ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

মেলার জন্য বইয়ের প্রস্তুতি

এই যাইতাছে, সাইড দেন....

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
এই যাইতাছে, সাইড দেন.... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকার নয়াবাজার-বাংলাবাজার ঘুরে: ছোট ছোট ঠেলাগাড়িতে সওয়ার গাদা গাদা কাগজ। যাচ্ছে গন্তব্যে।

অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের হাতে টানা রিকশার মতো। ১৬ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের সেই আবিষ্কারের হরহামেশা যাত্রা প্রকাশক পাড়া কিংবা ছাপাখানায়।
 
‘এই আইলো-আইলো, হুট হুট- দেন সাইড দেন’- এই বলে টেনে চলা চালক করে নিচ্ছেন গলি পথে জায়গা। পুরান ঢাকার অলিতে-গলিতে সাঁ করে যেতে নেই এর জুড়ি!
 
রাজধানীর নয়াবাজার, বাবুবাজার এবং বাংলাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে এসব ঠেলাগাড়ির। দম ফেলার ফুরসতহীন কাজে মগ্ন ঠেলা শ্রমিক ও চালকরা। কী এতো ব্যস্ততা, জানতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকদের প্রশ্ন করলেই পাওয়া যায় উত্তর।

শ্রমিক মো. হেলাল বলেন, আমিসহ; আমগো মতো শ্রোরোমিক পোস্ট ডেলিভারি লেবার। বই ছাপাআলারা বইয়ের কাগজ কিন্না লন, আমরা দিয়া আসি।
 
কোথায় দিয়ে আসেন? জবাবে হেলাল বলেন, যার যেখানে লাগে, ওইহানে। কেউ প্রেরেসে, কেউ অপিসে- ব্যাবাক প্লেলেসে যায়। সায় দিলেন পাশে থাকা অন্য শ্রমিক ইব্রাহীমও। তিনি জানালেন, এবার ব্যবসা ভালো।
 
আরেক ডেলিভারি শ্রমিক বৃদ্ধ আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, আগের থোন- এই বসর কাইম-কাজ বেশি। ডিসেম্বরে আসিল স্কুলের পোলাপান গো বই-খাতাপত্রের কাগজের বিক্রি, এহন শুনচি বইমেলা আইতাচে, তার লাইগা পেপার লাগতাচে দিস্তায় দিস্তায়।
 
ঠেলার চালক দেলাওয়ারের সঙ্গে কথা হয়। জানালেন, শ্রমিক নন তিনি। শুধুই ঠেলা টানেন। সারা বছর এটাই তার কাজ। ঠেলাগাড়িতে সরবরাহ করেন কাগজ, সঙ্গে একজন করে শ্রমিক। দেলাওয়ারের ঠেলাগাড়িতে শ্রমিক রফিক। বললেন, দু’জন মিলে কাজ করি, আমরা হইলাম- কনট্রাকটরের আন্ডারে। তিনি আমগো কাম খুঁইজা দেন, আমরা লেবার খাটি।

এখানে দিস্তা দিস্তা, রিম রিম বিক্রি হচ্ছে কাগজ। সরেজমিনে দেখা যায়, শেষ সময়ে (অর্থাৎ বইমেলা শুরুর আগে) এ পালে আরও লেগেছে হাওয়া।
 
যার সঙ্গে টিকে আছে এমন সব ছোট্ট ঠেলার ক্ষুদ্র শ্রমিকদের জীবনপ্রবাহও।
 
আর কয়টা দিন বাদেই অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে বই ছাপানোর মূল উপকরণ কাগজের চাহিদা বেড়েছে আরও অন্তত মাসখানেক আগে থেকে, এ তথ্য পাইকার বিক্রেতাদের।
 
পুরো নয়াবাজার-বাবুবাজার ঘুরে জানা যায়, ব্যবসায়ী পাইকারদের সমিতি দু’টি। একটি ঢাকা সমিতি, আরেকটি বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতি। যার মধ্যে ঢাকা সমিতির সভাপতি মীর শামসুদ্দীন নাহিদ, সহ-সভাপতি কাজী বাদরুর জাহেদী দবির। আর নোয়াখালী ব্যবসায়ী পরিষদে আলহাজ মোহাম্মদ নূরুল আমিন কাগজ ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি এবং সহ-সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল।
 
বইমেলার বই ছাপানোর কাগজ বিক্রিতে এই দুই সমিতিরই ব্যবসা এখন বেশ জমজমাট বলে কথায় কথায় জানা গেলো।
 
এই যেমন কাগজের পাইকারি বাজারের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী আহমেদ ট্রেডার্সের মোহাম্মদ আলী। সুপ্রাচীন কাল থেকে তাদের এখানে (নয়াবাজারে) ব্যবসা। বাবার ধারাবাহিকতায় ছেলে আলীর হাতেই এখন ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এবার বিক্রি খুবই ভালো হচ্ছে। বড় বড় পার্টি বা প্রকাশকরা হয় নিজস্ব লোক পাঠান, নয়তো প্রেস থেকে কর্মী এসে রিম রিম কাগজ কিনে নেন।
 
‘ভালো মানের বইয়ের প্রধান কাঁচামাল কাগজ বিক্রিতে এগিয়ে বসুন্ধরা পেপার। এরপর রয়েছে অন্য আরও কয়েকটি কোম্পানি’- বলেও জানালেন তিনি।
 
তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাবুবাজারের রুমি প্রেসের সহকারী আল-ইসলাম দরদাম শুরু করেন। একটি বই প্রেসে উঠছে তবে হঠাৎ কিছু কাগজের কমতি, তাই ১৫ রিম কিনলেন। যাওয়ার আগে জানিয়ে গেলেন, প্রকাশকদের বই ছাপানোর মূল উপকরণ কাগজ এই নয়াবাজার থেকেই সংগ্রহ করা হয় মূলত। এটি দেশের সব চেয়ে বড় পাইকারি কাগজের বাজার।
 
আল-ইসলাম এসেছিলেন পাশের বাবুবাজার থেকে। দোকানে ঢোকার আগেই ঠিক ছিল ফিরে যাওয়ার ঠেলাগাড়ি। চালকের সহায়তায় ১৫ রিম কাগজ তুললেন ঠেলায়। এরপর চালক ঠেলছেন তিনি পেছনে পেছনে— এই কাগজ যাইতাছে, সাইড দেন...।

** ধুম পড়েছে কাগজ বিক্রিতে!
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
আইএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।