় নার্সারিগুলোতে বড় আকারের পোনা উৎপাদনসহ মৎস্যচাষিরা চাপের পোনা কিছু সময় লালন করে মজুদ পুকুরে মজুদ করলে দক্ষিণাঞ্চলে কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বহুলাংশে বাড়বে।

পবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, পবিপ্রবির মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের গবেষকদের সফল গবেষণায় কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মাছ চাষিদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে এবং তাদের মধ্যে কার্প জাতীয় মাছ চাষে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।

উল্লেখ্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও এর ২০১৮ সালের ৯ জুলাই প্রতিবেদনে দেখা যায় চাষের ও প্রাকৃতিক উৎসের মাছ মিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৮৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।