ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

‘পরিবর্তন’ বা ‘প্রত্যাবর্তন’ নিয়ে ভাবনা নেই কলকাতার চায়না টাউনের বাসিন্দাদের

রক্তিম দাশ. সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১১
‘পরিবর্তন’ বা ‘প্রত্যাবর্তন’ নিয়ে ভাবনা নেই কলকাতার চায়না টাউনের বাসিন্দাদের

কলকাতা: ‘পরিবর্তন’ বা ‘প্রত্যাবর্তন’ নিয়ে বিশেষ কোনো ভাবনা নেই কলকাতার চায়না টাউনের বাসিন্দাদের। ভোট এসেছে, তাই মার্কা দেখে কাউকে ভোট দেওয়াটাই যেন তাদের দায়িত্ব।

তারা শুধু চায় শান্তিতে বসবাস করতে।  

উপমহাদেশের মধ্যে একমাত্র কলকাতায় আছে চীনাপাড়া। যা সবার কাছে পরিচিত চায়নাটাউন নামে। প্রায় ২০০ বছর ধরে তারা এই শহরে বাস করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন ভোটার। কিন্তু এবারের ভোটে ‘পরিবর্তন’ বা ‘প্রত্যাবর্তন’ নিয়ে তারা বিশেষভাবে ভাবছেন না।  

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় কলকাতায় চীনারা প্রথম আসেন এদেশে ব্যবসা করতে। পরবর্তিতে চীন বিপ্লবের সময়ও কিছু মানুষ চলে এসেছিলেন ক্যান্টন বন্দর থেকে।

একসময় এদের জনসংখ্যা কলকাতায় হয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার। লন্ড্রি, দাঁতের ডাক্তার, জুতার দোকান ছিল কলকাতা শহরে তাদের মূল ব্যবসা। তৎকালীন বিট্রিশ ভারতে তাদের হাত দিয়েই প্রথম মানুষেটানা রিক্সার প্রচলন হয় শহরে।

সময় বদলেছে। ভারতের স্বাধীনতার পর এই চীনা নাগরিকদেরই একটা অংশ কলকাতা ছেড়ে চলে যান তাইওয়ান, মালয়শিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে। এখন যারা আছেন তারা মূলত ট্যানারি শিল্প ও রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

মধ্য কলকাতার ট্যারা অঞ্চলে ইএম বাইপাসের ধারে কলকাতা পুরসভার ৫৮ ও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে চায়ানা টাউনে এখন জনসংখ্যা মাত্র ২ হাজার। এটি আবার কসবাকেন্দ্রের অধীনে।

এদের মধ্যে মাত্র ৩৫০ ভোটার আছেন। এই পাড়ায় কেউ ভোট চাইতে যায় না।

এ পাড়ার নাগরিকরা লাল চীনের সমর্থক না হলেও এতদিন পর্যন্ত রাজ্যে বরাবারই বামফ্রন্টকে ভোট দিয়ে এসেছেন। কিন্তু শেষ পুরসভা নির্বাচনে তারা বামেদের বিরুেেদ্ধ ভোট দিয়েছেন, এই অঞ্চলে বুথভিত্তিক ফলে তা দেখা যায়।

ব্যবসায়ী সিপি চুং বলেন, ‘প্রার্থীদের না চিনলেও মার্কা দেখে ভোট দিই। ’

পরির্বতনে বিশ্বাসী নন তিনি। বলেন, পরিবর্তন হবে কী করে? এটা অনেকটা একই বোতলে নতুন লেবেলের মতো। আমরা যা ছিলাম তাই আছি। জন্ম থেকেই এই দেশে আছি। ভোট না দেওয়া অন্যায়। তাই কাউকে ভোট দেব।

এক রেস্তোরাঁমালিক মনিকা লিউ বলেন, আমরা চীনারা রাজ্যের রাজনীতি নিয়ে খুব উৎসাহিত নই। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।

চায়না টাউন থেকে বের হওয়া একমাত্র চীনা ভাষার পত্রিকাটিতেও দেখ গেল ভোটের কোনো সংবাদ নেই।

এপাড়ায় সমস্যা অনেক। পর্যাপ্ত সড়ক নেই, আছে পানীয় জলের সমস্যা। রাস্তায় আলো নেই, রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ডের আলোয় পথ চলতে হয় রাতে।

৫ বছর আগে রাজ্য সরকার চীন সরকারের সাহায্য নিয়ে এখানে পর্যটনকেন্দ্র বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। চীনা পাড়ায় প্রবেশের পথে তৈরি হয়েছে দুটি চায়না গেট।

ব্যাস এইটুকুই। এখানে এলে আপনার মনে হবে মধ্যযুগের চীন দেশের কোনো শহরে আপনি প্রবেশ করেছেন। কলকাতার খাদ্যরসিক বাঙালির কাছে চায়না টাউন গুরুত্বপূর্ণ হলেও রাজনীতিকদের কাছে তা আজও থেকে গেল ব্রাত্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।