ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

টাইগারদের বহু অর্জন ও কিছু অপ্রাপ্তির বছর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮
টাইগারদের বহু অর্জন ও কিছু অপ্রাপ্তির বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টাইগারদের ওয়ানডে সিরিজ জয়-ছবি: বাংলানিউজ

বিদায়ী ২০১৮ সালে টাইগারদের অর্জনের খাতা বেশ সমৃদ্ধ। কিন্তু কিছু না পাওয়ার বেদনাও সইতে হয়েছে। দু’বার কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপার স্বাদ পাওয়ার একদম কাছে গিয়েও ভাগ্য সহায় হয়নি সাকিব-তামিমদের। তবে একাধিক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জেতার আনন্দ সেই না পাওয়ার বেদনা অনেকটাই লাঘব করেছে।

সবমিলিয়ে ২০১৮ সালটা কেমন কাটলো টাইগারদের চলুন একনজরে দেখে আসা যাক।

ওয়ানডে ক্রিকেটে এবার অন্যতম সফল দল বাংলাদেশ।

২০ ম্যাচের ১৩টিতেই জয় নিয়ে ভারত ও ইংল্যান্ডের পর বছরের সবচেয়ে সফল ওয়ানডে দল হওয়ার গৌরব যেমন ধরা দিয়েছে এবার, তেমনি জয়ের হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা বছর এটি। এর আগে ২০০৯ সালে ১৪টি ওয়ানডে ম্যাচে জয় পেয়েছিল টাইগাররা।

২০১৮ সালে গত নয় বছরের মধ্যে বিদেশের মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের (উইন্ডিজের বিপক্ষে) স্বাদ পেয়েছেন মাশরাফিরা। এছাড়া এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠা তো আছেই। এবারের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেও ভারতের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের।

টি-টোয়েন্টিতে উইন্ডিজের বিপক্ষে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন সাকিববাহিনী। কিন্তু নিদাহাস ট্রফিতে শেষ বলে হারের যন্ত্রণায় বিদ্ধ হতে হয়।

এসব ইতিবাচক দিকের আড়ালে বড় লজ্জার মুখোমুখি হতে হয় আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ভারতের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারার এই স্মৃতি বহুদিন যন্ত্রণা দেবে টাইগারভক্তদের। এছাড়া একই বছর উইন্ডিজের মাটিতে টেস্টের প্রথম দিনে মাত্র ৪৩ রান অলআউট হওয়ার ঘটনা ঘটে।

তবে, ২০১৮ সালের দিকে ফিরে তাকালে বাংলাদেশ বেশকিছু মধুর স্মৃতি হাতড়াতে পারে। ঘরের মাটিতে এবারও রাজত্ব করেছে টাইগাররা। আগের দুই বছরে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে হারানোর পর এ বছর জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ১-১ ব্যবধানে ড্র করলেও পরের সিরিজে উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ নিতে সক্ষম হয়েছেন সাকিব-মুশফিকরা।

উইন্ডিজ সফরে স্বাগতিকদের কাছে টেস্ট সিরিজের দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে পরাজিত হলেও টাইগাররা ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয় ২-১ ব্যবধানে। টি-টোয়েন্টি সিরিজেও একই ব্যবধানে জয়। এরপর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে সিরিজ খুইয়ে ফের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়। বছরের শেষে ঘরের মাঠে উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজে হার।

২০১৮ সালে বাংলাদেশের দুই সেরা তারকা তামিম ইকবাল ও সাকিব  আল হাসানের ইনজুরি বেশ ভুগিয়েছে টাইগারদের। এছাড়া বিসিবি’র সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়ে আলোচনায় ছিলেন নাসির হোসেন ও সাব্বির রহমান। এই দুজনেই বাজে ফর্ম আর শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে দলে জায়গা হারিয়েছেন।

বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাফল্যে ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। টেস্ট ক্রিকেটে এই দুজনের ফর্ম বাংলাদেশকে বেশকিছু সাফল্য এনে দিয়েছে। আর মিরাজ তো বাংলাদেশের ভবিষ্যত সুপারস্টার ক্রিকেটার হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। এবছর দলে ফিরে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স করেছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। আর নতুনদের মধ্যে নজর কেড়েছেন তরুণ ক্রিকেটার নাঈম হাসান।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ:
 
টেস্ট: ৮ ম্যাচে ৩ জয়, ৪ হার ও ড্র ১
র‍্যাংকিং: ৯
 
ওয়ানডে: ২০ ম্যাচে ১৩ জয়, ৭ হার
র‍্যাংকিং: ৭
 
টি-টোয়েন্টি: ১৬ ম্যাচে ৫ জয়, ১১ হার
র‍্যাংকিং: ১০
 
সর্বোচ্চ
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সিরিজ জয়। প্রথমে ওয়ানডে সিরিজ জয়, যা ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম আর এশিয়ার বাইরে ৯ বছর পর। সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচে উইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, যে ম্যাচে সিরিজে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম আর অপরাজিত ফিফটি করে সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর আসে টি-টোয়েন্টি- প্রথমটি উইন্ডিজের মাটিতে, বাকি দুটি ফ্লোরিডাতে- যেটি টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের প্রথম সিরিজ জয়।

সর্বনিম্ন
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ৪৩ রান অলআউট হয় বাংলাদেশ। এটাই টেস্টে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রান। ফলে ইনিংস ব্যবধানে হার মানতে হয়। ওই ইনিংসে বাংলাদেশের শেষ ৯ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন মাত্র ১৪ রানের মধ্যে। এটা ১৯৫৫ সালের পর সর্বনিম্ন।

সেরা পারফর্মার
২০১৮ সালের সেরা টাইগার পারফর্মার নিঃসন্দেহে স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। টেস্টে এ বছরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা (৪১) উইকেট দখলকারী তিনি। ৪৩ উইকেট নিয়ে সেরা বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। মিরাজ এই সময়ে টেস্টে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সেরা গড়ের (২২.১২) মালিক, সেরা স্ট্রাইক রেটেরও (৪৩.৭) মালিক। এ বছরের ডিসেম্বরে মিরপুর টেস্টে ১১৭ রানে তার ১২ উইকেট নেওয়া টেস্টে বাংলাদেশের সেরা বোলিং।

জিম্বাবুয়ে ও উইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে সফলতার পাশাপাশি উইন্ডিজের মাটিতেও দুই টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব গড়েছিলেন মিরাজ। এছাড়া ২৩.৮১ গড়ে রান তুলে ব্যাট হাতে নিজের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন তিনি।

শুধু টেস্টে নয়, ওয়ানডে ক্রিকেটেও মেহেদি বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সেরা। ১৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের বোলারদের সর্বনিম্ন ইকোনমি রেটও (৩.৯৯) তার দখলে।

হারানো শক্তি
সাব্বির রহমান। বছরে মাত্র ১টি টেস্ট খেলে দুই ইনিংসে করেছেন যথাক্রমে ০ ও ১ রান। ৭ ওয়ানডে ম্যাচে ৬৯ রান যার ২৪ রানই এক ইনিংসে। ৮টি টি-টোয়েন্টিতে ২০.১২ গড়ে ১৬১ রান।

এসব সংখ্যা দিয়ে আসলে বোঝানো যাবেনা সাব্বিরের কতটা অবনতি হয়েছে। এক বছর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচে এক ভক্তের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা আর ২০ লাখা টাকা জরিমানা গুনেছেন তিনি। এরপর জুলাইয়ে ফের জাতীয় দলে ডাক পেয়ে এক সপ্তাহ পরেই ফেসবুকে দুই ভক্তের সঙ্গে অসদাচরণ করার দায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হন। সবমিলিয়ে সাব্বির মানে দারুণ এক প্রতিভার অপচয় ছাড়া কিছু নয়।

বছরের চমক
নাঈম হাসান। বাংলাদেশ যে স্পিন স্বর্গ সেকথা সবাই জানে। এর সর্বশেষ উদাহরণ প্রায় ১৮ বছর বয়সী নাঈম হাসান। অভিষেক টেস্টেই ৫ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে কম বয়সে এমন কীর্তি গড়ার রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন তিনি। এছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টে উইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৪ বলে ২৬ রান করে ব্যাট হাতেও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন এই তরুণ।

মাশরাফি। বছরের একদম শেষ দিকে এসে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সবচেয়ে বড় চমক দেখান টাইগারদের ওয়ানডে দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নিজ এলাকা নড়াইল-২ আসন থেকে বিজয়ী হন। তার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া নিয়ে যারদিকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। ভক্তদের মনে শঙ্কা জাগে, তিনি কি আর ক্রিকেট খেলবেন? এই প্রশ্নের জবাবও দিয়ে দিয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত তিনি নিশ্চিত থাকছেন। ফলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তার ভক্তরা।

সবমিলিয়ে ২০১৮ সালটা ভালোই কেটেছে টাইগারদের জন্য। বছরের শুরু আর শেষে উইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের ক্যারিবিয়ানে ও ঘরের মাটিতে সিরিজ হারানো, যা টাইগার ভক্তদের জন্য অনেক স্বস্তির। তবে দুটি ট্রফি জেতা মিস হওয়ার কষ্ট সহজে ভোলার নয়। তবে যেভাবে চলছে তাতে একটা ট্রফি জেতার স্বাদ পরের বছরই হয়তো পেয়ে যেতে পারে টাইগাররা। কারণ, আসন্ন বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই ইংল্যান্ডে পা রাখবে মাশরাফিবাহিনী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮
এমএইচএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।