ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শিগগিরই নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ আমদানি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
শিগগিরই নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ আমদানি  স্বর্ণের বার।

ঢাকা: শিগগিরই নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ আমদানি শুরু হবে। এ লক্ষ্যে প্রচারণা বাড়াতে স্বর্ণ মেলার আয়োজন করা হবে। যাতে ব্যবসায়ীরা সরকারকে ভরিপ্রতি এক হাজার টাকা দিয়ে অবৈধ স্বর্ণ বৈধ করার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণ নিলামের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির সভায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

সূত্রে আরও জানা গেছে, স্বর্ণ আমদানির জন্য যাচাই কর্তৃপক্ষ গঠন, বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বর্ণের তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলা, আমদানির পর বাজারে স্বর্ণ কতোটুকু মজুদ আছে, কতোটা বিক্রি হয়েছে, সেসব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সংরক্ষণ করার তাগিদ দেওয়া হয়।  

এছাড়া আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারককে ভরিপ্রতি শুল্ক দিতে হবে দুই হাজার টাকা।

ভ্যাটের হার ধরা হয়েছে পাঁচ শতাংশ। ব্যাগেজ রুলের আওতায় শুল্ক আগের মতোই রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশে বছরে স্বর্ণের চাহিদা ৩০ থেকে ৪০ টন। অথচ দেশে বৈধপথে স্বর্ণ একেবারেই আমদানি হয় না। ফলে অবৈধ পথে আনা স্বর্ণ দিয়েই এই চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে।  

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শিগগিরই নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ আমদানি শুরু হবে। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে স্বর্ণ নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। নীতমালা হওয়ার পরও ব্যাপক প্রচারণা না থাকায় ব্যবসায়ীরা এখনও এ বিষয়ে জানে না। ফলে স্বর্ণ আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। এজন্য স্বর্ণ মেলার আয়োজন করা হবে।  

এছাড়া স্বর্ণ আমদানি করতে প্রথমে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে স্বর্ণ যাচাই কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বর্ণের তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে কয়েক মণ স্বর্ণ থাকলেও এর অধিকাংশের বিষয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। এ কারণে গত ১০ বছর ধরে স্বর্ণের নিলাম হয় না। মামলার নিষ্পত্তি হলে সেগুলো সরকারের সম্পদ হয়। যেগুলোর মামলা শেষ হয়েছে, সেগুলো নিয়ে শিগগিরই নিলাম ডাকা হতে পারে। তবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে আসা স্বর্ণতেই বেশি লাভ করতে পারে হয়তো সে কারণেই তাদের বৈধপথে আমদানিতে আগ্রহ দেখায় না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি দীলিপ কুমার আগারোওয়াল বাংলানিউজকে বলেন, স্বর্ণ নীতিমালা নিয়ে এখনও অনেক ব্যবসায়ী ভালোভাবে জানে না। এজন্য শিগগিরই আমরা দেশে একটি স্বর্ণ মেলা করবো। সেখানে সরকারকে ট্যাক্স দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। সরকার স্বর্ণখাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ভ্যাট-ট্যাক্স নিলেও এতোদিন ধরে স্বর্ণের বৈধ উৎস ছিলো না। এখন আমরা বৈধ স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছি। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণ নিলামেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।  

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণের মধ্যে মাত্র ১০ কেজি স্বর্ণ নিলামে তোলার সুযোগ আছে।

তবে গত ১০ বছর ধরে নিলাম না হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্বর্ণের স্তুপ জমে গেছে। সর্বশেষ নিলাম হয় ২০০৮ সালের ২৩ জুলাই। যেখানে ২১ কেজি ৮২২ গ্রাম স্বর্ণ বিক্রি করা হয়। ধরা পড়া স্বর্ণের বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক মানসম্মত হওয়ায় তা বাইরে বিক্রির প্রয়োজন হয়নি।

ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে দুই হাজার কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। আর স্বাধীনতার পর থেকে অবৈধ উপায়ে আসা স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কেজি বা ১২৫ মণেরও বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬০ মণ স্বর্ণের মালিকের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।  

এছাড়া মামলায় মালিকানা ঝুলে আছে আরও প্রায় ৩০ মণের। তবে ১৫ কেজি স্বর্ণ আদালতের নির্দেশে শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে দাবিদারদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর কিছু বিক্রি করা হয়েছে নিলামের মাধ্যমে।

স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮ উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা অথবা সরকার বিবেচিত অন্য যেকোনো কর্তৃপক্ষের আওতায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর (ল্যাব টেস্ট বা ‘ফায়ার টেস্ট’ ও ‘হলমার্ক টেস্ট’ সুবিধাসহ) স্বর্ণের মান যাচাই ও বিশুদ্ধ স্বর্ণের পরিমাণ নিশ্চিতকরণে পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা/আপগ্রেডেশন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এসব মান যাচাই কেন্দ্রের বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) অথবা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হতে অ্যাক্রেডিটেশন গ্রহণ করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
জিসিজি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।