ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

‘লক্ষণ শুভ’ দেখছে বিএনপি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
‘লক্ষণ শুভ’ দেখছে বিএনপি

ঢাকা: রাজনীতি চর্চা ও দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কয়েকটি সাম্প্রতিক ঘটনাকে নিজেদের জন্য ‘শুভ লক্ষণ’ হিসেবে দেখছে বিএনপি।এসব ঘটনায় সরকারের নমনীয় মনোভাবের আভাস পাচ্ছে তারা।

জাতীয় নির্বাচনের আগ পযর্ন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকলে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপির জন্য সহজ হবে-এমনটাই মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।  

গত তিন বছর ধরে ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যাদিবস’ ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনসহ জাতীয় ও দলীয় ইস্যুতে বিএনপি যতবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও নয়াপল্টনে সভা-সমাবেশ করতে চেয়েছে, ততোবারই তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে সরকার।

 
 
কিন্তু হঠাৎ করে গত ২ মার্চ ইঞ্জনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে গণঅবস্থানের অনুমতি পায় বিএনপি। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ঘোষিত ওই কর্মসূচি পালনে সব রকম সহযোগিতা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্বল্প সময়ের নোটিশে বিএনপিও চমৎকার অনুষ্ঠান আয়োজন করে। কয়েক হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হয়ে ২ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।  

এর ৫ দিন পর বুধবার (০৮ মার্চ) বিশ্ব নারীদিবস উপলক্ষে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দল রাজধানীতে র্যালি করার ঘোষণা দেয়। রুট হিসেবে নয়াপল্টন থেকে কাকরাইল মোড়কে বেছে নেয় তারা।

সূত্রমতে, পূর্বের তীক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বিএনপি ধরেই নিয়েছিল, রাজধানীতে মহিলাদলকে র্যালি করতে দেবে না সরকার। এরপরও নির্ধারিত সময়ে মহিলা দলের নেতা-কর্মিরা উপস্থিত হন নয়াপল্টনে এবং কোনো প্রকার পুলিশি বাধা ছাড়াই কর্মব্যস্ত দিনে ব্যস্ত সড়কে র্যালি করে মহিলাদল।  

এর আগের দিন ৭ মার্চ খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলা হাইকোর্টে স্থগিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদকের করা ওই মামলার কাযক্রম স্থগিত করার জন্য গত ১০ বছরে অসংখ্যবার চেষ্টা করেছে বিএনপি। কিন্তু হয়নি। হঠাৎ করেই মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার বহুল আলোচিত ওই মামলাটি স্থগিত হয়ে যায় ।

 
এদিকে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানা অভিযোগ, অবিশ্বাস, নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে সংশয়ের মধ্যেই গত সোমাবার (৬ মার্চ) অনুষ্ঠিত ১৮টি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে কারচুপি, সন্ত্রাস ও জবর দখলের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কয়েকটি জায়গায় কারচুপির চেষ্টাকালে হাতেনাতে ধরা পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। এর মধ্যে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কয়েকটি উপজেলায় নিরঙ্কুশ জয় পায় বিএনপি।  

জানা গেছে, সরকার এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই ভূমিকাকে রাজনীতির ‘শুভ লক্ষণ’ হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, বিএনপি যেমন নির্বাচনে না গেলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, ঠিক তেমনি বিএনপি ছাড়া আরেকটি নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে সরকারও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে থাকবে। সে কারণেই হয়তো নমনীয় অবস্থান নিতে শুরু করেছে সরকার।  

সূত্রমতে, বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস- জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাও জিতবেন খালেদা জিয়া। এ দু’টি মামলা নিয়েও নমনীয় মনোভাব দেখাবে সরকার। পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতে বিএনপিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেবে ক্ষমতাসীনরা।  

 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয়, তাহলে ভালো। এর সুফল শুধু বিএনপি ভোগ করবে না, তারাও ভোগ করবে। সরকার গণতন্ত্রের পথে থাকলে সবাই উপকৃত হবে।  

 
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এটা কারো দয়া বা অনুকম্পা নয়। এতদিন সরকার আমাদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয় নি। ছোট্ট দু’টি কর্মসূচি আমরা পালন করার সুযোগ পেয়েছি। এ ধারা অব্যহত থাকলে তবেই বুঝব সরকারের বোধদয় হয়েছে। এটি অবশ্যই রাজনীতির জন্য শুভ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
এজেড/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।