ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

দুর্ঘটনা রোধে মেলায় তৎপর ফায়ার সার্ভিস

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৬
দুর্ঘটনা রোধে মেলায় তৎপর ফায়ার সার্ভিস ছবি: দীপু/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ঘুরে: ২০১৩ সালের ভয়াবহতা এখনও নাড়া দেয় অনেককে। মনে করলেই গা শিউরে ওঠে।

সাজানো-গোছানো এক সুন্দর পরিবেশ কী করে এলোমেলো হয়ে যেতে পারে তা সে বছরের অগ্নিকাণ্ডের কথা স্মরণ করলেই বোঝা যায়!

অমর একুশে গ্রন্থমেলায়, প্রাণের মেলায় সেদিন যে প্রাণ ক্ষণিকের জন্য হলেও হারিয়ে দিয়েছিল ‘আগুন’। প্রকাশক-লেখকের চাপা কান্নায় বাংলা একাডেমির বাতাস সে সময় ভারি হয়েছিল!

পাঠকের অসহায় দৃষ্টিতে হারিয়েছিল ভাষা, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা। এখন আরও তৎপর হওয়া। তাই তো অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণজনিত যেকোনো দুর্ঘটনা মোকাবেলায় সতর্ক দৃষ্টি ও অবস্থান।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় কোনো দিক থেকে এবার আর ছাড় নয়, সব সময়ই সতর্ক- এমনটাই জানালেন মেলায় দায়িত্ব পালনকারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান আকন্দ।
 
তার নেতৃত্বে একটি সুবিশাল টিম (ফায়ার সার্ভিস) ২৪ ঘণ্টাই টানা এক মাসের জন্য কাজে নেমে পড়েছে। তাদের অবস্থান বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ময়দানে (অস্থায়ী ক্যাম্পে)। ভাগে ভাগে দিনে-রাতে তারা নিরলস পালন করে যাচ্ছেন অর্পিত দায়িত্ব।
 
গ্রন্থমেলায় পুলিশ কিংবা র‌্যাবের চেয়ে তাদের কর্মযজ্ঞও কম নয়। ফায়ার সার্ভিস ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে চলছে দৈনিক কাজ।

মেলা থেকে বের হওয়া নিষেধ, আশেপাশেই থাকা বাধ্যতামূলক। খাবার আসে প্রধান কার্যালয় গুলিস্তান থেকে তিনবেলা। খান-টহল দেন-ওয়াকিটকিতে যোগাযোগ করতে থাকেন-ঘোরেন-অগ্নি বিষয়ে সচেতন করেন, এই তো রোজকার দায়িত্ব।

বইমেলায় দায়িত্ব পাওয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, রাতে বিদ্যুৎ নিয়েই আমাদের মূল ভয়। অনেক বলা ও অনুরোধের পরও বেশ কিছু স্টলে মালিক-প্রকাশকরা লাইট বা সুইচ অন রেখেই চলে যান। যদিও রাতে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন করা হয়, তবে সুইচ অন থাকায়

কোনো কারণে যদি দুর্ঘটনা হয়, এই ভয় কাজ করে। কারণ বই-কাগজপত্রে আগুন ছড়ায় দ্রুত। যা আমাদের সাধারণ বোধশক্তিতেই বোঝা উচিত।
 
বিগত তিন বছর ধরে মেলায় কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, সৃজনশীল একটি মেলা হলেও আমরা সৃজনশীল বা সচেতনতার প্রকাশ সব সময় ঘটাই না। কোনো দুর্ঘটনা বলে আসে না। গত টানা তিন বছর আমি মেলায় কাজ করে যাচ্ছি-সেই হিসেব থেকে বলছি। সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। নিরাপদ থাকার এটাই মূলমন্ত্র।

ফায়ার সার্ভিস কর্মী (পদ: ফায়ারম্যান) কাজী মামুন বলেন, আমরা মেলায় বাংলা একাডেমি অংশ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে টহল দেই, ঘুরে বেড়াই। মেলার জন্য আমাদের একটি বড় টিম পুরোটা সময় নিয়োজিত। এই এক মাস আমাদের কাজ কেবল মেলায় ঘোরা এবং অগ্নি-দুর্ঘটনা বিষয়ে সচেতনতা আর চারপাশে কড়া নজরদারি।

ফায়ার সার্ভিসের লিডার পদের এক কর্মী আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত সবার সহযোগিতা পাচ্ছি। মেলায় আগতদেরও সচেতন করছি, যাতে তারা নিজ বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে সমস্যায় পড়লে বেরিয়ে আসতে পারেন। মানুষ যত সচেতন হবেন তত দুর্ঘটনা কমবে।

এ বিষয়ে অন্বেষা প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মাদ শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ফায়ার সার্ভিস এবার মেলায় যে উদ্যোগ নিয়েছে তা খুবই প্রশংসনীয়। তাদের একটা বৃহৎ টিম এখানে সব সময় কাজ করছে। আধুনিক প্রযুক্তির সব যন্ত্র নিয়ে তারা মাঠে আছে।

এতে তিনিসহ অন্য প্রকাশকদেরও দুর্ঘটনা বিষয়ক দুশ্চিতা দূর করে স্বস্তি নিশ্চিত হয়েছে বলেও মনে করেন শাহদাত।

মেলায় দায়িত্ব পালনকারী ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, আমি এবং সহকারী পরিচালক বাদে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে বাকি ২৩ সদস্যের টিমে পরিবর্তন আসবে। তখন নতুন করে অন্য ২৩ জন যোগ দেবেন। তারাও এখনকার মতো বাধ্যতামূলক ২৪ ঘণ্টা কাজ করবেন।

তিনি জানান, টিমে আছেন ১৮ জন ফায়ারম্যান। দুইজন লিডার এবং তিনজন ড্রাইভার। সরঞ্জাম হিসেবে তাদের রয়েছে একটি লাইটিং ইউনিট। দু’টি বড় গাড়ি। ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে একটি গাড়িতে ৪৩শ’ লিটার এবং আরেকটি গাড়িতে ১৮শ’ লিটার পানি আছে। সঙ্গে আছে একটি অ্যাম্বুলেন্স।

‘বাংলা একাডেমির পুকুরে স্থাপন করা একটি হাই-পাম্প, আরও একটি রিজার্ভ পাম্প। ওয়াটার মিকসড মোটরবাইক (টু-হুইলার) তিনটি (যা পানিবাহী বাইক)। এছাড়া ১৮টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (সিলিন্ডারে উচ্চচাপে রক্ষিত তরল কার্বন ডাই-অক্সাইড)। ,’ যোগ করেন হালিম।

তিনি জানালেন, শুধু মেলার নিরাপত্তাই নয়; পাঠকদেরও সচেতন করা তাদের দায়িত্ব। এ জন্য প্রজেক্টরের মাধ্যমে শুরু হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, বিতরণ করা হচ্ছে লিফলেট। সঙ্গে মেলার বিভিন্ন পয়েন্টে জরুরি নম্বরও সাটানো হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, বইমেলায় আমাদের যে লোকবল তা দিয়ে আমরা যেকোনো ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে পারবো। তবুও আমরা চাই সচেতনতা। দুর্ঘটনা নয়, আমাদের দুর্যোগপ্রতিরোধ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে- সে লক্ষ্যে বইমেলাতে কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। এ থেকে মানুষ শিখলে, সবারই উন্নতি।

চলমান কলকাতা বইমেলাতেও আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। কলকাতা বইমেলা প্রাঙ্গণের একটি খাবারের স্টল থেকে আগুন ছড়ায় বলে সংবাদমাধ্যমে জানায়।

এছাড়া ২০১৩ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ সময়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪০টি স্টল পুড়ে যায়।

ঘটনার পরিক্রমায় যতটুকু জানা যায়, ধীরেন্দ্রনাথ চত্বর থেকে আগুনের সূত্রপাত। এমন দুর্ঘটনা একদমই অনাকাঙ্ক্ষিত। যা রুখে দিতেই এবার মেলায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের এতো তৎপরতা, এতো শ্রম-ঘাম-পরিশ্রম।

যার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষজনের মাঝেও পূর্ণ সচেতনতাবোধ সৃষ্টি করা যায়- এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৬
আইএ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।