ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

‘অস্বস্তিমূলক স্বস্তির বাজেট’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৬
‘অস্বস্তিমূলক স্বস্তির বাজেট’

ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘অস্বস্তি মূলক স্বস্তির বাজেট’ বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ জনগণের জন্য সরকারের এই বাজেট ‘অস্বস্তিমূলক স্বস্তির বাজেট’।

শুক্রবার (জুন ০৩) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭ সিপিডির পযালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ঐতিহাসিক, বিশাল ও সাহসী বাজেট বলে মনে করেন অনেকেই, বাস্তবে সেরকম নয়। টাকার অঙ্কে বাজেটের আকার বড় হয়েছে কিন্তু দেশের অর্থনীতির তথা জিডিপির তুলনায় বাড়েনি। এই বাজেট জিডিপির ১৪ শতাংশ। যা বাস্তবে শতাংশের আকার ১৭ থেকে ২১ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারতো।

বাজেটে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেসব পরিকল্পনার সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, পরিকল্পনা ঠিক আছে কিন্তু বাজেটের আয় ও ব্যয়ের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, বাস্তবে এই তীর ও ধনুকের (আয় ও ব্যয়) লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সাধারণত বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে উন্নয়ন ব্যয় বাড়নো দরকার। কিন্তু আমাদের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে অনুন্নয়ন ব্যয় তুলনামূলক অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি লক্ষ্য করা গেছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় বেশি বরাদ্দ রাখা দরকার বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কারণে এবারের বাজেট প্রণয়ন তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়েছে। তাই সরকার বাজেট বড় করতে পেরেছে। তবে বাজেটে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ, নতুন কর্মসংস্থান তৈরিসহ অনেক খাতের জন্য ইতিবাচক পরিকল্পনা অনুপস্থিত থাকায় বাজেট বাস্তবায়ন কষ্টস্বাধ্য হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ স্থবির থাকার পরও প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বেসরকারি খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ বাড়াতে হবে ৮০ হাজার কোটি টাকা। যা বাস্তবে সম্ভব হবে না। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে মন্দা চলছে। এই মন্দা বাজারে ১৩ হাজার কোটি টাকা এবং ব্যাংক খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। এই টাকা বিনিয়োগের আগে পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাতের লুপটাট বন্ধ করতে হবে। নিয়ম নীতি ঠিক করে তারপর বিনিয়োগ করা যেতে পারে, তা না হলে করের এই টাকা লুট হয়ে যাবে।

কর আহরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে দেবপ্রিয় বলেন, সরকারের যে কর আহরণ নীতি রয়েছে তার পরিবর্তন করতে হবে। নতুন করে করের আওতা বাড়াতে হবে। পুরনো ব্যক্তিদের ওপর চাপানো বোঝা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

কালো টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, সাংধানিকভাবে কালো টাকা তথা অপ্রদর্শিত আয়ের যে বিধান রয়েছে তা আমরা সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি। কিন্তু এই টাকা দেশের অর্থনীতিতে আনতে কেবল অর্থদণ্ড নিয়ে আবাসন খাতে বিনিয়োগের যে বিধান রাখা হয়েছে তার সঙ্গেও আমরা একমত। তবে আবাসন খাতের পাশাপাশি শিল্প খাতেও শর্তসাপেক্ষে কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা রাখা যেতে পারে। কারণ দেশের শিল্প খাতের অবদান এখন শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই এ খাতের অবদান দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় সিপিডির নিবার্হী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান সহ সিপিডির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মোটামুটি স্বচ্ছ ও সুন্দর পরিবেশে এবারের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রধানত দুটি দিক রয়েছে, একটি হলো সামগ্রিক অর্থনীতির চালচিত্র। আরেকটি হলো খাতওয়ারি পদক্ষেপ সমূহ।

** বৈদেশিক সাহায্য, এডিপি ও কর আহরণে সমস্যা রয়ে গেছে

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৬
এমএফআই/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।