ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

চাইলেও টেস্টে একদিনে উন্নতি করা সম্ভব নয়: হাবিবুল বাশার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
চাইলেও টেস্টে একদিনে উন্নতি করা সম্ভব নয়: হাবিবুল বাশার হাবিবুল বাশার সুমন

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের মূল্যায়ন করতে বলা হলে প্রাপ্তির খাতাটা প্রায় শূন্যই থাকবে। অথচ দেখতে দেখতে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার প্রায় ১৯ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট উন্নতি হয়নি বিন্দু মাত্র। হবেই বা কেমন করে! টেস্ট নিয়ে তো কোনো পরিককল্পনাই নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)।
 

নতুন টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তান যখন বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয় তখন আর বোঝার বাকি থাকেনা টাইগারদের টেস্টের অবস্থা কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আরও পরিস্কার করে বললে, শেষ ছয় টেস্টের পাঁচটিতেই টাইগাররা হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে।

ব্যাটিং-বোলিং কোনো বিভাগেই বাংলাদেশ টেস্ট খেলার মনসিকতা দেখাতে পারেনি।

বাংলাদেশের টেস্টের এই করুণ পরিণতি নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বিসিসির নির্বাচক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। টেস্টে ক্রিকেটে যিনি পরিচিত ছিলেন ‘মিস্টার ফিফটি’ নামে। তিনি জানিয়েছেন টেস্টে ভালো করতে হলে কোন পথে এগোতে হবে টাইগারদের।

বর্তমান ক্রিকেট যুগে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি এই তিন ফরম্যাটে খেলা হয়। খেলার ধরন বিবেচনা করলে তিন ফরম্যাটের ধরন তিন ধরনের। হাবিবুল বাশার সুমন মনে করেন, টেস্টের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা স্পেশাল কয়েকজন ক্রিকেটার প্রয়োজন। এটা এখনকার সময়ের অন্যতম দাবি বলা যেতে পারে।

সুমন বলেন, ‘আমাদের সো ফার টেস্ট ক্রিকেট যারা খেলছিলেন তারাই কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় ছিলেন। তখন টেস্ট এতো খেলতাম না। এখন অনেক অনেক টেস্ট খেলছি। আগে তিনটা ফরম্যাটে এতো খেলা হতো না। মূলত টেস্ট আর ওয়ানডে হতো। এখন টি-টোয়েন্টি যোগ হয়েছে। ’  

‘তিনটা ফরম্যাট কিন্তু শরীর অনেক কিছু নিয়ে নেয়। তিনটা ফরম্যাটে সবাই মিলে নিয়মিত খেলা খুবই কঠিন। যার জন্য বাকি দেশগুলো কিন্তু তাই করছে। সবাই তিনটা ফরম্যাটে খেলে না। অনেক কিছু ডিমান্ড করে, শারীরিক, মানসিক অনেক কিছু। যার জন্য আপনার টেস্টর জন্য আদর্শ কিছু প্লেয়ার থাকে, টি-টোয়েন্টির জন্য আলাদা কিছু প্লেয়ার থাকে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘অবশ্যই চার-পাঁচজন প্লেয়ার থাকবে যারা সব ফরম্যাট খেলবে। একই সময় এগারোজন ক্রিকেটার সব ফরম্যাট খেলবে এমনটা কঠিন হয়ে যায় খেলোয়াড়দের জন্য। যার জন্যই কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু স্পেশালিস্ট খেলোয়াড় বেশি দরকার হচ্ছে। এখন আমরা তিনটা ফরম্যাটে নিয়মিত খেলছি। ’

আসলে বাংলাদেশের মূল সমস্যাটা কোথায় সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। টেস্ট ক্রিকেটে এতোগুলো বছর পার করে আসলেও এখনো এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হয়। বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মনে করেন টেস্টে জিততে হলে বোলারদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। এছাড়া কখনোই টেস্ট জয় সম্ভব নয়।

সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘দেখুন, টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরা আপনাকে ড্র করাবে, বোলররা আপনাকে জেতাবে। আপনি যদি চার-পাঁচজন বোলার নিয়ে টেস্ট খেলান, এই চার-পাঁচজনের মধ্য থেকে কিন্তু কমপক্ষে দুইজন কিংবা তিনজন বোলারকে নিয়মিতভাবে পাঁচ উইকেট নেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। আপনি যে বোলারদের খেলাচ্ছেন তারা যেন পাঁচ উইকেট নিতে পারে। যথন এটা সম্ভব হবে তখনই আপনি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারেন, যেটা আমরা এখনো তৈরি করতে পারিনি। নিয়মিত পাঁচ উইকেট নেবে বা ম্যাচে দশ উইকেট নেবে এমন বোলার অমাদের নেই। দেশের মাটিতে পাচ্ছি কিন্তু বিদেশের মাটিতে এরকম বোলার দরকার যারা আমাদেরকে টেস্ট ম্যাচ জেতাতে পারবে। ’

হাবিবুল বাশার মনে করেন বোলারদের কাজটা কিন্তু সহজ করে দিতে হবে ব্যাটসম্যানদেরই। টেস্টে খেলার মানসিকতা গড়ে তুলতে না পারলে যতকিছুই হোকনা কেন, টেস্টে কখনোই উন্নতি করা সম্ভব নয়।

বিসিবি’র নির্বাচক বলেন, ‘আমাদের কিন্তু ব্যাটসম্যানও দরকার যারা বড় ইনিংস খেলতে পারবে, লম্বা ইনিংস খেলতে পারবে। একশ প্লাস, একশ পঞ্চাশ প্লাস ইনিংস নিয়মিতভাবে খেলতে পারবে। এই সংখ্যাটা আমাদের বাড়াতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আজ থেকে দশ বছর পর আমি দেখতে চাই, আমাদের দলে কমপক্ষে দুই-তিনজন বোলার থাকে যারা নিয়মিতভাবে পাঁচ উইকেট নেবে নিজের ওই জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করা, ফাস্ট বোলার চাই আরও বেশি। স্পিনার দিয়ে আপনি জিতবেন কিন্তু একই সময় যদি ফাস্ট বোলার ভালো থাকে সেটা স্পিনারদের সহায়তা করে। অবশ্যই ব্যাটসম্যান দরকার টপ-অর্ডার এবং মিডেল-অর্ডার, যেখানে যারা বড় রান করতে পারে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করতে পারে। যাদের সামর্থ আছে একদিন বা দেড়দিন ব্যাটিং করার এরকম ব্যাটম্যানের সংখ্যাটা বাড়াতে হবে। ’

তবে টেস্টে উন্নতি করতে হলে সময় প্রয়োজন। রাতারাতি টেস্ট ক্রিকেটে একদিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। টেস্টে ক্রিকেটে আগমনের ১৯ বছর কেটে গেলেও সেই সময়টাই এখনো বের করতে পারেনি বিসিবি। তবে আশার কথা হলো সেই সময়টা শুরু হয়েছে, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

বিসিবি নির্বাচক বলেন, ‘পরিবর্তন একদিনে হবে না এই বাস্তবতাও বুঝতে হবে। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় যে,পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে। ঢাকার বাইরে কিন্তু অনেকেই কম যায়। ঢাকা বাইরের উইকেট কিন্তু আগের চেয়ে অনেক উন্নত করা হয়েছে। এবারে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেট শিকারের তালিকায় ফাস্ট বোলারদের সংখ্যা বেশি স্পিনারদের চেয়ে। যেটা দেখা যায় না সচরাচর। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে উইকেট এখন স্পোর্টিং হচ্ছে। পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে, পুরোপুরি হতে সময় লাগবে। কারণ আমাদের কন্ডিশনটা একটু আলাদা। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে, পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে। সময় লাগতে পারে একবছর বা দুইবছর আরও লাগতে পারে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
আরএআর/ইউবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।