ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

শিশু প্রহরে আনন্দের ছড়াছড়ি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
শিশু প্রহরে আনন্দের ছড়াছড়ি শিশু প্রহরে আনন্দের ছড়াছড়ি/ছবি: রানা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: মেলায় আনন্দের ছড়াছড়ি। বই কেনার আনন্দ, বই উপহার পাওয়ার আনন্দ, বই উপহার দেওয়ার আনন্দ, ঘোরাঘুরির আনন্দ, সেলফি তোলার আনন্দ, আড্ডা ও গল্প-গুজবের আনন্দ!

তবে সব আনন্দ ছাপিয়ে যে আনন্দ সব চেয়ে বেশি মুগ্ধতা ছড়ায়, চারদিক নির্মল অনুভূতি শিহরণ জাগায়, সবার মধ্যে অপার্থিব সুখ ছড়িয়ে দেয়-সেটা হলো শিশুদের উপস্থিতি।

স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসা ছোট ছোট শিশুদের হাসি, উল্লাস, দৌড়াদৌড়ি, খুনসুটি, আবদার, মান-অভিমান, বড়দের সঙ্গে আঁড়ি, ঝগড়া, কান্না, লাফালাফি-সব কিছুর মধ্যে যে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়, তা অন্য সব আনন্দকে ম্লান করে দেয়।


পছন্দের বই পড়ায় ব্যস্ত শিশুরা/ছবি: বাংলানিউজএ দিকটা মাথায় রেখেই হয়তো অমর একুশে গ্রন্থমেলা কর্তৃপক্ষ সপ্তার দুই দিন শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শুধু শিশুদের জন্য মেলার সময় বরাদ্দ রেখেছে। আর এ সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন অভিভাবকরা।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ছিলো এবারের গ্রন্থমেলার পঞ্চম শিশু প্রহর। এর পর আর মাত্র তিনটি শিশু প্রহর পাওয়া যাবে এবারের মেলায়। সঙ্গত কারণেই আজকের শিশু প্রহরে শিশুদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

সকাল ১১টায় প্রবেশ দ্বার খোলার পর মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। প্রায় প্রত্যেক অভিভাবকের সঙ্গে একজন/দুইজন করে শিশু।

গত কয়েক বছর ধরে বই কেনার আনন্দের সঙ্গে শিশুদের জন্য যোগ হয়েছে সিসিমপুর। শিশু প্রহরগুলোতে মেলায় আসা শিশুরা এ সিসিমপুর নিয়েই মেতে আছে। শুক্রবার মেলার দ্বার খোলার সঙ্গে সঙ্গে শিশু চত্বরে সিসিমপুর মঞ্চে শুরু হয় বাচ্চাদের আনন্দ-উল্লাস।
ব্রাকগ্রাউন্ড সঙ্গীতের সঙ্গে নেচে নেচে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করছে শিশুরা/ছবি: বাংলানিউজ
ব্রাকগ্রাউন্ড সঙ্গীতের সঙ্গে নেচে নেচে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করে তারা। শিশু চত্বরে বটগাছ ঘিরে তৈরি ছোট্ট মঞ্চে সব শিশুর জায়াগার সংকুলান হওয়া দুরুহ ব্যাপার। তবে সচেতন অভিভাবকরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজের বাচ্চাকে মঞ্চে নাচিয়ে নামিয়ে আনছেন। সুযোগ করে দিচ্ছেন অন্য বাচ্চাদের।

মেলায় আসা সব বাচ্চাই যে শুধু আনন্দ উপভোগে মত্ত, তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো বাচ্চা বই’র প্রতিও ভালোবাসা অনুভব করছে। পছন্দের বই পেতে তারা উদগ্রীব।

সুদূর মানিকগঞ্জ থেকে মেলায় আসা ১১ বছর বয়সী বিস্ময় মুগ্ধ’র কথা শুনে রীতিমত বিস্মিত হওয়ার উপক্রম। পঞ্চম শ্রেণির মুগ্ধ কিনতে চায় মহাকাশ বিষয়ক বই!

মহাকাশ বিষয়ক বই কেন? মহাকাশ নিয়ে পড়তে ভালো লাগে, তাই মহাকাশ বিষয়ক বই কিনতে চাই। সায়েন্স ফিকশনে মহাকাশ পাওয়া যাবে। সেই বই খুঁজছি।
মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা/বাংলানিউজমুগ্ধ’র মামা বিপ্লব সরকার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ৪ বছর বয়সী মেয়ে অঙ্কিতা সরকারকে কোলে করে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পড়ার প্রতি ওদের খুব ঝোঁক। সারা বছরই বই কেনা হয় ওদের জন্য। তবে মেলায় শুধু বই কেনার জন্য নয়, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই বাচ্চাদের মেলায় নিয়ে আসা।

মেলার ফোয়ারার কাছে পৌঁছেই ৭ বছর বয়সী দিয়ান মঞ্জুর বলে উঠল ‘ওয়াও’; এত্তো সুন্দর! ঘূর্ণ‍ায়মান ফোয়ারা থেকে নানা মাত্রায় ছড়িয়ে পড়া জলকণায় মুগ্ধ দিয়ান। মোহম্মদপুর থেকে বাবা মঞ্জুর আলমের সঙ্গে মেলায় আসায় দিয়ান বাংলানিউজকে জানায়, ভুতের বই কিনবে সে। তবে জীবনে কোনো দিন ভূত দেখা হয়নি তার।

নালন্দার ছাত্র অনুপম দিব্যও ভূতের বই কেনার জন্য এসছে। অনেকগুলো বই কিনবে সে। তার আগে ফোয়ারা, সিসিমপুর মঞ্চ, মেলার অস্থায়ী ফুলের বাগানে বাবার সঙ্গে ছবি তোলার কাজটি সেরে নিতে চায় অনুপম দিব্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
এজেড/ওএইচ/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।