ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত বন্ধ করাসহ ৭ দাবি ক্যাবের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত বন্ধ করাসহ ৭ দাবি ক্যাবের

ঢাকা: ফুডগ্রেডবিহীন কেমিক্যাল ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বন্ধসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ ও ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামের ভোজ্যতেল ব্যবহারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ক্যাব আয়োজিত মানববন্ধনে সংগঠনটির নেতারা এসব দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ভোজ্যতেল সংরক্ষণ বা সরবরাহের ক্ষেত্রে নীল রঙের কেমিক্যালের ড্রাম ব্যবহার করা হয়। এতে ভোজ্যতেল বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে। ড্রামে বাজারজাত করা ৫৯ শতাংশ ভোজ্যতেলই ভিটামিন এ সমৃদ্ধ নয় এবং ৩৪ শতাংশ ভোজ্যতেলে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন এ নেই। কিন্তু ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ এবং ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, সব ভোজ্যতেলে নির্ধারিত মাত্রায় ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক। সমৃদ্ধকরণ প্রতীক ব্যতীত এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো উপকরণ দিয়ে তৈরি প্যাকেট বা পাত্রে ভোজ্যতেল বাজারজাত করা যাবে না।

বক্তারা আরও বলেন, ভিটামিন এ এর অভাবে অপরিণত শিশুর জন্ম, মহিলাদের গর্ভধারণে সমস্যা, শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, জন্মগত ত্রুটি, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, রাতকানা, চোখ শুষ্ক হয়ে অন্ধত্বের সৃষ্টি হয়, শিশুমৃত্যু বৃদ্ধি এবং চামড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়া সহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে হৃদরোগ, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। ড্রামের অস্বাস্থ্যকর এসব তেল গ্রহণের কারণে এ পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত বন্ধকরণ শতভাগ নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও সরকার এটি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, ভোজ্যতেল নন ফুডগ্রেডেড ড্রামে বাজারজাত বন্ধকরণ আইনের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই যে, সরকার ২০২২ সালের ১৬ মার্চের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর নন ফুডগ্রেডেড ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত ও পরিবহন বন্ধ করার জন্য নির্দেশ জারি করে। কিন্তু কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং অন্যান্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সময়সীমা আরও বাড়ানো হয়। সয়াবিন তেল বাজারজাতকরণের সময়সীমা ২০২২ সালের ৩১ জুলাই  এবং খোলা পাম অয়েল বাজারজাতকরণের সময়সীমা ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ সময়সীমার পর অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ ও ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত বন্ধকরণ শতভাগ নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও সরকার এটি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ক্যাবের দাবিগুলো হলো 

- সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই) মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে মার্কেট মনিটরিং করা হয়। কিন্তু কোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে না।  

মার্কেট মনিটরিংয়ে কোনো ধরনের জরিমানা করা হয় না। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আইন অমান্যকারী ব্যবসায়ীদের সরকারি নিষেধাজ্ঞা মান্য করতে বাধ্য করতে হবে।

- আইন প্রতিপালনে ব্যবসায়ীদের কেমিক্যাল ড্রামের পরিবর্তে ফুডগ্রেডেড বোতল অথবা প্যাকে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণে বাধ্য করতে হবে।

- রিফাইনারি কোম্পানিগুলো যেসব ড্রামে তেল সরবরাহ করে, সেগুলোতে লেবেল এবং উৎস শনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত করতে হবে।

- সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী রিফাইনারি ও অসাধু ব্যাবসায়ীদের কঠোর আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের খাদ্য ব্যবসার লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

- অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ ও ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত বন্ধকরণে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

- ড্রামের অস্বাস্থ্যকর তেলের স্বাস্থ্যক্ষতি সম্পর্কে নীতিনির্ধারক, উৎপাদক, সরবরাহকারী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

- সরকার, জনস্বাস্থ্যবিদ, সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে ভোক্তাদের খোলা ভোজ্যতেলের পরিবর্তে বোতল বা প্যাকেটজাত ভোজ্যতেল নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, সদস্য মোহা. শওকত আলী খান, আবুল কালাম আজাদ, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
এসসি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।