ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

‘বই বের হলে মনটা বড় হয়ে যায় জগৎকে সৃষ্টিশীল মনে হয়’

তানিম কবির | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫
‘বই বের হলে মনটা বড় হয়ে যায় জগৎকে সৃষ্টিশীল মনে হয়’ কাজল শাহনেওয়াজ

বইমেলা থেকে: চার বছর পর নতুন কবিতার বই বেরুলো আশির দশকে আবির্ভূত কবি কাজল শাহনেওয়াজের। বইয়ের নাম ‘একটা পুরুষ পেপে গাছের প্রস্তাব’।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘সমাবেশ’ থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে।

শুক্রবার মেলায় এলে সদ্য প্রকাশিত বই, বইয়ের কবিতা, সাম্প্রতিক লেখালেখি ও মেলা আয়োজন নিয়ে কাজল শাহনেওয়াজের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।

কবি জানান, গত ২ বছরে লিখিত নির্বাচিত ৪৩টি কবিতা স্থান পেয়েছে বইয়ে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ফারুক হোসেন। ৬৫ পৃষ্ঠার এ বইটির বিনিময় মূল্য ১৫০ টাকা। পাওয়া যাবে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে পাঠক সমাবেশের প্যাভিলিয়নে।

এর আগে ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয় কাজল শাহনেওয়াজের প্রথম কবিতার বই ‘ছাঁট কাগজের মলাট’। ১৯৮৫ সালে ‘নিম বৃষ্টি’, ১৯৮৯ সালে ‘জলমগ্ন পাঠশালা’, ১৯৯২ সালে ‘রহস্য খোলার রেঞ্চ’, ১৯৯৮ সালে ‘সঙ্গীত পরিবারে সতীর আত্মহত্যা’, ২০০৭ সালে ‘আমার শ্বাসমূল’, ২০০৯ সালে ‘কাঠকয়লায় আঁকা তোমাকে আমার’ এবং ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় তার অষ্টম কবিতার বই ‘তালগাছ হাতির বাচ্চা’।

কবিতার পাশাপাশি ছোটগল্পেও সমান দক্ষ ও প্রশংসিত এই কবির প্রথম গল্পের বই ‘কাছিমগালা’ বের হয় ১৯৯৩ সালে। এরপর ২০০৭ সালে ‘গতকাল লাল’ এবং ২০১১ সালে এ দুটি বই একত্রে ‘কাছিমগালা ও গতকাল লাল’ নামে পুনঃপ্রকাশিত হয়।

নতুন প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজল শাহনেওয়াজ বলেন, ‘একটা পুরুষ পেপে গাছের প্রস্তাব’ এক নিখিল পুরুষ রাজত্বের খুঁটিনাটি ঘটিত কবিতা, যা প্রচলিত মাননীয় কাব্য-ভাষা থেকে গলে পড়ে অতি করুণ লোকালয়ের ভাষায় আশ্রয় নিয়েছে, ক্রিয়াপদে ঢুকে পড়েছে ঘটনাস্থল। ঘটনাকাল কবিতার ভিতরে বিল্ট হয়েছে। ’

পুরুষ পেঁপে গাছকে কোন প্রস্তাবের ভিতর থেকে দেখতে চাইলেন বইয়ে?—জানতে চাইলে কবি বলেন, ‘আমি লক্ষ্য করেছি পুরুষ শব্দটার লিঙ্গহীন অবস্থা! ক্ষমতা, প্রভুত্ব কিভাবে শক্ত করে তোলে নর-নারীকে। উভয়কে করে তোলে পাষাণ, পুরুষ। কবিতা কী একপ্রকারের বিস্ফোরক হিসাবে কাজ করে? কবিতায় এইসব পরীক্ষা করেছি। পুরুষ শব্দটাকে প্রজননের বাইরে থেকে দেখে। ’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা তথা বাংলাদেশের চরম সংঘাতের মধ্যে উড়ে বেড়ানো পুরুষ, সমকামি যুবকের নিঃসঙ্গতার নারীহীন পুরুষ। পার্টিপুরুষ, ডার্টি পুরুষ।

আমাদের ঢাকা একটা জাদুর শহর যেন একটা পাকা পেঁপে, যেখানেই যাই, সবই দেখি তা না না না পুরুষ পেঁপে, পুরুষ ঈদ, সুপার পুরুষের গান গানা, পুরুষ এর অনেক মাত্রা। ’

আগের বইগুলোর সঙ্গে এ বইয়ের মিল বা পার্থক্যের জায়গা কী?

‘এই কবিতাগুলোর অনেক বানানই দৈনন্দিন কাজের জন্য নয়। আমি মনে করি কবিতার ভাষা বা বানান শুধুমাত্র বিশেষ কাজের জন্য নির্মিত হতে পারে। শুধু মাত্র বিশেষভাবে একটা নির্দিষ্ট বইয়ের জন্য। এগুলোকে নিতে হবে বিশেষ প্রয়োগ হিসাবে। বিশেষ অর্থ, বিশেষ ইঙ্গিত হিসাবে। এমনকি তা অন্যের ব্যবহারের জন্যও না। কোনও আঞ্চলিক ভাষাপ্রীতিও এর জন্য দায়ী নয়। কবিতায় ঢুকে গেলে কি কোনও শব্দ আর আঞ্চলিক থাকে!’

মেলায় এসে কেমন লাগছে?

‘নতুন ফর্মেটের বইমেলা ভালো উদ্যোগ। অনেক স্পেস। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। ’

পাঠকদের বইয়ের ব্যাপারে আরও বেশি আগ্রহী করে তুলতে কী করা যায়?—জানতে চাইলে কাজল শাওনেওয়াজ বলেন, ‘বই কেনায় উদ্বুদ্ধ করতে নতুন নতুন কৌশল ও আকর্ষণ দিতে হবে। লেখক/কবিদের তাদের প্রকাশনা নিয়া কথা বলতে হবে। মিডিয়াকে আরও কী করে কাজে লাগানো যায় প্রকাশকদের ভাবতে হবে। কারণ মিডিয়া এ ব্যাপারে শর্তহীনভাবে আগ্রহী। দরকার হলে কবিতার নাগরদোলা, গল্পের পুতুল নাচ, উপন্যাসের কথকতা, প্রবন্ধের বাহাস আয়োজন করা যেতে পারে। ’

প্রথম কোন বছর বইমেলায় এসেছিলেন মনে আছে? প্রথম দিককার কোনও ঘটনা যদি মনে পড়ে...

‘১৯৮১/৮২ থেকে রিফাত চৌধুরী ও আমি একসঙ্গে মেলায় যেতাম। মেলা তখন খুব অর্গানিক। অল্পসল্প মানুষ... প্রায় সবাই বইপ্রেমী। ১৯৮৪ তে আমাদের যৌথ কাব্য ‘ছাঁট কাগজের মলাট’ প্রকাশিত হলো... সে বছর নিজেরাই নিজেদের গর্বিত করে রাখতাম। তখনও কোন রেওয়াজ তৈরি হয় নাই, লিটল বুক বা পত্রপত্রিকা কিভাবে বিপণন হবে। তাই টেবিল নিয়া বসে পড়লাম মনে হয়। কার টেবিল ছিল মনে নাই...

তবে দিনরাত টইটই করে উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরতাম। খেয়ে না খেয়ে আড্ডাবাজি। সন্ধ্যাটা মেলায়। আবার সারারাতের জার্নি শুরু। তখন সবাই এমন ছিল যে... গভীর রাতে মেলায় ঢুকে আমরা যেকোনও বইয়ের স্টলেই ঘুমাতে পারতাম। তারপর সকালে উঠে আবার সুট করে বের হয়ে যেতাম। যাদের বই তাদের মতই থাকতো! দূর থেকে সকৌতুকে দেখতাম তখনকার স্টার কবি/লেখকদের। হায়, আজ তারা কোথায়?’

নিজের বই বের হওয়া মেলা আর নিজের বই বের না হওয়া মেলার মধ্যে কি কোনও পার্থক্য বোধ করেন?

‘নিজের বই না থাকলে মনে হয় না যে মেলা হচ্ছে। মনে হয় সবাই মেলায় গিয়ে বলাবলি করছে যে কাজল শাহনেওয়াজের কোনও বই এইবার নাই... ধুর মেলাটাই জমলো না। আর বই থাকলে মনটা বড় হয়ে যায়। খোঁজ নেই কার কার বই আসলো। কেমন হচ্ছে তরুণদের কবিতা। জগৎকে সৃষ্টিশীল মনে হয় তখন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।