ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

গেইলের মতো হতে চান হেটমায়ার

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৮
গেইলের মতো হতে চান হেটমায়ার ক্যারিবীয় ক্রিকেটার শিমরন হেটমায়ার | ছবি: শোয়েব মিথুন

ক্রিস গেইল মানেই ব্যাটিংয়ে ঝড়। প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে ঝক্কার বৃষ্টিতে সিক্ত করেন গ্যালারি। ক্রিকেট বিশ্বে হেন বোলার নেই যিনি ক্যারিবীয় এই ব্যাটিং-দানবের ভয়ে ভীত নন।

টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের শেষ কথা বলতে যদি কিছু থেকে থাকে তবে সেটা এই ক্যারিবীয়ান টর্নেডো। সেই গেইলকে ক্যারিয়ারের ঊষালগ্ন থেকেই আদর্শ মানছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরুণ ড্যাশিং ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ার।

তাকে অনুকরণীয় রেখেই নিজের ক্যারিয়ার রাঙাতে চাইছেন ২৬ বছর বয়সী এ বাঁহাতি।

খেলার ধরন গেইলের মতো নয় সত্যি। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় খুনে ব্যাটিংয়ে গেইলের চাইতে কোন অংশে কমও যান না। যখন ব্যাট চালানো শুরু করেন রান আসে স্রোতের বেগে। যার ছাপ রেখেছেন মাত্রই শেষ হওয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে।

চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টে স্পিন বিষেভরা উইকেটে দলের বাকি ইনফর্মড ব্যাটসম্যানরা যেখানে খাবি খেয়েছেন সেই বধ্যভূমিতে প্রথম ইনিংসে তিনি খেলেছেন ৪৭ বলে ৬৩ রানের ঝড়ো ইনিংস। একই উইকেটে ঢাকা টেস্টও তার ব্যাটিং বিস্ফোরণ বঞ্চিত হয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯টি ছয় ও ১ চারে ৯২ বলে খেলেছেন ৯৩ রানের ইনিংস। তাতে নিজেদের জয় ধরা দেয়নি সত্যি কিন্তু বাংলাদেশের জয়কে নিঃসন্দেহে বিলম্বিত করেছে।

সেই হেটমায়ার বাংলানিউজের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন। প্রসঙ্গক্রমে অনেক কিছুই শেয়ার করেছেন। ক্রিকেটার হিসেবে শুরুটা কী করে হলো, কোন চূড়ায় যেতে চান? অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের শহর ঢাকা কেমন লাগে? এমন নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন ওয়ানডে সিরিজ জয়েরও। পাঠকদের উদ্দেশে হেটমায়ারের সেই কথোপকথন তুলে ধরা হলো।
ক্যারিবীয় ক্রিকেটার শিমরন হেটমায়ার | ছবি: শোয়েব মিথুনএদেশেই আপনি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছেন। তিন বছর পরে এসে কেমন লাগছে?
হেটমায়ার:
বাংলাদেশে আসতে পারাটা সবসময়ই আনন্দের। তবে প্রথমবার যখন এসেছিলাম সেই অভিজ্ঞতা তত ভালো ছিল না। এখানে বোম্বিংয়ের ঘটনা ঘটেছিলো (৮ ডিসেম্বর, ২০১৩। বাংলাদেশ অনূ-১৯ দলের সঙ্গে ৭ ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডে খেলতে এসে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ হোটেলের সামনে বোমা বিষ্ফোরণ হলে নিরাপত্তার কারণে সিরিজ বাতিল করে দেশে ফিরে যায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূ-১৯ দল)। এরপর যখন এসেছি সেটা ছিলো স্মরণীয়। বিশ্বকাপ খেলার আগে এখানে কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। সেই মাঠটিও আমাদের জন্য স্মরণীয়। এখানে আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছি। এছাড়াও কিছু মজার স্মৃতি আছে।

ক্রিকেটার হিসেবে আপনার জার্নির কথা বলুন। আপনার শুরুটা কিভাবে হলো, কে আপনাকে ক্রিকেটে উদ্বুদ্ধ করলেন?
হেটমায়ার:
আমি যখন খুব ছোট তখন থেকেই শুরু করেছি। ১১ বছর বয়সে। আমার ভাইকে খেলতে দেখতাম। পরিবার থেকে আমি সবসময়ই সমর্থন পেয়েছি। আমার গার্লফ্রেন্ড এবং আশপাশের সবাই সমর্থন দেয়।

আমরা দেখেছি মাঠে আপনি দারুণ ইতিবাচক থাকেন। ব্যাটিংয়ের সময় আপনি যে মনোভাব দেখান সেটা কী করে সম্ভব? এটা ক্যারিবীয় বলেই নাকি অন্য কিছু?
হেটমায়ার:
আমি বলবো এটা ন্যাচারাল। যে বলটিই আসুক না কেন আমি চেস্টা করি খেলতে, রান করতে। সবসময়ই আমি আমার সর্বোচ্চ রানটিই করতে চাই।

বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি কাকে অনুসরণ করেন?
হেটমায়ার:
অনেকেই আছেন এমন যাদের অনুসরণ করি। আমার দেশের শিব নারায়ণ চন্দরপল, টি-টোয়েন্টি কিংবদন্তি ক্রিস গেইল আর ব্রায়ান লারাও আছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
হেটমায়ার:
আমি সমসময়ই নিজেকে অন্য উচ্চতায় দেখতে চাই। কয়েক বছরের মধ্যে যেন ওয়ার্ল্ড ক্লাস ব্যাটসম্যান হতে পারি সেই চেষ্টাই করবো। সেজন্য কঠোর পরিশ্রম করছি। চেস্টা করছি যেন ক্রিকেটের প্রতিটি ফর্মেটেই অন দ্য ফিল্ড এবং অফ দ্য ফিল্ড ইতিবাচক থাকতে পারি।
হাস্যোজ্জ্বল ক্যারিবীয় ক্রিকেটার শিমরন হেটমায়ার | ছবি: শোয়েব মিথুনআমরা দেখেছি এখানে এসে অনেক ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানই উইকেটের সঙ্গে মানিযে নিতে স্ট্রাগল করছেন। একমাত্র আপনিই উইকেটে গিয়ে নির্ভীক ব্যাটিং করছেন। এর রহস্য কী?
হেটমায়ার:
এর পেছনে কোনো রহস্য নেই। আমি মনে করি, স্পিন আমি খুবই ভালো খেলি। আমি উইকেটে গিয়ে চাপমুক্ত এবং নির্ভীক থাকি। এই ব্যাপারটিই আমাকে আমার পরিকল্পনানুযায়ী খেলতে সাহায্য করে।

এমনকি কোন সম্ভাবনা আছে আমরা হেটমায়ারকে ডুয়াইন ব্রাভো, কাইরন পোলার্ড, ক্রিস গেইলের মতো বিশ্ব মাতানো ফ্রি ল্যান্স টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে দেখবো? নাকি আপনি জাতীয় দলেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন?
হেটমায়ার: দেখেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা আমার ছোটবেলার স্বপ্ন।  যতদিন সম্ভব আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েই খেলবো।

আপনি ক্রিস গেইলের মতো হতে চান?
হেটমায়ার:
হ্যাঁ। আমি ওকে ফলো করি।

বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট সিরিজটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো যায়নি। সংক্ষিপ্ত ফর্মেটটি কী আমরা আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখবো?
হেটমায়ার:
টেস্ট সিরিজে আমরা ভালো করিনি। আমার মনে হয় ওয়ানডে সিরিজে আমাদের ভালো সুযোগ আছে। আমাদের ধাপে ধাপে আগাতে হবে। দলের সবাইকে হাল ধরতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলেই আমরা জিতবো।

আপনি অনেকবারই ঢাকা এসেছেন। এখানকার এমন কোনো জায়গা আছে ভালো লাগে?
হেটমায়ার:
সত্যি কথা বলতে খুব একটা বাইরে যাওয়া হয় না। তবে আমি এখানে আসতে পছন্দ করি। এখানকার ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় বিধায় আমি এখানে খেলতেও পছন্দ করি। কয়েকদিন আগে শপিংমলে গিয়েছিলাম। এখানকার মলগুলোও বেশ ভালো।

পরিচিত কারো সাথে দেখা করেছেন?
হেটমায়ার:
খুব বেশি পরিচিত নেই। অল্প কয়েকজন আছে। আমার লিয়াজোঁ অফিসার যিনি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সময় ছিলেন তার সাথে দেখা হয়েছে এবং কথা হয়েছে।

মিরাজের সঙ্গে দেখা হয়েছে?
হেটমায়ার:
হ্যাঁ, ও তো আমার একজন ভালো বন্ধু। বাংলাদেশের পুরনো বন্ধুদের মধ্যে ও একজন। আমি বলবো ওর বিপক্ষে খেলাটা চ্যালেঞ্জিং। সেই অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে আজ অবধি ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ আছে। মাঠে ও মাঠের বাইরে আমরা ভালো বন্ধু।

টেস্ট সিরিজে চারবার মিরাজ আপনাকে আউট করেছে। কোনো মেসেজ দিয়েছেন ওকে? 
হেটমায়ার: না।

বিপিএলে অসংখ্য ক্যারিবীয় ক্রিকেটার খেলে থাকেন। আপনিও খেলতে চান?
হেটমায়ার:
সামনে দেখা যাবে। বর্তমানে আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলাটাই বেশি ফোকাস করছি। যতদিন সম্ভব সেখানেই খেলবো। তবে হ্যাঁ, যদি কখনো সময় হয় বিপিএলে খেলবো নিশ্চয়ই।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৮ 
এইচএল/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।