ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

জুয়েল মাজহারের অনুবাদে বিশ্বকবিতার বাংলা সংকলন

তানিম কবির, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
জুয়েল মাজহারের অনুবাদে বিশ্বকবিতার বাংলা সংকলন

বইমেলা থেকে: জুয়েল মাজহার সাম্প্রতিক বাংলা কবিতার এক বিশিষ্ট নাম। কবিতা যেমন, তেমনি স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত তার কবিতা-অনুবাদ।

তার অনুবাদে হাইনরিশ হাইনে, ম্যাথু আরনল্ড, ডব্লু  বি ইয়েটস, এজরা পাউন্ড, টি এস এলিয়ট, টোমাস ট্রান্সট্রোমার, ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা, সি পি কাতাফি, আন্না আখ্‌মাতোভা, আদুনিসসহ বিশ্বকবিতার সম্রাটদের উজ্জ্বল কবিতাগুলো মূলের স্পন্দন ও গরিমা, আনন্দ ও বিষাদ-মধুরতা, সম্পূর্ণ লাবণ্যসহ উঠে এসেছে বাংলা ভাষায়।
 
বইমেলার শেষ সপ্তাহে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চৈতন্য থেকে প্রকাশিত হলো জুয়েল মাজহারের অনুবাদে ২০০ বিশ্বকবিতার অনুবাদ-বই ‘দূরের হাওয়া’। এটি তার দ্বিতীয় অনুবাদ-বই।

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ১৫৬ নম্বর স্টল এবং লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের ৫২ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। বইটির মূল্য ৪৮০ টাকা।

এর আগে ২০১২ সালে জুয়েল মাজহারের অনুবাদে শুদ্ধস্বর থেকে বেরিয়েছিল টমাস ট্রান্সট্রোমারের বাছাই করা কবিতার সংকলন ‘কবিতার ট্রান্সট্রোমার’। এছাড়া প্রকাশিত জুয়েল মাজহারের তিনটি মৌলিক কবিতার বই হলো—দর্জিঘরে একরাত, মেগাস্থিনিসের হাসি ও দিওয়ানা জিকির। সব মিলিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি।

পাঁচ হাজার শব্দের দীর্ঘ ভূমিকাসহ ৩৫০ পৃষ্ঠার ‘দূরের হাওয়া’ বইয়ে আছে প্রাচীন থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত নির্বাচিত মোট ৫৩ জন কবির কবিতা। প্রত্যেক কবির বিস্তারিত পরিচিতিও দেওয়া হয়েছে বইয়ে। উৎস কবিতার আঙ্গিক ও কাঠামোর অন্তর সৌন্দর্যসহ অনূদিত হয়েছে কবিতাগুলো। অনুবাদটি হয়ে ওঠার পর একেকটি যেন হয়ে উঠেছে বাংলা কবিতা। জুয়েল মাজহারের অনুবাদ মূলানুগ, তবে আক্ষরিক নয়। নিছক ভাষান্তর নয়, বরং এক অন্তরভাষ্য তার এসব অনুবাদ।
 
অনুবাদ কর্ম তার মতে, ‘নানা ভাষার অলিন্দে উঁকি দেবারই এক সুযোগ, যা এক অপরিসীম দীর্ঘ ভ্রমণের, এক অন্তহীন অডিসিরই অন্য নাম। একটি ভাষার কবিতাকে নানা ভাষার কবিতা করে তোলার উদ্যমের অপর নাম অনুবাদ’।
 
নিজে আপনি কবি, বিশ্বকবিতার অনুবাদ কবে থেকে করছেন? শুরুটা কিভাবে? জানতে চাইলে জুয়েল মাজহার বলেন, ‘আজ থেকে তিন দশক আগে ১৯৮২/৮৩ সালে ইংরেজি কবিতা পড়ে সেসবকে বাংলাভাষায় গ্রেফতার করবার বাসনা জেগেছিল মনে। তখন ভালোমতো না জানতাম ইংরেজি, না জানতাম বাংলা (এখনো সেভাবে জানি না)। তাঁতির ফার্সি পড়ার খায়েস তবু তাতে কমেনি, দিনে দিনে তা বেড়েছে কেবল। ‘মোগল-পাঠান হদ্দ’ হলেও অনুবাদ নামের কাণ্ড-অকাণ্ড চলছেই। পঙ্গুর গিরিলঙ্ঘনের ইচ্ছা হলে কে তাকে থামায়! নিষেধাজ্ঞা যেহেতু নেই, সে সুবাদে এরই মধ্যে নানা দেশ-মহাদেশের আর নানা ভাষার বহুল কবিতা অনুবাদ করে ফেলেছি। অনুমান করি সংখ্যাটা চারশো সাড়ে চারশোর কম হবে না’।
 
প্রথম কোন কবিতাটি অনুবাদ করেছিলেন মনে আছে?
প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল মাজহার বললেন, ‘মনে পড়ে কবিতা অনুবাদে হাত দিয়েছিলাম কাঁচা বয়সে। যে কবিতা দিয়ে শুরু তা ছিল  Ralph Hodgson—‘Time, You Old Gypsy Man’। কবিতাটির প্রথম চারটি চরণ মনে দাগ কেটেছিল খুব:
‘Time, You Old Gypsy Man
Will you not stay,
Put up your caravan
Just for one day?’

আনকোরা সেই অনুবাদ লজ্জায় কাউকে দেখাইও নি। এমনকি বন্ধুদেরও—পাছে ওরা কেউ মুখ টিপে হাসে!’
 
নতুন প্রকাশিত দূরের হাওয়া বইটিতে স্থান পাওয়া ৫৩ জন কবির সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ৫৩ জন প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক কালপরিসরের। প্রাচীন ও আধুনিক গ্রেকো-রোমান কবিতা যেমন আছে এতে, তেমনি আছে বিভিন্ন সময়কালের ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ, রুশ, ইংরেজি, সুইডিশ, আরবি, স্লোভাক ও পোলিশ কবিতা। এই ৫৩ জনের মধ্যে সাফো, ওভিদ, প্রপারতিয়াস, কাভাফি, এলিয়ট, ইয়েটস, হাইনে, বোর্হেস, লোরকা, নেরুদা, ফ্রস্ট, আরনল্ড, কঁকতো, এলুয়ার, ট্রান্সট্রোমার, আদুনিস, কাব্বানি, গ্রাস, পাস, প্লাথ, আখ্‌মাতোভা, হিউজ, ব্লেইক, পাউন্ডসহ যাদের কবিতা নেওয়া হয়েছে, তারা একেকজন বিশ্বকবিতার দিকপাল’।
 
আর কবিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন?
‘যেসব কবিতা বাছাই করা হয়েছে সেসবের একটা বড় অংশ কালোত্তীর্ণ। সেই সঙ্গে নানা কারণে বহুল পঠিত-আলোচিত ও দুনিয়ার প্রায় সকল ভাষায় অনূদিত। ধরা যাক, ম্যাথু আরনল্ডের (Mathew Arnold) ‘ডোভার বিচ’ (Dover Beach) কবিতাটির কথা। প্রায় আড়াইশ’ বছর ধরে আলোচিত এই কবিতা। আলোচক-সমালোচকেরা কোটি কোটি পৃষ্ঠা ব্যয় করেছেন এর পেছনে। আবার ধরুন, এলিয়টের (T S Eliot) ‘জে. আলফ্রেড প্রুফ্রকের প্রেমগান’ (Love Song of J Alfred Prufrock) কবিতাটির কথা (কবিতা হিসেবে যা ঢের বেশি পঠিত-আলোচিত ‘প’ড়ো জমি’ কবিতাটির চেয়ে কাব্যগুণে শ্রেয়তর)। বা, ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার (Federico Garcia Lorca) ‘ইগনাসিও সানচেস মেহিয়াসের জন্য বিলাপ’ ( Lament for Ignacio Sanchez Mejias) নামের কবিতাটির কথা। যতোদূর জানি, স্প্যানিশ ভাষার দীর্ঘতম কবিতা বলে গণ্য করা হয় একে। উল্লেখযোগ্য তালিকায় এরকম আরো কয়েক ডজন কবিতা আছে এই বইতে। সেসব কবিতা বিশ্বকবিতার রথকে এগিয়ে দিয়েছে অনেকখানি সামনের দিকে’।
 
এ বইয়ের কবিতাগুলো কোন সময়ে অনুবাদ করা হয়েছে। জানতে চাইলে জুয়েল মাজহার বলেন, ‘যে ২০০টি কবিতা এই বইয়ে রেখেছি, সেগুলো বিভিন্ন সময়ে করা নিজের ভালো লাগার কারণে এবং নানা প্রণোদনায়। প্রাচীন আধুনিক মধ্যযুগ সবদিকেই হাত বাড়িয়েছি। তারই স্মারক সা’ফো, ওভিদ আর প্রপারতিয়াসের কবিতা। কোনো নির্দিষ্ট ঘরানা, দেশকালে নিজের কবিতারুচিকে বাঁধতে চাইনি কখনো। সবখানেই আমি পেয়েছি অনেক। দেখতে চেয়েছি, হাজার বছর আগে লেখা একটি কবিতা অনেক দূরবর্তী কালে অন্য একটি ভাষায় তুলে আনলে কেমন লাগে, কেমন শোনায় তা। প্রাচীন এই তিন কবি আমাকে ভেতর থেকে রোমাঞ্চিত করেছেন বলেই তাদেরও চেয়েছি তুলে আনতে আজকের পাঠকের কাছ বরাবর—নিজের ভাষায়’।
 
বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী তৌহিন হাসান। ‘দূরের হাওয়া’সহ ঘরে বসে বইমেলার সকল বই পেতে ভিজিট করুন rokomari.com-এ। অথবা কল করুন 16297 নম্বরে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
টিকে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।