ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অন্তর্বর্তী সরকারের তৃতীয় একনেক 

রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে

ঢাকা: বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত এবং উৎপাদনশীল কাজের সুযোগ তৈরি করার লক্ষ্যে ‘ইমার্জেন্সি  মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট (২য় সংশোধিত)’ এর জন্য বাজেট বৃদ্ধি এবং সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের, বিশেষ করে তরুণ ও যুবকদের উৎপাদনশীল কাজের সুযোগ প্রদান করা এবং শরণার্থী শিবিরের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় পরিষেবার মান উন্নত করার মাধ্যমে অস্থিতিশীল  কার্যকলাপে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনবে।

 

উদ্যোগটি সামাজিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদনের কথা রয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯০ শতাংশ অগ্রগতির পর বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গা প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থায়নে সম্মত হয়েছে।

প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সাল থেকে ১ দশমিক ২ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, প্রধানত কক্সবাজার অঞ্চলে।  

তিনি বলেন, টেকনাফ ও উখিয়া এলাকার ক্যাম্পগুলো এই দুর্বল জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল হয়ে উঠেছে, যাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ ও বেকার। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান এবং মৌলিক পরিষেবার মান উন্নয়ন সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে।

বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে।  প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করা, ক্যাম্পে বিদ্যমান সেবার উন্নতি করা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পরিবেশ সচেতনতা সম্পর্কিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা।  

পরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে মাদকের ব্যবহার, পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য সমস্যা, শিক্ষা এবং পরিবেশগত টেকসই বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা।

প্রকল্পটির প্রাথমিক বাজেট ছিল ৩৩৭ কোটি টাকা, যা বিভিন্ন ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৬৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে, বিশ্বব্যাংক সম্প্রসারিত কার্যক্রমে সহায়তা করার জন্য অতিরিক্ত অনুদান অনুমোদন করেছে।  

একনেক সভায়, প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনের জন্য অতিরিক্ত ৯৯.৮৪ কোটি টাকা তহবিল প্রস্তাব করা হবে, যার ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় ৬৯৯ কোটি টাকা হবে। এই সমন্বয়ের লক্ষ্য হল সার্বিক কার্যক্রমকে সমর্থন করা এবং উদ্বাস্তু শিবিরের মধ্যে নতুন সামাজিক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালু করা।

দ্বিতীয় সংশোধনের অংশ হিসাবে, প্রকল্পটি নতুন উপাদান যুক্ত করবে, যার মধ্যে শ্রম-নিবিড় নির্মাণ কার্যক্রম যেমন বৃক্ষ রোপণ, ফুটপাথ নির্মাণ, নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সেতু এবং ক্যাম্পের মধ্যে বসবাসের অবস্থার উন্নতির জন্য পুনর্বাসনের কাজগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।  

উপরন্তু, মাদক প্রতিরোধ, পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা এবং পরিবেশ সচেতনতার মতো বিভিন্ন বিষয়ে উদ্বাস্তুদের শিক্ষিত করার জন্য নতুন সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করা হবে।

এর আগে, প্রকল্পটি ২০১৯ সালে ৩৩৪ কোটি টাকা অনুদান, ২০২০ সালে ৫৯৫ কোটি টাকা এবং ২০২২ সালে ১৪.৫২ কোটি টাকা সহ বেশ কয়েকটি ধাপে অতিরিক্ত তহবিল পেয়েছিল। ২০২৪ সালের এপ্রিলে, চলমান পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য আরও ১৬৭.৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।  

প্রকল্পের বাজেট বাড়ানো হলেও কিছু ব্যয় সমন্বয় করা হয়েছে। যেমন ৩১টি সেক্টরে ২৮.৪৫ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হয়েছে এবং ১২টি অন্যান্য সেক্টরের জন্য অপারেশনাল খরচ ১২৮.৪৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে, সম্পদের সর্বোত্তম বরাদ্দ নিশ্চিত করে।

প্রকল্পের লক্ষ্য শুধু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ ও স্থিতিশীল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিই নয়, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও সামাজিক সংহতিতে অবদান রাখা।  প্রকল্পের অধীনে প্রদত্ত পরিষেবাগুলি শুধু উদ্বাস্তুদেরই নয়, স্থানীয় জনগণকেও উপকৃত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আজকের সভায় এই প্রকল্প ছাড়াও আরও পাঁচটি প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণের প্রথম সংশোধিত প্রকল্প, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অফ ইউনিভার্সিটিস ইন বাংলাদেশ টু প্রমোট ইয়োথ এন্টারপ্রেনারশিপ (ক্রিয়েটিভ বাংলাদেশ) প্রকল্প,  রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বহিরাগত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক (১ম সংশোধিত), মংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নি:সৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪) এবং   স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (SSF) ফায়ারিং রেঞ্জের আধুনিকীকরণ এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদর দফতরের নির্মাণ সহ দুটি অতিরিক্ত প্রকল্পও সময়সীমা বাড়ানোর জন্য উপস্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
এসএমএকে/এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।