ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিরল ‘নীলগলা ফিদ্দা’র জন্য কচুরিপানায় ৩ ঘণ্টা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮
বিরল ‘নীলগলা ফিদ্দা’র জন্য কচুরিপানায় ৩ ঘণ্টা শীতের বিরল পরিযায়ী ‘নীলগলা ফিদ্দা’-ছবি-সুলতান আহমেদ

মৌলভীবাজার: পাখি আলোকচিত্রীদের বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই! অনেক কষ্ট সহ্য করে তারপর আসে ভালো একটি ছবি। ক্যামেরা নিয়ে বেরুলেই যে হঠাৎ করে বিশেষ কোনো পাখির ছবি তুলে ফেলা যায়-ব্যাপারটি আসলে একদমই তা নয়। একটি ছবির পেছনে থাকে একজন চিত্রগ্রাহকের অনেক শ্রম আর অনেকদিনের নিরন্তর সাধনা।

‘পাখি’ চঞ্চল প্রকৃতির প্রাণী। যত ক্ষুদ্রাকার পাখি ততই তার চঞ্চলতা।

একটি ডালে বা পাতার ফাঁকে কিংবা মাটিতে সে বেশিক্ষণ থাকে না। তাই সে বিবেচনায় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে পাখির ছবি তুলতে হয়। আলোকচিত্রীকে পাখিরা বেশি সময় দেয় না ছবি ধারণের জন্য।

সম্প্রতি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর তোলা হয় শীতের পরিযায়ী পাখি ‘নীলগলা ফিদ্দা’র (পুরুষ) ছবি। পাখিটির ইংরেজি নাম Bluethort। আর ছবিটি তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং পাখি আলোকচিত্রী সুলতান আহমেদ।

৩ ঘণ্টার অপেক্ষার পর পাখিটির ছবিধারণ সম্পর্কে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ওই একই জায়গায় এক সপ্তাহ আগে আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন আমার ক্যামেরায় সমস্যা ধরা পড়ায় আর ছবি তুলতে পারিনি। তখন ওই পাখিটিকে হালকা পানি-কাঁদার একটি ফাঁকা জায়গায় দেখেছিলাম। কয়েকদিন পরে পলাশ বিশ্বাস নামের একজনকে সঙ্গে নিয়ে আবার ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে যাই। তারপর ওই হালকা পানি-কাঁদার একটি ফাঁকা জায়গায় গিয়ে দেখি একটি ‘ধলা খঞ্জন’ (White Wegtail) এবং অন্যটি ‘হলুদ খঞ্জন’ (Yellow Wegtail) খাবার খাচ্ছে। আমরা ওয়েগটেলের কয়েকটি ছবি তোলার পর মনে মনে ভাবি হয়তো এখানে ব্লু-থ্রট পাখিটি আসতে পারে। সিদ্ধান্ত নিই-এখানেই কয়েক ঘণ্টা কাটানোর।

তিনি আরও বলেন, আমার টানা ৩ ঘণ্টার মতো এখানে শুয়েছিলাম। অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে ‘নীলগলা ফিদ্দা’ পাখিটা এলো। আমরা শুকনো কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে শুয়েছিলাম। শুধু ক্যামেরার লেন্সটা বের করা ছিল। পাখিটা সামনে আসতে আসতে আমাদের একদম সামনে চলে এলো। আমরা এতোটাই লুকিয়ে ছিলাম যে সে আমাদের দেখতে পাইনি। প্রথমদিকে আমাদের লেন্সে ছবি ফোকাস হচ্ছিল না, তবে আমরা নিরাশ হয়নি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এরা অত্যন্ত সুন্দর পরিযায়ী পাখি। এর ইংরেজি নাম Blue Throat এবং বৈজ্ঞানিক নাম Luscinia svecica। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে গুবরে পোকা, শুঁয়োপোকা, কেঁচো এবং অন্য কীটপতঙ্গ।

ড. কামরুল হাসান বলেণ, জলাভূমির আশপাশে এরা আমাদের দেশের আবাসিক পাখিদের সঙ্গে একত্রে খাদ্য সংগ্রহ করে এবং শীতের কয়েক মাস (মোটামুটি নভেম্বর থেকে জানুয়ারি) কাটিয়ে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোর দিকে ফিরে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।