ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিএনপি

‘জনপদে-জনপদে শোকের মাতম উঠেছে’

পলিটিক্যাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৬
‘জনপদে-জনপদে শোকের মাতম উঠেছে’

ঢাকা: চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন ও নাটোরে খ্রিস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়‍া বলেছেন, জনপদের পর জনপদে এখন শোকের মাতম উঠেছে।

 

তিনি আরও বলেছেন, বিদেশি হত্যা থেকে শুরু করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাদের ধর্মগুরু, মসজিদের ঈমাম, শিয়া মুসলমান, পীর ও পীরের শিষ্য কেউই ঘাতকদের প্রকাশ্য অস্ত্রের আঘাত থেকে রেহাই পায়নি।

জনপদের পর জনপদে এখন শোকের মাতম উঠেছে। এই রক্তনদী আর কতদূর বইবে তা কেউ জানে না।

সোমবার (৬ জুন) সকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর পাঠানো এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন।

তিনি রোববারের নৃশংস হত্যাকাণ্ড দু’টির নিন্দা জানিয়ে বলেন, দেশে শুরু হয়েছে সিরিয়াল কিলিং। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-দেশে যেন প্রতিমুহূর্তে গোরস্থানের পরিসরই বিস্তৃত হচ্ছে। দেশবাসী যেন এক নিরাপত্তাহীন অন্ধকার গুহায় বসবাস করছে। চারিদিকে ভয়, শঙ্কা আর আতঙ্ক নিয়েই দেশের মানুষ এখন অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে।

খালেদা জিয়া সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন, ভ্রুক্ষেপহীন সরকার বন্য প্রতিহিংসার আক্রোশে জঙ্গিদের তৎপরতা দমন করার পরিবর্তে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপিয়েই দায়িত্বের সমাপ্তি ঘটালেও নিজেরা নিষ্কলঙ্ক হতে পারছে না। তাই প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীদের অনুসন্ধান করে গ্রেফতার করার পরিবর্তে বিভ্রান্তমূলক কথাবার্তা ছড়াচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসী তাদের উচ্চনাদী অপপ্রচার বিশ্বাস করে না।

কিন্তু এই সুযোগে জঙ্গিরা আরও বেশি শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপি প্রধান বলেন, জঙ্গিরা প্রকাশ্য দিবালোকে নির্ভয়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে, অথচ ক্ষমতাবিলাসী সরকার নিশ্চিন্তে এগুলোকে আমলেই নিচ্ছে না। বিদেশি হত্যা থেকে শুরু করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাদের ধর্মগুরু, মসজিদের ঈমাম, শিয়া মুসলমান, পীর ও পীরের শিষ্য কেউই ঘাতকদের প্রকাশ্য অস্ত্রের আঘাত থেকে রেহাই পায়নি।

তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ‍হানাহানির অভিযোগ তুলে বলেন, দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ক্ষমতা বজায় রাখতে গিয়ে সরকার নিজেই রক্তাক্ত হানাহানির পথ বেছে নিয়েছে। যার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি সম্প্রতি অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে।

সরকার রাজনৈতিক অন্ধকারে পা রেখেছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন- কাউকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে বারবার হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর এক নির্বিকার উদাসীনতা প্রদর্শন করছে সরকার। আসলে এই বর্বরোচিত ঘটনাগুলোর রহস্য কী এবং এ নিয়ে সরকার-জঙ্গিরা কে কী বার্তা দিতে চ‍াইছে-তা নিয়ে জনগণের মধ্যে এক বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের স্ত্রী এবং নাটোরের খ্রিস্টান ব্যবসায়ীকে হত্যা বর্বর, কাপুরোষোচিত ও অমানবিক পশুপ্রবৃত্তির শামিল বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন বিএনপি প্রধান। খালেদা জিয়া বলেন, মানবতাবোধশূন্য এই অন্ধ হিংস্রতা মানুষের বিবেককে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। দেশে একদলীয় দুঃশাসনের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার একটি হচ্ছে এই জঙ্গি তৎপরতা।

সরকারের রাজনৈতিক আচরণ এবং জঙ্গিদের আচরণের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দু’পক্ষই বিরোধী চিন্তা ও মত সহ্য করে না। গণতন্ত্রের সারাৎসার মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার এরা নৃশংস কায়দায় থেতলে দিতে কুণ্ঠিত হয় না। অমানবিক বর্বরতাই এদের দিন রাতের কর্মসূচি। সুতরাং মানুষের অধিকারহীন এই দেশ যেন এখন মৃত্যুনগরীতে পরিণত হয়েছে। মানুষকে প্রতিনিয়ত জীবনাশঙ্কার ভয়াল পরিবেশে বসবাস করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

খালেদা জিয়া অবিলম্বে মাহমুদা খাতুন এবং সুনীল গোমেজকে হত্যাকারী দৃর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান। একইসঙ্গে তাদের  আত্মার শান্তি কামনা করে নিহতদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।