ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

হুমায়ূন আহমেদের নামে ফেসবুকে অশ্লীলতা, ভক্তদের ক্ষোভ

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
হুমায়ূন আহমেদের নামে ফেসবুকে অশ্লীলতা, ভক্তদের ক্ষোভ

ঢাকা: নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে ছড়ানো হচ্ছে অশ্লীলতা। এতে কষ্ট পাচ্ছেন, ক্ষুব্ধ হচ্ছেন লেখকের ভক্তরা।



‘অফিসিয়াল পেজ’ দাবিকারী পেজটির প্রোফাইল পিকচারে ব্লু সাইনও দেখা গেছে। ফেসবুক ভেরিফায়েড ধরে নিয়ে হুমায়ূনের অফিসিয়াল আইডি হিসেবেই এতে ‘লাইক’ দিচ্ছেন ভক্তরা। এভাবে প্রতিদিন দ্রুতহারে বাড়ছে পেজের ফলোয়ার সংখ্যা।

ফেব্রুয়ারির পুরো মাসজুড়ে বইমেলা চললেও পেজটিতে সে সম্পর্কিত কোনো পোস্ট দেখা যায়নি। তার কোনো বই, চলচ্চিত্র, নাটক নিয়ে নেই তথ্যমূলক কিছুই।

প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত, এ পেজটি পছন্দ করেছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ১৮৯ জন। কভার ফটোতে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে তার বিয়ের একটি ছবি দেওয়া হয়েছে। আইডি’র অ্যাবাউটে গিয়ে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের অক্টোবরে পেজটির কার্যক্রম শুরু। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডির।

লেখককে নিয়ে তেমন সম্মানজনক বা ভক্তদের পছন্দের কিছু পাওয়া গেলো না পেজটিতে। অখ্যাত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের অতি অশ্লীল কিছু পোস্ট একের পর এক শেয়ার দেওয়া হয়েছে পেজে।

ভক্তদের সন্দেহ, যে অনলাইন পোর্টালের লিংক দেওয়া হচ্ছে, সে পোর্টালের কর্তৃপক্ষই এ কুরুচিপূর্ণ কাজে জড়িত। কারণটিও অনেকের কাছে সহজে অনুমেয়, হুমায়ূন আহমেদের পেজ ভেবে এখানে লাইক দিয়ে এসব লিংক পাওয়া যাবে, অনেকেই ক্লিক করবেন। আর এভাবেই কুরুচিপূর্ণ পোর্টালটির হিট বাড়বে।

সরল মনে এ পেজে যারা লাইক দিয়েছেন, তারা বিব্রত হচ্ছেন এমন সব পোস্ট দেখে। বিভিন্ন পোস্টের মন্তব্যগুলোতে অনেকের প্রতিবাদ চোখে পড়েছে।

অশ্লীল পোস্টগুলো দেখে হুমায়ূনের ভক্তরা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন, অ্যাডমিনকে গালমন্দ করছেন। কেউ কেউ ‘আনফলো’ করছেন। তারা বলছেন, অন্তত হুমায়ূন আহমেদের নামে পেজ খুলে এমন পোস্ট দিয়ে লাইক বাগানোর ধান্দা যেন না করা হয়।

কেউ কেউ শঙ্কিত কমবয়সীদের নিয়ে। অনেক অপ্রাপ্তবয়স্কই এ পেজের ফলোয়ার। তাই সহজেই তারা এ পোস্টগুলো পাচ্ছেন।

কিন্তু শত প্রতিবাদ, গালিতেও ভ্রুক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের। যেসব পোস্ট দেওয়া হয়েছে, সেগুলো এতটাই আপত্তিকর যে, এগুলোর অনেকটার স্ক্রিনশট নিউজের সঙ্গে দেওয়াও সম্ভব নয়।

ব্লু সাইন নিয়ে বাংলায় ‘হুমায়ূন আহমেদ’ লেখা এ পেজ যেমন রয়েছে, পাশাপাশি ব্লু সাইন নিয়ে রয়েছে ইংরেজিতে ‘হুমায়ূন আহমেদ’ লেখা অপর একটি পেজ। সেটিতেও অফিসিয়াল পেজ হিসেবে ব্লু সাইন দেখে ভক্তরা ফেসবুক ভেরিফায়েড হিসেবে ধরে নিয়েছেন। অবশ্য এ আইডি থেকে দেওয়া পোস্টগুলো অপেক্ষাকৃত সঙ্গত দেখা গেছে।

এই পেজটিতে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন ও তাদের সন্তানদের ছবি দেওয়া রয়েছে। হুমায়ূনের বিভিন্ন উক্তি, তার স্ত্রী-সন্তানদের ছবি, গুলতেকিনের কবিতার বই, ভক্তদের পাঠানো হুমায়ূন আহমেদ সংশ্লিষ্ট ছবিসহ সঙ্গত পোস্ট রয়েছে এ পেজে।

২০০৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে এ পেজটিতে পোস্ট হচ্ছে। হুমায়ূন আহমেদের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজ ভেবে এটিকে ‘লাইক’ করেছেন এক লাখ ২৮ হাজার ১১ জন (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত)। বলাই বাহুল্য, দু’টি পেজের জন্মের মধ্যে ৬ বছরের ব্যবধান থাকলেও ফলোয়ার বেশি পেয়েছে অশ্লীল পেজটি।

এছাড়া তার নামে খুঁজে পাওয়া গেছে আরও বেশ কয়েকটি পেজের সন্ধান। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত, এগুলোর ফলোয়ার পাওয়া গেছে ক্রমান্বয়ে, দুই লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৬ (সেখানেও নেই উল্লেখযোগ্য কোনো পোস্ট), তিন লাখ তিন হাজার ৮৮৩, ৬৮ হাজার ৪২৯, সাত লাখ ৮৩ হাজার ১৬৪, তিন হাজার ৭৯৩, ১৭ হাজার ৬৭৯, নতুন একটিতে এক হাজার ১৮৩। এছাড়া তার নামে পাওয়া গেলো একটি ক্লোজড গ্রুপ, যার সদস্য সংখ্যা ৮০৯।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৬ চলাকালে এ বিষয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন হুমায়ূন ভক্তের সঙ্গে। মেলার প্রথম ছুটির দিনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র-ছাত্রী ঘুরে ঘুরে হুমায়ূন আহমেদের বেশ ক’টি বই কিনছিলেন।

আলোচনায় প্রসঙ্গটি টেনে আনতেই হৈ হৈ করে ওঠেন তারা। তন্ময় ভৌমিক বলেন, খুব অবাক ব্যাপার। এমন কাণ্ড করে চলেছে পেজটি। হুমায়ূন আহমেদের নাম বেচে এভাবে ফালতু কাজ করে যাচ্ছে, অথচ কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। ব্লু সাইন দেখে মানুষ ভরসা করে পেজে লাইক দিচ্ছে। কিন্তু পাচ্ছে কী? এমন একজন লেখকের নামটি এভাবে না পচালেই কি নয়?

তার বন্ধু প্রদীপ কুমার বলেন, হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্য, স্বজন, কাছের মানুষরা এ বিষয়ে কিছু করছেন না কেন জানি না। কোনো ব্যবস্থা না নিলে আসলে প্রত্যেকেই হুমায়ূনের এ অপমানের জন্য দায়ী থাকবেন। ভক্তরাও এ দায় এড়াতে পারেন না। একজন সম্মানিত মানুষকে নিয়ে এমন ধান্দাবাজির কোনো মানে হয় না।

সবাই পেজটির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে, ব্লক করে, যেভাবেই সম্ভব একটা ব্যবস্থা নিতে পারেন। এছাড়া বিটিআরসি’র নজরদারি যদি সত্যিই থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে তাদেরও উচিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া, বলেন প্রদীপ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেছেন সাবিহা ফারজানা মুনমুন। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ আমাদের অহংকার। শুনেছি, মেহের আফরোজ শাওন বইমেলায় হুমায়ূনের বই সংক্রান্ত কোনো এক অনিয়ম নিয়ে মামলায় পর্যন্ত গিয়েছেন। এমন আপত্তিকর পেজের ক্ষেত্রেও তেমন কোনো উদ্যোগ তার কাছ থেকে আশা করবো।

শুধু তাই নয়, ভালোভাবে উদ্যোগ নিয়ে তার নামে ফেসবুক আইডি করা যেতে পারে। এটা করা হলে কোটি ভক্তকে ফেসবুকে তার সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন। এছাড়া এ উদ্যোগ নিলে ভক্তরা এ পেজে নিজেদের মধ্যে হুমায়ূন সম্পর্কে নানা কিছু শেয়ার করতে পারবেন, বলেন মুনমুন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
এসকেএস/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।