ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

বাজেটে ‘চমক’

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৫
বাজেটে ‘চমক’

ঢাকা: বৃহস্পতিবার (৪ জুন) জাতীয় সংসদে পেশ হচ্ছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। এ নিয়ে সব মহলে বাড়ছে উৎকণ্ঠা।

সবাই অপেক্ষারত এবারের বাজেটে কি কি থাকছে।

বাজেটের কিছু চমক বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী ‘আভাস’ দিয়েছেন। বেশ কিছু ভিন্নধর্মী চমক থাকছে বলে এনবিআর’র একাধিক সূত্রও জানিয়েছে।

সর্বোচ্চ আকারের বাজেট
২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট দেশের ৪৪তম জাতীয় বাজেট। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের প্রথম ৭৮৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। আর আওয়ামী লীগ সরকার ২৩ বছর পর ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে।

এবারের বাজেটের আকার প্রথম বাজেটের ৩৮১ গুণ বেড়ে দাঁড়াবে ২ লাখ ৯৭ হাজার ১শ’ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে (চলতি) বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ২০ কোটি টাকা।

স্বাধীনতার পর এবারেরটাই সর্বোচ্চ বাজেট।

বাড়ছে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা
আগামী অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩১ শতাংশ। যদিও বিগত বছর ১৯ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে আয়কর ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, ভ্যাট ৬৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা ও শুল্ক ৪৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।

বাজেটে অষ্টম পে-স্কেলের জন্য বরাদ্দ
ঘোষিত অষ্টম পে-স্কেল ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হবে। ১৩ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ লাগবে ১২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।

অতিরিক্ত এ ১২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার আলাদা বরাদ্দ থাকবে। পে-স্কেলে ঘোষিত ১৩ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ থাকছে সর্বমোট ৪২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করের আওতায়
জুলাই মাস থেকে বাস্তবায়িত হলে ১৩ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বোনাস বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

আগামী বাজেটে এ বেতনের সঙ্গে সকল ভাতায় কর আরোপ করা হচ্ছে। যদিও আগে সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ওপর কর দিতেন।

ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর চমক ‘কর্পোরেট ট্যাক্স’
ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে ব্যবসায়িদের দীর্ঘদিনের দাবি কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে চমক থাকছে।

ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের জন্য বাজেটে ‘চমক’ থাকছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ঘোষণা অনুসারে ব্যাংক, বীমায় কর্পোরেট কর না কমলেও ব্যক্তি কর্পোরেট কর কমানো হচ্ছে।

ছিটমহলবাসীর জন্য আলাদা বরাদ্দ
দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার পর বিনিময় হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল। সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টে একটি বিল পাসের মাধ্যমে এর দ্বার খুলে যায়।

বাংলাদেশের ভেতর ভারতের ১১১টি ছিটমহল ও ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার।

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতে ছিটমহলবাসীর অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে একটি ‘উল্লেখযোগ্য’ অংশ বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে বিশেষ প্রণোদনা
দেশের অভ্যন্তরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে বিশেষ প্রণোদনা (নির্দেশনা থাকবে) ও কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হবে আগামী অর্থবছরে।

ডেভেলপাররা ১০ বছর সম্পূর্ণ ও ১২তম বছরে ৭০ শতাংশ এবং বিনিয়োগকারী প্রথম ৩ বছর সম্পূর্ণ ও পরবর্তী বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে কর অবকাশ সুবিধা পাবেন।

চলতি অর্থবছর সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে শিল্প স্থাপনে ১০-২০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৩৬টি খাত এ সুবিধা পাচ্ছে।

সব উপজেলা কর অফিস
দেশের সব মানুষকে ‘ন্যূনতম’ করের আওতায় আনতে দেশের সব উপজেলায় (৪৮৮টি) কর অফিস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এতে করযোগ্য সব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান করের আওতায় চলে আসবে। আগামী অর্থবছরে কর অফিস স্থাপন বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকছে।

বর্তমানে ৬২ উপজেলায় কর অফিস রয়েছে। তবে এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন এ উদ্যোগ নিলেও পরে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

গাড়ি ও টায়ার নির্মাণ কারখানায় কর অবকাশ
দেশে শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে উদ্যোক্তাদের উৎস প্রদানে প্রথমবারের মতো কর অবকাশ দেওয়া হচ্ছে গাড়ি ও টায়ার নির্মাণ কারখানাকে।

আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এ ঘোষণা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ার সহযোগিতায় পিএইচপি গ্রুপ চট্টগ্রামে ‘সিডান কার’ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে।

বাংলাদেশে টায়ারের চাহিদা প্রতি বছর ৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাজী গ্রুপ, মেঘনাসহ বেশ কয়েকটি দেশি কোম্পানি টায়ার উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছে।

সিগারেটে একস্তরের মূল্যস্তর
বর্তমানে সিগারেটে চারটি মূল্যস্তর (স্ল্যাব) রয়েছে। এর ফলে রাজস্ব ফাঁকি বেড়ে যায়। বাজেটে সিগারেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আদায়ে মূল্যস্তর একস্তর করা হচ্ছে।

সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি ও সিগারেট কোম্পানির কর বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ধোঁয়াহীন তামাকেও কর দ্বিগুণ বাড়ছে।

কর বাড়ছে
পোল্ট্রি ও মৎস্য খাতে আয়ের ওপর বাড়ছে কর। তৈরি পোশাক রফতানির ওপর কর ০.৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ হচ্ছে।

ব্যক্তি শ্রেণীর ন্যূনতম করহার ৪ হাজার টাকা ও ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

বাড়ছে মহিলা, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়সীমা। কর অব্যাহতি পেতে পারে সিনিয়র সিটিজেনরা। বাড়ানো হচ্ছে সারচার্জ (সম্পদের জরিমানা)।

৮টি খাতে উৎসে কর বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর করারোপ, সিম কর বৃদ্ধি ও মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর বাড়ছে সারচার্জ।

চাল, গম, আটা, ময়দা, চিনি, ভুট্টাসহ প্রায় ১৮-২০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর বসছে অগ্রিম আয়কর। অগ্রিম আয়কর বাড়ছে মোবাইল আমদানির ওপর।

২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা বিনিয়োগের বিধান বহাল থাকছে।

নতুন প্রস্তাব থাকবে
শিশুদের উন্নয়নে থাকছে আলাদা বাজেট। সব পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো, করদাতা বাড়ানোর নির্দেশনা থাকছে। রিকন্ডিশান হাইব্রিড গাড়ির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকছে না।

২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন ভ্যাট আইন। এ আইন কার্যকর বিষয়ে বাজেটে দিক নির্দেশনা থাকছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৫
আরইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।