ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

বইয়ের ভেতর বই!

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫
বইয়ের ভেতর বই! ছবি: দিপু / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গ্রন্থমেলা থেকে: এক মলাট। অনেক পৃষ্ঠা।

তার মধ্যে অনেক বই। বইয়ের ভেতর বই। নাম তার ‘সমগ্র’। বিভিন্ন লেখকের বই এক মলাটে বন্দি করে মেলায় এসেছে গল্প, কবিতা বা উপন্যাস সমগ্র।

পাঠকরাও প্রিয় লেখকের বই এক মলাটে পেতে পছন্দ করেন। তাই প্রকাশকরা ‘সমগ্র’ আকারে মেলায় এনেছেন লেখকদের বিভিন্ন বই। পাঠকদের কাছেও রয়েছে এসব বইয়ের কদর।

মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেশ কিছু ক্রেতার হাতে দেখা গেছে বিভিন্ন লেখকের গল্প-কবিতা-উপন্যাস সমগ্র। শুধু এদিন নয়, মেলার শুরু থেকেই লক্ষ্য করা গেছেনতুন বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সমগ্র বিক্রি হচ্ছে।

সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় ধানমন্ডি থেকে আসা বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শায়লা আক্তারের সঙ্গে। যার হাতে শোভা পাচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলী সমগ্র ও হিমু সমগ্র।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রয়াত এ লেখকের মিসির আলী ও হিমু চরিত্রের বিভিন্ন বই পড়েছি। তবে সবগুলো একসঙ্গে পেতেই দুই চরিত্রের দু’টি সমগ্র কিনেছি।

এবারের বইমেলায় সবচেয়ে বেশি ‘সমগ্র’ প্রকাশ হয়েছে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের গল্প, উপন্যাস, হিমু ও মিসির আলি নিয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশ হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের গল্প সমগ্র, উপন্যাস সমগ্র, মিসির আলী সমগ্র ও হিমু সমগ্র।

অনন্যা থেকে প্রকাশ হয়েছে হিমু সমগ্র-২, মিসির আলী সমগ্র-২, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী রচনা সমগ্র-৪ ও শামসুর রাহমান কবিতা সমগ্র। খান ব্রাদার্স থেকে বেরিয়েছে আহমদ ছফা রচনা সমগ্র, সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা সমগ্র। অনন্যা থেকে আরো প্রকাশ হয়েছে রাবেয়া খাতুনের গল্প সমগ্র ও উপন্যাস সমগ্র এবং ফজল শাহাবুদ্দিন কবিতা সমগ্র-১। অনুপম থেকে প্রকাশ হয়েছে জহির রায়হান উপন্যাস সমগ্র, গল্প সমগ্র ও রচনা সমগ্র। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে বেরিয়েছে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধ সমগ্র-১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬।

অনন্যা থেকে বেরিয়েছে ইমদাদুল হক মিলনের সমগ্র কিশোর উপন্যাস-২ ও সমগ্র কিশোর গল্প-২। সময় প্রকাশনীতে পাওয়া যাচ্ছে ফরিদুর রেজা সাগরের কিশোর সমগ্র-১১, কাইজার চৌধুরী কিশোরসমগ্র-৪, মুহম্মদ জাফর ইকবাল কল্পবিজ্ঞান সমগ্র, মহাদেব সাহা গদ্যসমগ্র, কবিতা সমগ্র বেরিয়েছে অনন্যা থেকে। প্রথমা থেকে বেরিয়েছে আনিসুল হকের গল্প সমগ্র, অনুপম  থেকে বেরিয়েছে তার গদ্য কাটুন-১, ২, ৩, ৪।

এছাড়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার রায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ফররুখ আহমেদ, জীবনানন্দ দাশসহ খ্যাতিমান লেখদের গল্প, উপন্যাস, কবিতা সমগ্র পাওয়া যাচ্ছে মেলার বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টলে।

প্রকাশকরাও জানান, একসঙ্গে অনেকগুলো বই প্রকাশ করতে খরচ কম। তাছাড়া পাঠকদের সুবিধাও বেশি। যেমন, দশটি বইয়ের দাম ২ হাজার টাকা হলে একমলাটে থাকার কারণে দাম পড়ে তার অর্ধেক।
এদিকে মঙ্গলবার বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দু’ জায়গায় মেলা ছিল সরগরম। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লেখক-পাঠক-প্রকাশকে টইটম্বুর। বিকেলে মেলায় আসেন কবি আল মাহমুদ।

মঙ্গলবার ১২০, মোট ২২১৮ 

১৭তম দিন পর্যন্ত মেলা ঘিরে নতুন বই এসেছে ২ হাজার ২১৮। মঙ্গলবার নতুন বই এসেছে ১২০টি। এর মধ্যে উপন্যাস ১৭টি, গল্পের বই ১৭টি, কাব্যগ্রন্থ ৩০টি, প্রবন্ধের বই ৮টি, গবেষণামূলক বই ৪টি, ছড়ার বই ৮টি, শিশুসাহিত্য একটি, মুক্তিযুদ্ধের বই ৬টি, বিজ্ঞান বিষয়ক বই ৩টি, ভ্রমণকাহিনি একটি, রম্য একটি, ধর্মীয় বই ২টি, সায়েন্স ফিকশন একটি এবং অন্যান্য বিষয়ের বই ২১টি।

কামাল চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থ ‘ভ্রমণকাহিনী’ এনেছে পাঠক সমাবেশ, জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ‘চন্দ্রালোকে ছায়াহীন’ এনেছে অন্যপ্রকাশ, মুস্তাফিজ শফির ‘কবির বিষণ্ন বান্ধবীরা’ এনেছে ভাষাচিত্র, মাহবুব আলমের ‘হারাধনের দশটি ছেলে ও অন্যান্য’ এনেছে সুবর্ণ, পিয়াস মজিদ সম্পাদিত ‘শামসুর রাহমান অনূদিত হো চি মিনের কবিতা’ এনেছে রূপসী বাংলা প্রকাশ, ফজলুল বারীর ‘আমার দেখা শ্রেষ্ঠ বসন্ত’ এনেছে ভাষাপ্রকাশ, আবু ইসহাক ইভানের ‘রবীন্দ্রনাথ কবি ও কাব্য’ এনেছে মুক্তধারা, আশীফ এন্তাজ রবির ‘গল্পতুচ্ছ, আদিলুর রহমানের ‘শাহবাগের জনতা, পারভেজ আলমের ‘জিহাদ ও খেলাফতের সিলসিলা’ এনেছে আদর্শ, সাবিরা ইসলামের ‘অপেক্ষা’ এনেছে তরফদার প্রকাশনী, ফজলুল কবিরীর গল্পগ্রন্থ ‘বারুদের মুখোশ বাঙলায়ন প্রকাশনী প্রভৃতি।

মোড়ক উন্মোচন

বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে মঙ্গলবার মোট ১১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। চন্দ্রছাপ থেকে প্রকাশিত হাসিনা আক্তারের ‘নিস্তরঙ্গ সরোবরে তুমি তোলো ঢেউ’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন অধ্যাপক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত।

কাইয়ুম চৌধুরীকে নিয়ে আলোচনা

বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্পী রফিকুন নবী। আলোচনায় অংশ নেন মফিদুল হক, মইনুদ্দীন খালেদ ও সাজ্জাদ শরিফ। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী।

প্রাবন্ধিক বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পাথেয় করে সম্ভবত কাইয়ুম চৌধুরীই সবচেয়ে বেশি ছবি এঁকেছেন। কখনো সরাসরি বক্তব্যকে প্রধান করে কখনো বা প্রতীকী অবয়বে। এই ছবিগুলি দেশের চিত্রকলার ক্ষেত্রে বিশেষ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।
আলোচকরা বলেন, পারিবারিকভাবে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা কাইয়ুম চৌধুরী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শিল্পের সঙ্গেই ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের এক সাংস্কৃতিক মহীরূহ। তার চিত্রকলা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে ধারণ করেছে বিপুল বৈভবে।

সভাপতির বক্তব্যে সমরজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, সুদীর্ঘকাল ধরে কাইয়ুম চৌধুরীর রেখা ও রঙে বাংলার চিরায়ত প্রকৃতি ও মানুষ যে অনন্য রূপ-ব্যঞ্জনায় ভাস্বর হয়ে উঠেছে তা কখনো বিস্মৃত হওয়ার নয়।

সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক আয়োজন

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুজতবা আহমেদ মুরশেদের পরিচালনায় সংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্ব-ভূমি’ এবং সালাউদ্দীন বাদলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। সংগীত পরিবেশন করেন রোকাইয়া হাসিনা, অনিন্দিতা চৌধুরী, মির্জা শামসুল আলম, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, আফরোজ খান মিতা, সাইম রানা, হিমাদ্রী শেখর, শিমু দে, কবীর-উল-করিম এবং তানজীনা তথা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন পুলিন চক্রবর্তী (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), আলাউদ্দিন মিঞা (বেহালা), নির্মল কুমার দাস (দোতারা) এবং সুমন রেজা খান (কী-বোর্ড)।

বুধবারের আয়োজন

বুধবারও বইমেলার দুয়ার খুলবে বেলা ৩টায়। চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। আলোচনায় অংশ নেবেন সামসুল ওয়ারেস, রবিউল হুসাইন এবং তানজিনা হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫

** স্বাধীনতাস্তম্ভের পাদদেশে মলাটবদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।