ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

পুলিশ বলে কি লুকাতে পারি বইয়ের ভালোবাসা!

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৬
পুলিশ বলে কি লুকাতে পারি বইয়ের ভালোবাসা! ছবি: শাকিল/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দরদাম করে বই কিনে নিচ্ছেন পুলিশ সদস্যা। এ দৃশ্য নজর কাড়ছে অনেকেরই।

কেউ কেউ আড়চোখে দেখে বুঝে নিতে চাইছেন, পুলিশ সদস্যরা কেমন বই পছন্দ করেন। কেমন বইয়ে প্রীতি, তা দেখে যেন মানসিকতা বোঝার চেষ্টা।
 
কর্তব্যের প্রয়োজনে মুখে-চোখে কাঠিণ্য ধরে রাখা পুলিশ সদস্যকে এমন ভূমিকায় দেখার সুযোগ সব সময় হয়তো হবে না। তাই মেলার অষ্টম দিন সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পুলিশ সদস্যা লিপি রাণী বর্মণের বই কেনা দেখছিলেন অন্যরা।
 
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বর্ণপ্রকাশ স্টল থেকে লিপি কিনেছেন ‘জীবনের গল্প’ ও ‘অন্যমনের মানুষ’ নামের দু’টি বই।

ক্রেতা যদিও পুলিশ, তাই বলে কমদামে বই ছাড়ার পাত্রী নন বিক্রেতা মিমি। সবার জন্য সমান দামে বিশ্বাসী মিমি বইগুলো স্বাভাবিক দামেই প্যাকেটে ভরতে দিলেন সহকর্মীকে।
 
বাংলানিউজকে লিপি জানান, মেলায় সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কর্তব্যে ছিলেন তিনি। ডিউটিরত অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে হয় মেলায়। পাহারা দেন সবকিছু। কারও কোনো সমস্যা আছে কি-না দেখছিলেন। সে সুযোগে বিভিন্ন বই নজরে আসে। ডিউটি শেষ করে ফেরার সময় একটি বা দুটি বই কিনে নেন প্রায় দিনই।
 
‘পুলিশ সদস্যদের হাড়ভাঙা খাটুনি থাকে, কোনো কষ্ট থাকলেও বই পড়ে প্রশান্তি পাই’- বলেন লিপি ও তার সহকর্মী শারমিন।
 
বিক্রেতা মিমি বাংলানিউজকে জানান, প্রায়ই পুলিশ সদস্যরা আসেন, বই ঘেঁটে দেখেন। পছন্দ হলে কেনেনও। এ প্রকাশনী থেকে ১০টি নতুন বই এসেছে। মেলার শেষদিকে আরও আসবে বলেও জানালেন তিনি।
 
‘অন্য মনের মানুষ’ উপন্যাসের ফ্ল্যাপে লেখা রয়েছে- ‘এটি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার করুণ কাহিনী ও সমাজের বাস্তবতা, নারী মনের বর্ণনা, চরম ঘৃণিত কাজগুলোর প্রতিকার নিয়ে লেখা’।    
 
আরেকটু এগোলেই সিসিমপুর স্টল। পুলিশ সদস্য তাপস শিশুতোষ বই কিনলেন ২৩৫ টাকার।
 
বাংলানিউজকে জানালেন, তার শিশুসন্তানের আব্দারে এগুলো কিনলেন। ডিউটি শেষ করে ফেরার সময় চকলেট, পুতুল না কিনে তিনি বই কিনতেই পছন্দ করছেন এ ক’টা দিন। এতে সন্তানের বইপ্রীতি বাড়বে বলে মনে করছেন।
 
শুধু পুলিশ সদস্যরাই নন, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের সদস্যরাও বইয়ের ভালোবাসায় মজেছেন।
 
এমনই একজন মবিন। রেজা পাবলিকেশন্সের সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ বই দেখলেন। জানালেন, এখন তার ডিউটি টাইম। এখন টহলের ফাঁকে পছন্দ করে রাখছেন, পরে বাচ্চার জন্য কয়েকটি বই নিয়ে যাবেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই কিনে দিতে চান তিনি আদরের সন্তানকে। বললেন, ‘বই পড়াটা একবার ধরিয়ে দিতে পারলে বাচ্চা নষ্ট হবে না কোনোদিন’।

এবার মেলাজুড়ে কর্তব্যে রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরাও কিনছেন বই। তবে সঙ্গত কারণেই ছবি ও নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।
 
এর আগে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে মেলায় কর্তব্যরত এসআই মামুন ফরাজী বলেন, ‘সবার নিরাপত্তা, বিশেষ করে নারীদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। মেলায় ১ হাজার ৪৫৪ জন ফোর্স কর্তব্যরত। এছাড়া কর্মকর্তারা আছেন অনেকে’।
 
‘প্রায় ১০০ জন নারী সদস্য এখানে কর্তব্যে আছেন। সাদা পোশাকে আছেন ২০ সদস্য। নারী কর্মকর্তারাতো আছেনই’- বলেন মামুন।
 
পুলিশ সদস্যরা জানান, সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা, দুপুর ২টা থেকে রাত ১১টা এবং রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা- এভাবে ৮ ঘণ্টা পরপর শিফট পরিবর্তন হয় তাদের।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
এসকেএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।