ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কমছে ছোলা চাষ, বাড়ছে আমদানি

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৫
কমছে ছোলা চাষ, বাড়ছে আমদানি

ঢাকা: দেশে আশঙ্কাজনক হারে কমছে ছোলার চাষ ও উৎপাদন। এক যুগের ব্যবধানে অর্ধেকে নেমেছে ছোলা চাষের জমির পরিমাণ।

উৎপাদন কমেছে তিন হাজার মেট্রিক টন। আর গত দুই বছরের ব্যবধানে আমদানি বেড়েছে ১০ গুণের বেশি।

এ অবস্থায় গবেষকরা মনে করছেন, আমদানি নির্ভর হতে যাওয়া এ পণ্যটির চাষ ও উৎপাদনে এখনই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। না হলে এক সময় পুরোপুরি আমদানি নির্ভর হয়ে যেতে হবে। এতে প্রভাব পড়বে কৃষি অর্থনীতিতে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটউটের (বারি) ডাল গবেষণা কেন্দ্র সূত্র জানায়, ২০০০-০১ অর্থবছরে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ১২ হাজার মেট্রিক টন ছোলা উৎপাদন হয়। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আট হাজার হেক্টর জমিতে ছোলা উৎপাদন হয় ৯ হাজার মেট্রিক টন।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আমদানি ও রপ্তানি উইং সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩ হাজার ৪শ মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দুই লাখ আট হাজার ৩শ ৫০ মেট্রিক টন ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক লাখ ৭২ হাজার ২শ ২০ মেট্রিক টন ছোলা আমদানি হয়।

দুই বছরের ব্যবধানে ছোলার এতোবেশি আমদানি প্রসঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি উইংয়ের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন জানান, এখন ছোলার চাহিদা ও ব্যবহার বেড়ে গেছে। এছাড়া অনেক সময় একবছর বেশি আমদানি হলে পরের বছর কম আমদানি হয়।

বারি’র ডাল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও গবেষক মো. শোয়েব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছরই ছোলা চাষ ও উৎপাদন কমে যাচ্ছে। সময়সাপেক্ষ ও বিভিন্ন রোগের আক্রমণের কারণে ছোলা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষক।

তিনি জানান, কৃষকরা এখন হিসাব করেন জমি থেকে কত দ্রুত ফসল ঘরে তুলতে পারেন। এ কারণে চাষিরা স্বল্পমেয়াদী ফসল, বিশেষ করে সবজি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। যদি স্বল্পমেয়াদী জাতের ছোলা চাষ করা যেতো তাহলে ভালো হতো। কিন্তু স্বল্পমেয়াদী ছোলা চাষে ফলন কম হয়।

এছাড়া কিছু রোগ ও ছোলার ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ বেশি দেখা দেয়। এখান থেকেও কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। সব মিলিয়ে কমে যাচ্ছে ছোলা চাষ।
বারি সূত্র জানায়, চার মাস মেয়াদী ছোলা চাষ শুরু হবে আর কয়েকদিন পর থেকেই। প্রায় নয় জাতের ছোলা চাষাবাদ হয় আমাদের দেশে। রাজশাহী, যশোর, নাটোর, ঈশ্বরদীসহ কয়েকটি অঞ্চলে ছোলা চাষ বেশি হয়।

গবেষকরা মনে করছেন, দেশে ছোলা চাষ বাড়াতে নতুন অঞ্চল বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে কাজ করতে হবে স্বল্পমেয়াদী জাত নিয়েও। এছাড়া যেসব এলাকায় পতিত জমি আছে সেসব এলাকায় ছোলা চাষ নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। যেমন কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় এক থেকে দুই ফসলি জমি বেশি রয়েছে। এসব জমিতে ছোলা চাষ করা যায়।

প্রায় ১৫ বছর ধরে ছোলা চাষ করছেন রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার রিশিকুল ইউনিয়নের চাষি মাসুদুল হক।

তিনি বলেন, এক সময় আমাদের বরেন্দ্র অঞ্চলে অনেক বেশি ছোলার চাষ হতো। কিন্তু এখন গভীর নলকূপের সুবিধা পাওয়ায় অনেকেই ধান চাষের দিকে ঝুঁকছে। ফলে কমছে ছোলা চাষ।

এই চাষি আরও জানান, ছোলা চাষ করতে গিয়ে অনেক রোগ বালাইয়েরও আক্রমণে পড়তে হচ্ছে আমাদের। গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। আর খুব বেশি লাভজনকও হচ্ছেও না। খরচের তুলনায় দামও খুব বেশি বাড়েনি। তবে রোজার মৌসুমে আবার ছোলার দাম বেশি পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫ ২০১৫
একে/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।