ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

থিম্পুতে বাংলাদেশ-ভুটান যুগান্তকারী চুক্তি সই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
থিম্পুতে বাংলাদেশ-ভুটান যুগান্তকারী চুক্তি সই

ঢাকা: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। এই যুগান্তকারী চুক্তির ফলে উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজতর হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বুধবার (২২ মার্চ) ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে ‘প্রটোকল অব দ্য এগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক ইন ট্রানজিট বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ভুটান' এই শিরোনামে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা জানান।  

বাণিজ্যমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ চুক্তির আওতায় ভুটান ট্রানজিট সুবিধা পেতে যাচ্ছে। যার ফলে দেশটি আমদানি-রপ্তানির প্রয়োজনে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারবে৷ এমন কি তারা জল, স্থল, রেলপথ, বিমান পরিষেবাসহ সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগও পাবে। ট্রানজিট সুবিধার আওতায় তৃতীয় দেশে রপ্তানির জন্য ভুটানের গাড়িগুলো পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও নৌপথ ব্যবহার করে বিমান ও সমুদ্রবন্দরে যাবে। এরপর এসব পণ্য বিশ্বের নানা দেশে পাঠানো হবে। বাংলাদেশের ওই একই অবকাঠামো ব্যবহার করে আবার আমদানি করা পণ্য ভুটানে পরিবহন হবে।  

এক্ষেত্রে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে ভুটান। এছাড়া আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগ আছে। এসব বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে এমন সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ খসড়া প্রটোকলে যুক্ত রয়েছে।

যে পাঁচ রুট ব্যবহার করে বাণিজ্য করবে ভুটান গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে তৃতীয় দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য ভুটানকে বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে ট্রানজিট চুক্তির খসড়া ও প্রটোকল চূড়ান্ত করা হয়। এরপর সেটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন নেওয়া হয়।  

খসড়া প্রটোকল অনুযায়ী সড়কপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বাছাইকৃত রুটগুলো হচ্ছে 
১. (ভুটান থেকে পণ্য নিয়ে) সামসি গোমটুফুয়েন্টসলিং  গেলেপু- বুড়িমারি- রংপুর- বগুড়া- হাটিকুমরুল- ঢাকা- চট্টগ্রাম। ২. ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা-রংপুর-বগুড়া-হাটিকুমরুল-ঢাকা-চট্টগ্রাম। ৩. গেলেপু-তামাবিল-সিলেট-ঢাকা৷ ৪. গেলেপু-সামদ্রুপ-জংখর-তামাবিল-সিলেট-সরাইল-ঢাকা-বেনাপোল এবং (৫) সামসিগোমটুফুয়েন্টসলিংগেলেপু-নাকুগাঁও নালিতাবাড়ী-ময়মনসিং-ঢাকা।

সড়কপথে এই পাঁচটি রুট ছাড়াও রেলপথে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির জন্য আরও দুটি রেলরুট যুক্ত করা হয়েছে খসড়া প্রটোকলে। এই রুটগুলো হচ্ছে  
১. সামসি গোমটুফুয়েন্টসলিংগেলেপু-চিলাহাটি-সৈয়দপুর-পার্বতীপুর-সান্তাহার-ঈশ্বরদী-ভেড়ামারা-যশোর-নওয়াপাড়া-খুলনা-মোংলা। ২. চট্টগ্রাম-লাকসাম-কুমিল্লা- আখাউড়া-ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া-লালমনিরহাট-বুড়িমারি-সামসিগোমটু ফুয়েন্টসলিংগেলেপু।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযোগ রেখে এই রুটগুলো প্রটোকলে যুক্ত করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে ভুটান যাতে কলকাতার সমুদ্র ও বিমানবন্দর ব্যবহার করেও পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারে প্রটোকলে সেই সুবিধাও রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিন নম্বর রুটে ভুটানের গেলেপু থেকে সিলেটের তামাবিল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে ঢাকা হয়ে পদ্মা সেতু ব্যবহার করে বেনাপোল দিয়ে কলকাতায় যেতে পারবে ভুটানের পণ্য। একই পথে আবার কলকাতা থেকেও আমদানিকৃত পণ্য ভুটানে পরিবহনের সুযোগ থাকছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে ভারত ট্রানজিট সুবিধায় বাংলাদেশের কিছু অবকাঠামো ব্যবহার করছে। দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসেবে ভুটান সেই সুবিধা পেতে যাচ্ছে।

এদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দুই দিনের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। দুই দিনব্যাপী বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ ২০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের এবং ভুটানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব দাশো কর্মা শেরিং ৯ সদস্যের ভুটানি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বাস্তবায়ন জোরদার করার লক্ষ্যে ট্রানজিট চুক্তি ও প্রটোকল চূড়ান্ত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া তৃতীয় দেশের মাধ্যমে যোগাযোগ সহজ করার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের উদ্যোগ নেওয়া, পর্যটন শিল্পের বিকাশে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও ভুটান স্ট্যান্ডার্ড ব্যুরো (বিএসবি) এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (ডিএই) এবং ভুটান কৃষি ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একই সঙ্গে বাণিজ্যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং সোনারহাট স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভুটান থেকে ভুটানি পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি পাথর আমদানি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে ভুটানের সচিব আশা প্রকাশ করেন যে আগামী দিনে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিকূলে। অর্থাৎ ভুটান থেকে আমরা বেশি আমদানি করি। বিপরীতে রপ্তানি করি কম। এই চুক্তির ফলে রপ্তানি বাড়বে। তবে দুদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ভুটানের সঙ্গে সম্প্রতি পিটিএ চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সঙ্গে করা এটাই বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ।

গত ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পিটিএ স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশ প্রথম এবং একমাত্র অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ করেছে ভুটানের সঙ্গে। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে আর ভুটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। এবারের বৈঠকে চুক্তির আওতায় আরও কিছু পণ্য অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। দেশ দুটির বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয় ২০১২ সালে। ভুটান থেকে বাংলাদেশে সবজি ও ফলমূল, খনিজদ্রব্য, নির্মাণসামগ্রী, বোল্ডার পাথর, চুনাপাথর, কয়লা, পাল্প, রাসায়নিক আমদানি করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভুটানে তৈরি পোশাক, আসবাব, খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ, প্লাস্টিক ও বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি হয়।


বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩,
জিসিজি/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।