ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

বই বিক্রিতে রেকর্ড, ছাড়িয়েছে ৬৫ কোটি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
বই বিক্রিতে রেকর্ড, ছাড়িয়েছে ৬৫ কোটি একুশে বইমেলার সমাপনী দিনে লেখক-পাঠক-ক্রেতার ভিড়/ছবি:বাদল-বাংলানিউজ

ঢাকা: মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা নামলো মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায়। শেষ হলো প্রাণের বইমেলা। মাসব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের বইমেলায় লেখক-পাঠক-ক্রেতার যেমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো, তেমন বই বিক্রিও ছিলো সন্তোষজনক। সবমিলিয়ে এবার বই বিক্রি হয়েছে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার। যা মেলার ইতিহাসে রেকর্ড।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৭ এর পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ জানান, স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের (২৮ ফেব্রুয়ারি) সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায়, এবার বইমেলায় মোট ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ কমিশন দিয়ে বাংলা একাডেমি ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩শ ৬ টাকার বই বিক্রি করেছে।

২০১৬ সালের তুলনায় বিক্রি ২২ লাখ টাকা বেশি। ২০১৬ সালে সমগ্র মেলায় ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল।

নতুন বই ও মোড়ক উন্মোচন
এবার শেষদিন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬শ ৪৬টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ হয়েছে কবিতার। এবার মোড়ক উন্মোচনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মোড়ক উন্মোচন’ মঞ্চ স্থাপন ও ১০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি ধার্য করা হয়। এবার মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে মোট ৮৬৭টি নতুন বইয়ের।
 
উদ্বোধন ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলা ফেব্রুয়ারি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মাসব্যাপী গ্রন্থমেলা ও অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬’ প্রাপ্ত লেখকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এছাড়াও মেলার গুণীজনের স্মৃতিতে একাডেমি এবার বইমেলায় চারটি পুরস্কার দিয়েছে। এগুলো হলো- চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার।

সম্মেলনে ৭টি দেশের ২৭ জন বিদেশি লেখক-সাহিত্যিক অংশ নেন। এতে ৬ জন বিশিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবীকে ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন লেখক সম্মাননা-২০১৭’ দেওয়া হয়। মেলার মূলমঞ্চের আলোচনায় ২৩টি প্রবন্ধ পাঠ হয়, ৬০ জন আলোচনা করেন, ২৩ জন লেখক-বুদ্ধিজীবী সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ১৩৮ জন শিল্পী অংশ নেন, ২০টি সংগঠন অনুষ্ঠান পরিবেশন করে, ২টি নাটক মঞ্চস্থ হয়। দেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা নৃত্য-গীত-সংগীত ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। সব মিলে একটি অপূর্ব সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আবহ তৈরি হয়।
 
বইমেলায় পাঠক-ক্রেতার ভিড়/ছবি: বাংলানিউজরেকর্ডসংখ্যক স্টল
এবার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে রেকর্ডসংখ্যক অর্থাৎ ৪১১টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৭ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৩টি প্রতিষ্ঠান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পায় প্যাভিলিয়ন। বাংলা একাডেমির দু’টি প্যাভিলিয়ন ছিল। মেলায় শিশুদের জন্য ৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৬১টি ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। শিশুদের চিত্ত-বিনোদনের ব্যবস্থা ছিলো। এছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা, সংগীত ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি।
 
লিটলম্যাগ চত্বর
১০০টি লিটল ম্যাগাজিনকে একাডেমির বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে লিটলম্যাগ চত্বরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এবার যে লিটলম্যাগের নামে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রত্যেকে কেবল সেই লিটলম্যাগ প্রদর্শন ও বিক্রি করবেন- এই শর্ত আরোপ করা হয়েছিল।
 
উৎসর্গ
১২ জন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও লেখকের নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২টি চত্বর উৎসর্গ করা হয়। এরা হলেন- সৈয়দ শামসুল হক, শওকত ওসমান, রফিক আজাদ, শহীদ কাদরী, আব্দুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন, সরদার জয়েনউদদীন, নূরজাহান বেগম, আহসান হাবীব, আব্দুল গফুর হালী, মদনমোহন তর্কালংকার, আমীর হোসেন চৌধুরী ও দীনেশচন্দ্র সেন। এছাড়া বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ উৎসর্গ করা হয় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর/ছবি: বাংলানিউজমেলায় নতুন সংযোজন
আঙ্গিক সৌন্দর্য ও সামগ্রিক পরিকল্পনায় কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে পূর্বদিকের চেয়ে পশ্চিমদিকে বেশি স্টলের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে মেলা বড় রাস্তার আরও কাছাকাছি আসে। ৮০ হাজার বর্গফুট জায়গায় ইট বিছানো হয়। বৃষ্টির কারণে যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য স্টলে ত্রিপলের বদলে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়। নতুন বই প্রদর্শনের জন্য এবার নতুন বইয়ের স্টল বানানো হয়। টিএসসি ও দোয়েল চত্বরে দু’টি এলইডি মনিটরে মেলা সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করে একাডেমি। এছাড়া শিশু কর্নারে ‘মাতৃদুগ্ধ সেবাকেন্দ্র’ ছিলো।
 
নীতিমালা ভঙ্গের জন্য ১৯টি স্টল চিহ্নিত
মেলার নীতিমালা লঙ্ঘন করায় টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে ১০টির বিরুদ্ধে নীতিমালার ৬.১ ধারা অর্থ্যাৎ, বিদেশি বই বিক্রি ও ৯টির বিরুদ্ধে নীতিমালার ১৩.১৩ ও ১৩.১৪ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে।
 
অভিযোগ
গ্রন্থমেলায় বইয়ের দাম বেশি বলে অসন্তোষ রয়েছে পাঠকদের। বইয়ের দাম এতো বেশি হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকে না। যদিও বাংলা একাডেমি আগামী বছর আরও বেশি সুচিন্তিত মানদণ্ড প্রয়োগের চিন্তা করছে। এছাড়া তরুণ লেখকরা উপযুক্ত সম্মানী বা রয়্যালিটি পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত কয়েকজন জনপ্রিয় লেখক ছাড়া বাকি অনেকেই রয়্যালিটি পান না।
 
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. ইব্রাহীম হোসেন খান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ মাসব্যাপী আয়োজনের প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
ইইউডি/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।