ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্যারিয়ার

সমস্যা, সম্ভাবনার দোলাচলে তারুণ্য

ক্যারিয়ার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
সমস্যা, সম্ভাবনার দোলাচলে তারুণ্য

ছোটবেলা থেকেই আমাদের সামনে একটি মূলো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের সফলতাগুলোকে পরিমাপ করা হয় কিছু পুরষ্কার দ্বারা।

ছোটবেলা থেকেই আমাদের সামনে একটি মূলো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের সফলতাগুলোকে পরিমাপ করা হয় কিছু পুরষ্কার দ্বারা।

পুরষ্কারগুলোকে আমরা অনেকটা গাঁধার সামনে যেভাবে মূলো ঝুলিয়ে রাখা হয় ওইভাবে সংজ্ঞায়িত করি।

পঞ্চম শ্রেণীতে উঠার পর পিএসসিতে ভালো করতেই হবে, তা নয়তো অন্য বাচ্চাদের সামনে মুখ দেখানো যাবেনা। এরপর জেএসসিতে ভালো করো, নইলে নবম শ্রেণীতে সায়েন্স পাওয়া যাবেনা।

এবারে এসএসসি। এ প্লাস পাও, নইলে ভালো একটি কলেজে চান্স পাবেনা। ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেতে চাইলে এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।

একটা ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পরেও এই সংগ্রাম শেষ হয়না। এরপর ভার্সিটি থেকে ভালো সিজিপিএ পাওয়ার দরকার দেখা দেয়। ভার্সিটির পড়াশুনার পার্ট চুকানোর পরেও দেখা যায় চাকরির বাজারে হাহাকার, এখন একটি ভালো চাকরি পেতেই হবে কারণ বিয়ের বাজারেও মানুষকে মূল্যায়ন করা হয় তার চাকরি দিয়ে।

আমাদের দেশে চাকরি দুই প্রকার সম্মানজনক চাকরি ও অপমানজনক চাকরি।

সম্মানজনক চাকরি বলতে বুঝায় শুধুমাত্র ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিংকে, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাকী চাকরি গুলো সম্মানজনক নয়। এভাবে আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে একটি অসুস্থ প্রতিযোগীতামূলক পরিবেশে বড় করে তোলা হচ্ছে। যেখানে আমরা আমাদের পাশের লোকটিকে সহযোগী নয় বরং প্রতিযোগী ভাবি।

আমদের মধ্যে কতজন লোক আছে যারা, এখন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ের উপর পড়াশুনা করছেন এটিই তার জীবনের লক্ষ্য ছিলো। আমাদের অনেকেই হয়তো খেলাধুলা করতে ভালোবাসি, কিন্তু পড়াশুনা করি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এবং জব করি ব্যাংকে।

বাণিজ্য বিভাগে নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া কোন ছাত্রকে জীবনের লক্ষ্য নিয়ে লিখতে দেওয়া হলে তাকেও ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার এই দুই লক্ষ্যের মধ্যেই রচনা লিখতে হয় কারণ এই দুই লক্ষ্য নিয়ে লিখলেই পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া যাবে। এভাবে আমাদের সকলেরই ভিতরের সুপ্ত প্রতিভাকে অংকুরেই বিনষ্ট করে দেওয়া হয়।

কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন প্রতিযোগীতার এই আসরে অন্যকে পেছনে ফেলে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে আসলে কি আপনি সফল? আপনার দৈনন্দিন কাজের দ্বারা কারো কি কোন প্রকারের উপকার হচ্ছে বা আপনি কি নি:স্বার্থভাবে কারোমুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন। দিনশেষে আপনি যখন ঘুমাতে যান তখন কি আপনার মনে হয় যে আপনি সুখী?

একজন প্রফেশনাল সিভি রাইটার হিসেবে মানুষকে ক্যারিয়ারের বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া, নিজেকে অপরের সামনে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে সহায়তা করা, দৃষ্টিনন্দন সিভি তৈরি করে দেয়াই আমার কাজ। ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিএ এবং আরও অনেক ডিগ্রি ও ট্রেনিং থাকা সত্ত্বেও লাখ টাকার চাকরি না করে আমি এসব করছি। দিনশেষে যখন একজন লোক ইনবক্সে, ফোনে, মেইলে বা সামনা সামনি জানায় যে আমার ওই কথাটি শুনে তার উপকার হয়েছিলো তখন গর্বে মনটা ভরে যায়। তখন মনে হয়- আমি সফল ও সুখী।

ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার এই ইঁদুর দৌড়ে শামিল না হয়ে নিজেকে নিয়ে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করুন। কোন কাজই অসম্মানের নয়। আমাদের দেশে প্রায় ১৬ কোটি লোক, প্রত্যেকেই কোন না কোন সমস্যায় জর্জরিত। আপনি তার মধ্য থেকে যেকোন একটি সমস্যা নির্বাচন করুন এবং সেটি সমাধান করার চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনার এই সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টাই একটি বড় রকমের বিজনেস আইডিয়া হয়ে গেছে। পৃথিবীর সব বড় বড় ব্যবসা বাণিজ্যের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের কোন না কোন সমস্যাকে মাথায় রেখে এবং সেটিকে সমাধানের জন্য।

ভালো সিজিপিএধারী হলেই যে সফল হওয়া যাবে- এমন  কথা কোথাও লেখা নেই। আমার এক হাজার প্লাস প্লাস সিভি লেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যার মধ্যে প্রায় ৮০টির উপর সিভি ছিলো জিএম কিংবা তদুর্ধ্ব লেভেলের মানুষের। এদের অধিকাংশই পাস করেছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে। সুতরাং আইবিএ কিংবা বুয়েটে চান্স না পেলে জীবনে যে আর কিছুই করার নেই এরকম ভাবার কোন কারণ নেই।

আমাদের কাছে মানুষ যেমন ইউনিলিভার বা ব্যাটের মতো কোম্পানিতে জয়েন করার জন্য সিভি দেয়- তদ্রুপ এসব কোম্পানি থেকে বের হবার জন্যও মানুষ সিভি দেয়। কাজেই বড় একটা কোম্পানিতে চাকরি করলেই যে সমস্ত সুখ আসবে এমন কোন কথা কোথাও বলা নেই।

একটা কথা প্রত্যেকেরই মনে রাখা জরুরী- কোন না কোন সমস্যার সমাধান করার লক্ষ্য নিয়েই কোন না কোন বিজনেসের জন্ম। এবং প্রত্যেককে নতুন কোন আইডিয়া নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রথমে অনেক রকমের আজেবাজে কথার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা জিনিস মনে রাখা জরুরী তা হচ্ছে, লোকে কি ভাববে তা যদি আমিও ভাবি, তাহলে লোকে ভাববে কি ?

তরুণদের মনে রাখা জরুরী যে, পৃথিবীতে সমালোচনার চেয়ে বড় ব্র্যান্ডিং আর কিছু নেই। ছাত্রজীবনে প্রত্যেকের উচিত সময়কে কাজে লাগানো।
 
বেকার থাকাটা একটা আর্ট। কোন দায়িত্ব পালন করা লাগে না, কখনো কপাল, কখনো পারিপার্শ্বিক অবস্থা, দারিদ্র, কখনো মামা কাকা না থাকাকে দোষ দিয়ে দিব্বি খেয়ে পরে পায়ের উপর পা তুলে দিন পার করে দেয়া যায়।
 
বছরে ৫২টি সপ্তাহ, ১০৪ দিন ছুটি। সেই হিসেবে গ্রাজুয়েশানের ৪ বছরে ঈদ, পূজা, শীত, বর্ষা এসব বাদ দিয়েও ৪১৬ দিন ছুটি। কিন্তু আমরা দিব্বি সেগুলো নষ্ট করে গ্রাজুয়েশান করে ভিখারীর মত শূন্য হাতে বের হই। ভিখারীরা দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে, আমরাও দ্বারে দ্বারে চাকরি খুঁজি। বলা যেতে পারে শিক্ষিত ভিখারী।
 
কিন্তু নিজের দিকটা কখনো ভাবি না, আপনি কি আসলেই জব পাওয়ার যোগ্য? জব খুঁজবো কেন? আমি কাজ জানি, লোকে তো ডেকে নিবে। এভাবে কি নিজেকে গড়ে নেয়া যায় না? কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একটি পোস্টের মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলাম যে ১০০ বার সিভি পাঠালে আপনারা কতবার কল পান? ১০০ টি কমেন্ট বিবেচনা করলে দেখতে পাই, ৭০ জন বলেছেন ২-৩টি, ২৫ জন বলেছেন ৪-৫টি, বাকি ৫জন ৬-৭টি করে কল পান। তার মানে গড়ে ১০০ বার সিভি পাঠালে আমরা ৩ বার করে কল পাই। ১০০ বার আবেদন করতে কত সময় নষ্ট হয় হিসাব করেছেন কি? অনেকে আছেন তিন থেকে চার মাস পর পর ইন্টারভিউ কল পাচ্ছেন। আবার এক একটি আসনের বিপরীতে আপনাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে প্রায় ৩০-৪০ জনের সাথে।
 
কিন্তু আপনি যদি নিজেকে ছাত্রাবস্থা থেকে তৈরি করতেন, ডেভলাপ করতেন, আপডেট রাখতেন, তাহলে হয়তো আপনার এরকম অবস্থা হত না।
 
আমার নিজের তৈরি একটি সূত্র আছে। সেটি হচ্ছে, “ল’ অফ এন্টারটেইনমেন্ট”। এই সূত্রমতে,
১। ছাত্রজীবনে যত বেশি বিনোদনের মধ্যে সময় নষ্ট করবেন, কর্মজীবনে আপনার দুরবস্থা দেখে অন্যরা ততো বেশি বিনোদিত হবে।
২। ছাত্রজীবনে যত ঘুমাবেন, কর্মজীবনে ধাক্কা খাওয়ার পর টেনশনে ততো ঘুম হারাম হয়ে যাবে। মৃত্যুর পর আপনি ঘুমানোর অনেক সময় পাবেন। তাই জীবনকে করে তুলুন কর্মময়।
৩। কম্পিউটারে আপনি যত সময় গেম খেলে কাটাবেন, জীবন আপনাকে নিয়ে ততো গেম খেলবে।
 
সুতরাং, সময়কে কাজে লাগাতে হবে। হেলাফেলা করে সময় নষ্ট আর নয়। মনে রাখবেন, প্রত্যেক বিনোদনেরই একটি সমান ও বিপরীত ক্রন্দন আছে। জব মানে চাকরি না। জব মানে কাজ।

চাকরি করার মেন্টালিটি থাকলে সারাজীবন চাকরিই করতে হবে। বরং কাজ করার মানসিকতা গড়ে তুলুন। কাজ শিখুন, কাজ করুন- কাজে দিবে।

কিছুদিন আগে সংবাদে দেখছিলাম- এক গৃহকর্মীর গায়ে আগুন লেগেছিল। সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছিল এবং অনেকের কাছে সাহায্যও চেয়েছিল। সাহায্য না পেয়ে সে আরো ছোটাছুটি করতে থাকে। এভাবে তার শরীরের ৫৬ শতাংশ পুড়ে যায় এবং সে মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু সে যদি জানতো- কাপড়ে আগুন লাগলে ছোটাছুটি না করে শুয়ে গড়াগড়ি দিতে হবে, তাহলে হয়তো সে তার এই অকাল মৃত্যু ঠেকাতে পারতো। সামান্য একটু জ্ঞানের অভাব একজন মানুষের জীবনে মৃত্যু ডেকে আনলো। কিন্তু তবুও কি আমরা সচেতন হতে পেরেছি?

কারো মৃত্যু হচ্ছে শারীরিক, কারো মৃত্যু হচ্ছে মানসিক। আমরা অনেকেই অনেক বড় বড় ডিগ্রি নিয়েছি হয়তো। কিন্তু আমরা কি স্বশিক্ষিত হতে পেরেছি?

পৃথিবীর অনেক সফল ব্যক্তির জীবনী পড়েছি। কিন্তু কেউ তার জীবনীতে লেখেননি যে, ‘আমার বাবা ধনী ছিলেন। আমার পড়াশোনা করার অনেক সুযোগ ছিলো। পড়ালেখা ছাড়া আমার আর কোনো কাজ ছিল না। আমার বাসায় তিন-চারটা টিচার এসে পড়িয়ে যেত। ’ বরং তাদের জীবনী থেকে আমরা যেটা পাই, তা হচ্ছে- তাদের সকলেরই ছিলো জ্ঞান লাভের পিপাসা। তবে তার মানে এই নয় যে স্কুল-কলেজে না গেলেই রবীন্দ্রনাথ হওয়া যাবে বা রুটির দোকানে কাজ করলেই নজরুল হওয়া সম্ভব। বড় মানুষের বড় লক্ষ্য থাকে। একটি বাচ্চাকে লক্ষ্য করলে দেখবেন, সে যখন খুব ছোট। তার ভিতর কেবলই কৌতূহল- এটা কি? ওটা কি? এটা কেন হল? ওটা কেন হল? হাজারো প্রশ্ন।

যতই তার বয়স বাড়ে তার প্রশ্ন করা কমে যায়। ভিতরে কিছুটা ইগো চলে আসে, চলে আসে একটা চাপা অহংকার যা তার জীবনে উন্নতির কোমর ভেঙ্গে দেয়। ফলে যা হয়, সে আজীবন মধ্যবিত্তই থেকে যায়। অথচ যতই আপনি প্রশ্ন করবেন, ততই আপনি জানবেন। শিশুর মত প্রশ্ন করতে শিখুন।

একবার দু’জন বিক্রয়কর্মীকে আফ্রিকায় পাঠানো হল জুতা বিক্রির জন্য। দু’জনই গিয়ে দেখলেন লোকজনের পা খালি। প্রথম বিক্রয়কর্মী কোম্পানির হেড অফিসে ফোন করে জানালেন, ‘এখানকার লোকজন জুতো পরে না। কাজেই এখানে জুতা বিক্রির চিন্তা করে লাভ নেই। ’
দ্বিতীয় বিক্রয়কর্মী জানালেন, ‘এখানে কেউ জুতা পরে না, কাজেই যা বানাবো তা-ই বিক্রি হবে, এই অঞ্চলের জন্য কোম্পানির উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। ’ সুতরাং সবকিছুর মূলে হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি। আপনাকে একটি গ্লাসের অর্ধেকটা পানি দিয়ে দেয়া হল। আপনি কী অর্ধেক গ্লাস পূর্ণ দেখবেন, নাকি অর্ধেক গ্লাস খালি দেখবেন, নাকি অর্ধেক গ্লাস পানি ও অর্ধেক গ্লাস বাতাস দেখবেন। নাকি বলবেন, ‘গ্লাসটি আরো ছোট হওয়া দরকার ছিলো। ’ সবই আপনার দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করছে।

আমরা সবাই প্রফেশনাল শব্দটার সাথে পরিচিত। এটার অর্থ সমাজে এমন যে, প্রফেশনাল মানেই বুঝি একটু বেশি ভাব, অহংকার, দেয়া-নেয়া টাইপ সম্পর্ক। কিন্তু আসলে কি তাই? প্রফেশনাল ব্যাপারটা হচ্ছে, আপনি কী জানেন তা জানা ও আপনি কি জানেন না তা জানা। অর্থাৎ আপনার সবল ও দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে জানা। এটা একটা আত্মোন্নয়নের প্রক্রিয়া। আমরা সবাই একই রকমের হার্ডওয়্যার নিয়ে জন্মেছি। সবার দিনই চব্বিশ ঘণ্টার। এই ২৪ ঘণ্টা কাজে লাগিয়ে কেউ সফল হচ্ছি, কেউ ব্যর্থ হচ্ছি। স্রষ্টার সব সৃষ্টি আমরা সবাই সমানভাবেই ব্যবহার করছি।

সবকিছুর মূলে হচ্ছে নিজেদের ইচ্ছাশক্তি। আমরা কেউই জন্মান্ধ নই। আমাদের চোখের সামনে একটি পট্টি বাঁধা যা আমাদের অন্ধ করে রেখেছে। আমরা কেউ তো আজীবন বাঁচবো না। মৃত্যুর সময় আমরা কী রেখে যাচ্ছি- যা দ্বারা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম উপকৃত হবে? জীবনটা হেসে-খেলে কাটানোর জন্য নয়। আমাদেরকে জন্মের পর থেকে শেখানো হচ্ছে- ‘পুকুর পাড়ে যেও না, তুমি কিন্তু সাঁতার জানো না। ’ তবে আমরা যদি শিখতে পারতাম, ‘চলো আজ পুকুরে নেমে সাঁতার শিখি। ’

তাহলে হয়তো আমাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো অন্যরকম হতে পারতো। ‘তুমি এটা পারবে না। তোমাকে দিয়ে এটা হবে না। তুমি এটা করবে না। এই পথে যাবে না। ’ হাজার হাজার বার না শুনতে শুনতে আমাদের ছেলেমেয়েরা বেড়ে ওঠে। তাদের অন্তরের সেই কৌতুহলী মানুষটাকে গলা চেপে মেরে ফেলা হয়। কিন্তু তাই বলে কি এদেশে প্রতিভা নেই? তাহলে মাশরাফি হলেন কীভাবে? মুস্তাফিজ হলেন কীভাবে? এরা তো ভিনগ্রহের কেউ নন। আমার আপনার মতই মানুষ। পার্থক্য একটাই। এদের অন্তর্চক্ষু অন্ধ নয়। এরা স্বশিক্ষিত। বইপড়ার প্রতি কোথায় যেন আমাদের অনেক আলসেমি? গৎবাধা সিলেবাসের বাইরেও যে পড়তে হয় বা হবে, এরকম যেন আমরা ভাবিই না। দেশের প্রকাশক, লেখক সবাই যেন অনেকটা অন্ধের দেশের আয়না বিক্রির মত সংগ্রাম করে চলেছি। মুখে বলছি আমরা প্রফেশনাল। কিন্তু সেটা অহংকারের প্রফেশনাল, উদারতার নয়।

একটা নেতিবাচক বলয় আমাদের ঘিরে রেখেছে। আমরা নিজেদের কৃষ্টি, কালচার, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সব ভুলে এখন কেবলই পুঁথিগত বিদ্যায় মগ্ন। নতুনদের অনেকে জানেই না তার দাদার নাম কী? তার বাপ-দাদার বসতি কোথায় ছিল? পাশাপাশি মা-বাবারাও আদর দেয়ার নাম করে সন্তানদের করে তুলছেন ইতিহাস বিমুখ। অনেক ক্ষেত্রে তারা জানেই না তাদের শেকড় কোথায় ছিল। কিন্তু আমরা তো এমন ছিলাম না। তাহলে আমরা কেন এমন হয়ে যাচ্ছি? এই অবস্থার কি পরিবর্তন হবে না?

হবে, অবশ্যই হবে। কারণ, আমরা সর্বদা কাজ করে চলেছি সমাজের মানুষের চোখের এই পর্দা সরিয়ে নিতে। খুব ইচ্ছে করে, সবাইকে পরিবর্তন করে দেই। মানুষগুলোকে স্বশিক্ষিত করে তুলতে সাহায্য করি। হয়তো আজ এই যাত্রায় আমরা কয়জন। কিন্তু হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় প্রথম পদক্ষেপ থেকে। কাজেই আমি বিশ্বাস করি আমরা অন্ধ নই, এই পট্টি সরিয়ে আমরা খুব শীঘ্রই স্বশিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবো।

আপনাকে যদি এখন কোটি টাকা দিয়ে বলি, আপনার হাতটি কেটে আমাকে দিন। আপনি কি দিবেন? আপনাকে যদি আরো কোটি টাকা দিয়ে বলি একটি পা আমাকে দিয়ে দিন, আপনি কি দিবেন? না, দিবেন না। কাজেই আপনি কিন্তু অলরেডি কোটি টাকার অফার ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তার মানে আপনার কোটি টাকার চেয়ে বেশি সম্পত্তির মালিক। সেই সম্পত্তি হচ্ছে আপনি নিজে, আপনার মেধা, আপনার হাত, পা। আপনি সেগুলোকে কাজে লাগান, এগিয়ে যান। বিজয়ী হোন, দেশ ও জাতিকে সম্মানিত করুন।

বাংলাদেশ এই বিজয় বেলায় আপনার থেকে অনেক কিছু আশা করে।

নিয়াজ আহমেদলেখক: নিয়াজ আহমেদ
সিইও, কর্পোরেট আস্ক
ট্রেইনার ও মটিভেশনাল স্পিকার
ইমেইল: [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।