ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

জামানত ছাড়া ঋণ দিচ্ছে ৫১ ব্যাংক, জামিনদার সরকার

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৯ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৩
জামানত ছাড়া ঋণ দিচ্ছে ৫১ ব্যাংক, জামিনদার সরকার

ঢাকা: কুটির, ছোট (মাইক্রো) ক্ষুদ্র, ও মাঝারি (সিএমএসএমই) পর্যায়ের ব্যবসা থাকলেই বিনা জামানতে কম সুদে ঋণ দিচ্ছে ৫১ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এ ঋণের গ্যারান্টার (জামিনদার)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকার প্রি-ফাইনান্স তহবিল ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের’ আওতায় এ ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে।

* কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ৪৩ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চুক্তি
* ২ হাজার কোটি টাকা ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম গঠন
* ২ হাজার ৬৫৩ গ্রাহককে ২৩৭ কোটি ৯ লাখ টাকা বিতরণ
* কোভিড-১৯ অভিঘাত মোকাবিলা করতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা তহবিল গঠন
* ক্ষুদ্র উদ্যোগের উৎপাদনশীল শিল্প খাতে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা

এর আওতায় চলতি ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫৩ গ্রাহককে ২৩৭ কোটি ৯ লাখ টাকা এ বিতরণ করা হয়েছে। ব্যবসায় সম্ভাবনা আছে কিন্তু জামানত বা গ্যারান্টারের অভাবে ব্যবসা চালাতে সমস্যায় পড়ছে, ব্যবসা বড় করতে পারছে না বা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে, এমন সব উদ্যোক্তা ব্যাংকের মাধ্যমে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় এ ঋণে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

সিএমএসএমই খাতের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই ব্যাংক ঋণ গ্রহণে প্রয়োজনীয় সহায়ক জামানত প্রদান করতে সক্ষম হন না। এ খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে জামানত প্রদানের বাধ্যবাধকতা বাধা হয়ে হয়ে দাঁড়ায়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন, জীবন-মান উন্নয়ন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ ও টেকসই উন্নয়নে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে এ ঋণ বিতরণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

কোভিড-১৯ অভিঘাত মোকাবিলা করতে গঠিত ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা তহবিল; ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকায় খোলা আর্থিক সেবা ভুক্তিমূলক ৫০০ কোটি টাকা তহবিল ও সিএমএসএমই খাতের জন্য গঠিত ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলসহ মোট ৫০ হাজার কোটি টাকার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রি-ফাইনান্স ও রি-ফাইনান্স তহবিলের আওতাভুক্ত এ ক্রেডিট গ্যারান্টি যুক্ত ঋণ দেওয়া হচ্ছে।     

এ ঋণে গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার সর্বমোট ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ১ শতাংশ ক্রেডিট গ্যারান্টি ফি ও ৬ শতাংশ ঋণের সুদ।

কোভিড-১৯ এ প্রাদুর্ভাবের কারণে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তায় প্যাকেজের আওতায় সিএমএস খাতের জন্য চলতি মূলধন ও মেয়াদি ঋণের বিপরীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা দান করা হচ্ছে।

১০ টাকা, ৫০ টাকা ও ১০০ টাকার হিসাবধারী প্রান্তিক, ভূমিহীন কৃষক, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, স্কুল ও ব্যাংকিং হিসাবধারী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার পূণ:অর্থায়ন স্কিমের বিপরীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া কুটির মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ খাতে মেয়াদি ঋণ প্রদানের লক্ষে ২৫ হাজার কোটি টাকার অবর্তনশীল অপর পুন:অর্থায়ন স্কিমের ঋণ ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের সুবিধা পাবে।  

এ সব কুটির, ছোট (মাইক্রো), ক্ষুদ্র, মাঝারি পর্যায়ের খাতের শিল্পের বিকাশে ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রি-ফাইনান্স তহবিল ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। কোনো গ্রাহকের ব্যবসার সম্ভাবনা থাকার পরও জামানতের অভাবে ঋণ নিতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের মাধ্যমে এই গ্রাহকের পাশে দাঁড়াচ্ছে।

ঋণের সীমা ২৫ হাজার থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ ক্রেডিট গ্যারান্টির সুবিধা পাবে। ঋণের মেয়াদের সঙ্গেই এর গ্যারান্টি শেষ হবে। ঋণ পরিশোধ হলে সরকারের গ্যারান্টি শেষ হবে। পূণ:তফসিলি বা পূণর্গঠন হলে বা ঋণের মেয়াদ পূণনির্ধারণ হলে ঋণের গ্যারান্টিও পূণনির্ধারণ হবে।

কুটির ও মাইক্রো উদ্যোগের উৎপাদনশীল ও সেবা শিল্প খাতে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা। ক্ষুদ্র উদ্যোগের উৎপাদনশীল শিল্প খাতে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা এবং সেবা শিল্প খাতে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে ২ কোটি টাকা। মাঝারি উদ্যোগের উৎপাদনশীল শিল্প খাতে গ্রাহক পর্যায়ে ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা এবং সেবা শিল্প খাতে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা নিতে পারবেন গ্রাহকরা।

কোনো গ্রাহক তার সম্ভাবনাময় ব্যবসার অবস্থা তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখায় আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বিষয়টি সরেজমিনে দেখে নিজেদের প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করছে। এরপর তিন কর্মদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ ছাড় করছে। তবে কোনো ব্যবসার অবস্থা তদন্তের প্রয়োজন হলে সেটি করতে যে সময় প্রয়োজন, তারপরই টাকা ছাড় করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করা ৪৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আটটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান জামানত ছাড়াই এ ঋণ দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো হলো- সরকারি খাতের অগ্রণী, বেসিক, জনতা, রুপালী, কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ও সোনালী ব্যাংক।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- এবি, ব্যাংক এশিয়া, বেঙ্গল কমার্শিয়াল, ব্র্যাক, কমিউনিটি, ডাচ বাংলা, ইস্টার্ন, যমুনা, মেঘনা, মার্কেন্টাইল, মধুমতী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনসিসি, এনআরবি,  এনআরবিসি, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার, পূবালী, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার, সীমান্ত, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড, দি সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, এক্সিম, গ্লোবাল ইসলামী, ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, সোশ্যাল ইসলামী, শাহজালাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক।     

বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও আল-আরাফা ইসলামী ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় জামানত ছাড়া ঋণ বিতরণ করছে।

এনজিও এবং মহাজনি ঋণের আকাশ ছোঁয়া সুদের বোঝা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্য নিয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় অংশ নেওয়া ব্যাংকের সংখ্যা কম ছিল; পরিধিও ছিল ছোট। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হয়। ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে চুক্তিবদ্ধ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিবাচক হলে আগামীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের ঋণের পরিমাণও বাড়বে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৩
জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।