ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

‘পুরুলিয়ায় অস্ত্র ফেলেছিল কেন্দ্রীয় সরকার’

অস্ত্রবর্ষণ মামলায় কিমের স্বীকারোক্তি, তৃণমূল-কংগ্রেস জোট অস্বস্তিতে

রক্তিম দাশ. সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১১
অস্ত্রবর্ষণ মামলায় কিমের স্বীকারোক্তি, তৃণমূল-কংগ্রেস জোট অস্বস্তিতে

কলকাতা: বাম সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতার মার্কিন কূটনীতিকের বার্তা উইলকিলিকসে ফাঁস হবার পর, আজ বৃহস্পতিবার ১৬ বছর আগে পুরুলিয়ায় ঝালদায় বিমান থেকে অস্ত্র বর্ষণ মামলায় চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন অন্যতম অভিযুক্ত কিম ডেভি। এর ফলে বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন আবার ব্যাকফুটে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট।



এদিনই ভারতের টিভি চ্যানেল ‘টাইমস নাউ’ কিম ডেভির বিস্ফোরক জবানি প্রকাশ করে।

সাক্ষাৎকারে ডেভি এই ঘটনায় তৎকালীন ভারত সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, ‘পুরো  ঘটনাটি ঘটনা হয়েছিল রাজ্যের ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে। উদ্দেশ্য ছিল, রাজ্যে বামসরকারের পতন ঘটিয়ে রাষ্ট্রপতি-সরকার কায়েম করা। পুরো অপারেশনটি তখনকার ভারতীয় শীর্ষনেতৃত্বের মস্তিষ্কপ্রসূত। ’

তিনি অভিযোগ করেছেন, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা আগে থেকেই তা জানত। সরকারের ছাড়পত্র ছাড়া তার ভারত থেকে পাকিস্তানে যাওয়া তো অসম্ভব। অথচ ঘটনার আগের দিন তিনি করাচি গিয়েছিলেন। তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যাতে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পুরো কাজটি শেষ করা হয়।

তিনি আরও বলেছেন, ঘটনার আগের ও পরের দিন তিনি এক ভারতীয় সাংসদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এই সাংসদ তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী দফতর তার পাশে আছে।

অস্ত্র বর্ষণের পরে মুম্বাই বিমানবন্দর থেকে তাকে পালাতে সাহায্য করে সরকারপক্ষই। এরপর তাকে মুম্বাই থেকে নয়াদিল্লিতে আনা হয়। নয়াদিল্লি থেকে এক সাংসদের গাড়ির পিছনের সিটে বসে তিনি নেপালে পালিয়ে যান।

ডেভির বক্তব্যকে পুরোপুরি সমর্থন করেছেন এই বিমানের যাত্রী ও আরেক অভিযুক্ত পিটার ব্লিক।
তিনি বলেছেন, এই সময় যাতে বিমানের গতিবিধি ধরা না পড়ে সেজন্য কলাইকু-ার ভারতীয় বিমানবাহিনীর র‌্যাডার রাতে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।

এদিকে, এই ঘটনায় তৃণমুলের কোন বক্তব্য না দিলেও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বক্তব্য উদ্দেশ্য প্রনোদিত।

রাজ্য কংগ্রেসের নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, বিধানসভা নির্বাচনের সময় রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। এতে মানুষ কান দেবে না বলে তার বিশ্বাস।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের সেই সময়কার অধিকর্তা বিজয় রাও এই  অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন।

অন্যদিকে এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিপিএমসহ সবক’টি বামদল।

সিপিএম নেত্ াসাবেক সাংসদ নীলৎপল বসু বলেছেন, রাজনৈতিক স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশিদের সাহায্যে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেবার চক্রান্ত করেছিল আজ তা প্রমান।

তিনি আরও বলেন, আমাদের হটানোর জন্য এরা দেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিচ্ছে। এর জবাব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। এর জন্য লোকসভা ও রাজ্যসভায় শুধু নয়, ভারত জুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলব।

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রয়াত নরসীমা রাও সরকারে আমলে একটি লাতভিয়ান বিমানে করে পুরুলিয়ার ঝালাদায় বিপুল পরিমাণে শতাধিক মর্টার, লক্ষাধিক গুলি, ১০০টি একে৪৭ রাইফেল, রকেট লঞ্চারসহ অস্ত্র ফেলা হয়।

এইখানে একটি উগ্র ধর্মীয় সংগঠন আনন্দমার্গের সদর দফতর আছে। সেই সময় সিপিএমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, নির্বাচনকে বানচাল করতে ও রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য এই অস্ত্র বর্ষণ করা হয়েছে। ওই সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন প্রয়াত জ্যোতি বসু।

ভারতীয় সময়: ১৬৪৫ঘন্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।