ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্যারিয়ার

২০১৮ সালে যেমন রেজুমে চাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৮
২০১৮ সালে যেমন রেজুমে চাই

রেজুমের কথা কেন বললাম সিভি না বলে? কারণ হলো সিভি হচ্ছে এক একাডেমিক লেভেল থেকে আরেক একাডেমিক লেভেলে যেতে লাগে এমন ডকুমেন্ট। সিভিতে আপনি কি কি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, রিসার্চ করেছেন, প্রজেক্ট করেছেন, থিসিস করেছেন, কনফারেন্স ও ট্রেনিং করেছেন সেগুলো কাজে লাগে। সাথে দিতে হয় Statement of Purpose (SOP)। আর রেজুমে হচ্ছে আপনার গ্রাজুয়েশনের পর চাকরির জন্য আবেদন করতে কাজে লাগে। সেখানে থাকতে হবে আপনার পার্ট টাইম কাজ, ভলান্টারি কাজ, এক্সট্রা কারিকুলার দক্ষতা, ট্রেনিং ইত্যাদি। আর তার সাথে দিতে হবে কভার লেটার। সুতরাং ২০১৮ সালে আমার প্রথম প্রত্যাশা থাকবে আমরা যেন সিভি ও রেজুমের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। সিভি চাইলে যেন রেজুমে না দেই কিংবা রেজুমে চাইলে যেন সিভি দিয়ে না বসি।

১। আপনার নাম, বর্তমান ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি, স্কাইপি আইডি ও লিংকডইন আইডি, জন্মসাল ও এনআইডি নম্বর ছাড়া আর কোন পার্সোনাল তথ্য রেজুমেতে দেওয়ার দরকার নেই।


২। আপনার পিতা মাতার নাম কিংবা গ্রামের বাড়ি কোথায়- এর সাথে আপনার ক্যারিয়ার ও জবের কোন সম্পর্ক নেই, এগুলো এড়িয়ে চলুন।
৩। রেজুমেতে প্রতিটা কাজ স্পেসিফিক করে লিখুন। আপনি তিন জনের টিম নাকি ত্রিশ জনের টিম পরিচালনা করেন, আপনি কি বাদাম বিক্রি করেন নাকি বিমান বিক্রি করেন তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করলে নিয়োগকর্তা বিভ্রান্ত হবেন।
৪। রেজুমে চেক করতে সময় নেওয়া হয় ১৫ সেকেন্ডের মতো। এই ১৫ সেকেন্ডে রেজুমে টিকে গেলে এরপর আরো সময় নিয়ে পড়া হয়। কাজেই আপনার রেজুমে সিম্পল করুন। ১০ বছর পর্যন্ত অভিজ্ঞতা থাকলে দুই পৃষ্ঠা, ৩০-৩৫ বছর অভিজ্ঞতা হলে বড়জোর তিন পৃষ্ঠা সিভি হতে পারে। মনে রাখবেন, পেজ না বরং কাজ হচ্ছে দরকারি।
৫। নতুন বছরে নতুন ছবি তুলুন। আপনার চেহারায় গত এক বছরে আরো ম্যাচুরিটি এসেছে। এটা প্রথম দেখাতেই চাকরিদাতাকে আপনার সম্পর্কে ভালো ইমপ্রেশন তৈরি করতে সাহায্য করে।
৬। ফ্রেশাররা রেজুমেতে দুইজনকে রেফারেন্স রাখতে পারেন। অভিজ্ঞদের জন্য রেফারেন্স দরকার নেই, কাজই আপনার সবচেয়ে বড় রেফারেন্স।
৭। আত্মস্বীকৃত কোন প্রশংসামূলক কথা রেজুমেতে না থাকাই ভালো। আপনি পরিশ্রমী এটা না লিখে কি কি কাজ করেছেন যা থেকে বোঝা যায় আপনি পরিশ্রমী সেটা লিখুন।
৮। রেজুমেতে নিত্যদিনের কাজ লেখা পরিহার করুন। বরং কাজের ফল কি ছিলো সেটা উল্লেখ করুন। সব বাচ্চাই স্কুলে যায়, কিন্তু ক্লাসে প্রথম হয় এক জন।
৯। বিগত এক বছরে যে সব প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করেছেন, সেগুলো রেজুমেতে যুক্ত করুন। প্রশিক্ষণ খুব বেশি দরকারি। কেননা নিয়োগকর্তারা সবসময় একজন প্রশিক্ষিত লোক খোঁজেন।
১০। শুধুমাত্র ইনফোগ্রাফিক রেজুমে পাঠাবেন না, এদেশে এখনো এর গ্রহনযোগ্যতা সেভাবে তৈরি হয়নি। তবে যেহেতু সারা বিশ্বে এরকম সিভি চলে, তাই একটি এক পেজের সিভি বানিয়ে এটিকে মূল দুই পেজের সিভির সাথে অ্যাটাচ করে দিতে পারেন। শুধুমাত্র ইনফোগ্রাফিক রেজুমের উপর নির্ভর করা ভুল হবে।
১১। আপনি গত এক বছরে নতুন কি কি উদ্যোগ নিয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে কি কি জায়গায় ভ্যালু অ্যাড করেছেন সেটা উল্লেখ করুন।
১২। নিজের অর্জন গুলোকে ফুটিয়ে তুলতে STAR ফ্যাক্টর কাজে লাগাতে পারেন। এখানে  S= Situation, T=Target, A= Action, R=Result । অর্থাৎ, আপনি যখন কোম্পানিতে জয়েন করেছিলেন তখন কি অবস্থা ছিলো, আপনি কি কি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, কি কি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছিলেন, এর ফলাফল কি ছিলো? আপনি যখন কোম্পানিতে জয়েন করেছিলেন তখনকার অবস্থা আর বর্তমান অবস্থা, এই দুইয়ের পার্থক্যই হচ্ছে আপনার অর্জন।
১৩। অনেক সময় অনেক ছোট ছোট কাজ করেছেন, যেগুলোর কারনে হয়তো কোম্পানির লাখ লাখ টাকা বেঁচে গিয়েছে, সেই কাজগুলোর ফলাফল রেজুমেতে উল্লেখ করুন।
১৪। একজন ম্যানেজার কি কাজ করে, তা কিন্তু আমরা গুগল সার্চ করলেই পেয়ে যাই। কিন্তু ম্যানেজার হিসেবে আপনি কি কাজ করেছেন, তা কিন্তু কোথাও নেই। কাজেই রেজুমে এমনভাবে তৈরি করুন, যাতে তা আপনার কাজের প্রকাশ ঘটায়।
১৫। আপনি যতো ছোট দায়িত্বেই থাকেন না কেন কোম্পানির মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কিন্তু কাজ করছেন। কোম্পানির এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার অবদান কি কি সেটা উল্লেখ করুন।
১৬। আপনাকে কেন একজন মানুষ ইন্টারভিউতে ডাকবে? আপনার সিভিতে কি তার প্রয়োজনের সাথে মিলিয়ে কাজগুলোকে লিখেছেন? না লিখলে প্রতিবার আবেদনের আগে সার্কুলার পড়ে দেখে, সেই কাজের সাথে নিজের কাজ মিলিয়ে তবেই সিভি পাঠান।
১৭। আপনার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, যোগাযোগ দক্ষতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা, অপরকে সহযোগিতা করার দক্ষতাকে সিভিতে ফুটিয়ে তুলুন। যোগাযোগ দক্ষতা সবার আছে, কিন্তু এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কেউ দশজন কাস্টমার জোগাড় করতে পারেন, কেউ বিশজন। কাজেই কতজন নতুন কাস্টমার আপনি কোম্পানির জন্য এনেছেন, সেটা জানা দরকার। আপনি যে যোগাযোগ রক্ষা করতেন সেটা জানা দরকার না।
১৮। যারা এখন ফ্রেশার কিংবা পড়াশুনা করছেন তারা একটু ভাবুন, ১০ জন গ্র্যাজুয়েটের মধ্য থেকে কেন আপনাকে ডাকা হবে? বাকি নয় জন কেন নয়? নিশ্চয়ই আপনার ভিতরে এক্সট্রা কিছু থাকা দরকার, আছে কি সেই এক্সট্রা কিছু? নয়তো আজ থেকেই কাজে লেগে পড়ুন। কিছু একটা করুন, যাতে সিভিতে লেখা যায়, যা আপনার ক্যারিয়ারে ভ্যালু অ্যাড করে।
১৯। আপনি কি কি চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, কি কি প্রজেক্টে কাজ করেছেন সেটা উল্লেখ করুন। আবারো বলছি, প্রজেক্ট মানে প্রজেক্টের ফলাফল।
২০। ফ্রেশার রেজুমেতে পার্ট টাইম কাজ, ভলান্টারি কাজ, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটি, সিএসআর কাজ, প্রশিক্ষণ- এই পাঁচটি জিনিস সবচেয়ে বেশি দরকার। এই পাঁচটি জিনিসকে যদি আমি ৫ নম্বর দেই, তাহলে আপনি এই ৫ এর ভেতর কতো পাবেন? ৫ এর মধ্যে ৫ পেলে তো ভালোই। কিন্তু স্কোর কম হলে, অবশ্যই এই লেখাটি পড়ার পর পরই যেকোন কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন যেন গ্রাজুয়েশন শেষ হবার আগেই আপনার স্কোরও ৫ হয়ে যায়।
অন্যকে ইমপ্রেস করতে হলে নিজেকে এক্সপ্রেস করতে হবে। কাজ করা যতোটা গুরুত্বপূর্ণ, কাজকে সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তোলাটা তার চেয়েও বেশি জরুরী।
আপনি নিজে জীবনেও সেসব জায়গায় যেতে পারবেন না, যেখানে আপনার রেজুমে পৌঁছাবে। রেজুমে আপনার দূত। আপনার রেজুমেটি যদি যথাযথ কোয়ালিটির হয়, তাহলে রেজুমেই পারবে আপনাকে আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে। তাই, ২০১৮ সালের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা নিজেদের কাজগুলোকে আরো সুন্দর ও সাবলীল ভাবে প্রকাশ করবো।    

neaz

 

নিয়াজ আহমেদ
রেজুমে ডেভলপমেন্ট স্পেশালিষ্ট
সিইও, কর্পোরেট আস্ক

 

প্রিয় পাঠক, আপনার প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, ক্যারিয়ার বিষয়ক যেকোন প্রশ্নের উত্তর জানতে, আপনার মতামত জানাতে বা লেখা পাঠাতে চাইলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়। বাংলানিউজের সাথেই থাকুন...

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।