ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অনিয়ম করলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদেরও ছাড় নেই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
অনিয়ম করলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদেরও ছাড় নেই

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সতর্ক করে বলেছেন, অনিয়ম ধরা পড়লে জনগণের আমানত ঝুঁকিমুক্ত রাখার স্বার্থে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে মোটেও পিছপা হবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে গুরুতর অনিয়মে জড়িত কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে গর্ভনর এসব কথা বলেন।

এ সময় ব্যাংকটির ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও অনান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

ড. আতিউর রহমান বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসনের সার্বিক উন্নয়ন ঘটলেও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুতর অনিয়মের তথ্য উদঘাটন করেছে। যা আর্থিক খাতের সুশাসনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একটি প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান নিজ নামে, স্ত্রী, কন্যা ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মনোনীত ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছেন। যার বর্তমান স্থিতি সাতশ’ কোটি টাকার বেশি।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কিছু ঋণ হিসাবকে সিএল বিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত না করা, বিরূপ শ্রেণীকৃত ঋণকে অশ্রেণীকৃত হিসেবে দেখানো, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অনেক ঋণ হিসাবকে সিআইবিতে রিপোর্ট  না করা, বিভিন্ন গ্রাহকের অগোচরে তাদের ঋণ হিসাবের বিপরীতে শ্যাডো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পরিচালকদের অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলনের মতো গুরুতর অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছে।

গর্ভনর বলেন, প্রভাব খাটানোর স্বার্থে ওই ব্যক্তি তার মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট লোকজনের সমন্বয়ে পর্ষদ গঠনের বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে। এসব অনিয়ম উদ্ঘাটিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে সুশাসন আনয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই আমরা অভিযুক্ত পরিচালকদের অপসারণ করেছি। তাদের পর্ষদসহ আরেকটি পর্ষদে আমরা দু’জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে এসব অনিয়মের বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সতর্ক করেন গভর্নর।

তিনি বলেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। এ ধরনের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে আপনাদেরই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতা গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনায় বসবো। তবে এ ধরনের অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতার দায়ভার সম্পূর্ণরূপে আপনাদের।

তিনি জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক মানসম্মত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো ও সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য সব ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ, নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন্স প্রণয়নের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। অচিরেই তা জারি করা হবে। যা পরিচালন ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস করবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রেরিত ঋণ/লিজ শ্রেণীকরণ সংক্রান্ত বিবরণীর অসঙ্গতি চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে একটি ‘স্বয়ংক্রিয় শ্রেণীকরণ মনিটরিং সিস্টেম’ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান গভর্নর।

তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণ/লিজ হিসাবের শ্রেণীকরণ সম্পর্কে কোনো অসঙ্গতিপূর্ণ বা ভুল তথ্য দিলে তা সফটওয়ারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরূপণ করা যাবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন নিয়ে আতিউর রহমান বলেন, বরাবরের মতো আমি বন্ড মার্কেট উন্নয়নে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখতে চাই। এতে আপনাদের তহবিল সংকট দূর হওয়ার পাশাপাশি দেশের বন্ড মার্কেটও শক্তিশালী হবে। এজন্য এ বিষয়ে সবাইকে আরও উৎসাহী এবং উদ্যোগী হতে হবে।

সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় শক্তিশালী বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলেও জানান গভর্নর।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
এসই/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।