ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

দু’হাত ভরে বই নিয়ে ফেরা

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
দু’হাত ভরে বই নিয়ে ফেরা ছবি: দীপু/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: মো. শাহাদাত হোসেনের বয়স ৭৩ বছর। মেলায় ঘুরছেন, ফিরছেন আর ক্লান্তিহীনভাবে বই কিনছেন।

প্রশ্ন করতেই একটু খ্যাপাটে সুরে বললেন, ‘বয়স হয়েছে বলে কি জ্ঞান অর্জন করতে মানা, নাকি বুড়ো হলে পড়তে নেই। ’ 

পরে অবশ্য নরম সুরে বললেন, যখন সার্ভিস করেছি (কর্মজীবন) তখনও সময় করে নিয়মিত বই পড়েছি। আর এখন তো বিরাট অবসর। বই এবং ধর্মকর্মই হলো একমাত্র সঙ্গী।

আশুলিয়া থেকে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তার মেলায় আসা। সঙ্গে বড়সড় তালিকা। তা দেখে দেখেই কিনছেন বই। যাচ্ছেন এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। জানালেন, পেনশনের অর্থ থেকে টাকা বাঁচিয়ে যা জমেছে তাই দিয়ে কিনছেন বই। রাজনীতি ও প্রবন্ধের বইয়ে আগ্রহ বেশি তার।

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে কথা বলে ফেরার পথে কাস্টমস অফিসার মো. বাতেনের সঙ্গে দেখা। দু’হাত ভরা বই তার। হাজার তিনেক টাকা ভেঙেছেন এখন পর্যন্ত। জানালেন, ট্রেনিং করতে ঢাকায় এসে সুযোগ বুঝে মেলায় চলে আসা। বইগুলো সারা বছর ভরে পড়বেন।

‘সব কিছুর একটা উৎসব থাকে, মেলা হলো বইয়ের উৎসব’, যোগ করেন বাতেন।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সহকারী কমিশনার জামিলা শবনমের সঙ্গে কথা বলতে বলতে জানা গেলো, এক বই পাগল স্বামী-স্ত্রীর খুনসুঁটির গল্প। জামিলার স্বামী ব্যাংকার, নাম মো. শামীম রহমান। মেলা শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেই ছুটে চলে আসা তাদের। সঙ্গে তিন বছরের কন্যা মাশফিয়া।

জামিলা শবনম জানালেন, বাচ্চাটার জন্য কিছু গল্পের বই নেবো। আর নিজের ও স্বামীর জন্য উপন্যাস। অবসরে আমরা দু’জনেই পড়তে ভালোবাসি। একজন জোরে জোরে পড়লে আরেকজনের শোনা হয়ে যায়। এভাবেই শেষ করি একের পর এক মোটা মোটা উপন্যাস-গল্প। আর মেয়েটা তো ছোট; পড়তে পারে না, ওকে পড়ে পড়ে শোনাই।

রাজধানীর এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে মেলায় আসেন শাহ ইমন, সাঈদ ও মাহাবুব। তিনজনই মাদ্রাসায় উচ্চতর পড়াশোনা শেষ করেছেন। শাহ ইমন বলেন, গল্প-উপন্যাস-সাহিত্য এসবের পাঠক শ্রেণী আলাদা তা ভাবা ঠিক নয়। বই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকদের যেমন টানে ঠিক তেমনি মাদ্রাসা বা ইসলামী ঘরানার পাঠকদেরও টানে। এখানে দৃষ্টিভঙ্গিটাই হচ্ছে বড় বিষয়।

পাশে থাকা সাঈদ বলেন, বইমেলা মিলনের, প্রাণের- এ কথাগুলো আমরা প্রায়ই বলি। এই মিলন সমাজের প্রতিটি শ্রেণীকে এক করে, এর গুরুত্ব আমাদের সমাজে ব্যাপক। দেশ গঠনে এমন চেতনা আমাদের কাজে লাগানো উচিত।

তারা জানালেন, মোট ৭ হাজার টাকার বই কিনে ফেলেছেন। ইচ্ছে আছে শেষ দিন আবার এসে বই কেনার।  

মেলার শেষ ছুটির দিন শনিবার। ২৭তম দিনের মেলা কেমন জমে উঠলো জানতে চাইলে তাম্রলিপি প্রকাশনীর এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনি বাংলানিউজকে বলেন, মেলা এবার দারুণ জমেছে। গতকাল শুক্র এবং আজ শনিবার বিক্রির হার যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এখন যারাই দর্শনার্থী তারাই ক্রেতা।

তিনি বলেন, মেলায় এবার বেশ কিছু বই ভালো কাটতিতে আছে। নতুন প্রকাশিত অন্তত ২০টি বইকে এ তালিকায় আনা যায়। যার মধ্যে আমাদের তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত জাফর ইকবালের ক্রেনিয়াল অন্যতম। ক্রেনিয়ালকে এবারের মেলার সর্বাধিক বিক্রিত বই বলা যায় এবং আসলেই তাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
আইএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।