ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

সুন্দরবন ভ্রমণে দ্বিগুণ ফি, ক্ষিপ্ত পর্যটন ব্যবসায়ীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
সুন্দরবন ভ্রমণে দ্বিগুণ ফি, ক্ষিপ্ত পর্যটন ব্যবসায়ীরা খুলনা প্রেস ক্লাবে টোয়াসের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নেতারা

খুলনা:  হঠাৎই সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশ ও তাদের বহনকৃত যানবাহনের ফি দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি সুন্দরবনে ভ্রমণের প্রায় সব খাতে কর ও ফি বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনে বেড়াতে গেলে দৈনিক ভিত্তিতে ভ্রমণ ফি, প্রবেশ ফি, তথ্য কেন্দ্রের ফি, গাইড ফি, লঞ্চ ক্রু ফি, নিরাপত্তা গার্ড ফি, টেলিকমিউনিকেশন ফি, ভিডিও ক্যামেরা ফি, তীর্থ ফি, ট্রলার ফি এবং বিশ্রামাগার ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে সরকারকে টাকা দিতে হয়। এর মধ্যে অনেকগুলো খাতেই ফি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। তাতে বিদেশি পর্যটকদের খরচ বেড়েছে অনেক বেশি। ফলে বিপাকে পড়েছেন ট্যুর অপারেটররা।

এ অবস্থায় ট্যুর অপারেটররা রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ফি পুনঃনির্ধারণের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তেব্যে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন অন্যতম। এই বন সম্পূর্ণ আলাদা, প্রাকৃতিকগতভাবেও এর অবস্থান ভিন্ন। এসব কারণে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এখানে সবসময় আসার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী থাকেন। বনকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে পর্যটন শিল্প। আর এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পেশার মানুষ। ট্যুর অপারেটররা এই পেশার অন্যতম স্টেকহোল্ডার। তারা এখানে বেশ বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে গত ২ বছরে ট্যুর অপারেটররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ বছর পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার কিছুদিন পর হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, বাজার দর ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় আবারও তা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে করোনার নতুন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়ায় পর্যটকরা অগ্রিম ট্যুর বুকিং বাতিল করেন। এতে করে ট্যুর অপারেটররা নতুন করে আবারও ক্ষতির সম্মুখীন হন। সাধারণত ট্যুর অপারেটররা মৌসুমের শুরুতেই বনের রাজস্বসহ সব কিছুর সঙ্গে সংগতি রেখে ট্যুর প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। সহসা এই প্যাকেজ মূল্য বাড়ানো পরবর্তীতে সম্ভব হয় না। বন বিভাগ হঠাৎ করে চলতি পর্যটন মৌসুমের মাঝপথে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন খাতে রাজস্ব বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এবং ওই দিন থেকেই তা কার্যকর করা হয়েছে। নতুন রাজস্বের পরিমাণ আগের তুলনায় দ্বিগুণ বা কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুণেরও বেশি করা হয়েছে। শুধু তাই নয় এতে আবার নতুন নতুন খাতেরও সংযোজন করা হয়েছে, যা এই শিল্প বিকাশকে ব্যাহত করবে বলে আমরা মনে করছি।

তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে বন বিভাগ রাজস্ব হার বাড়ানো ও তা বাস্তয়নের আগে  ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন। তবে এবার কেন তা করা হলো না তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। বর্ধিত হারে রাজস্ব পরিশোধ করতে যেয়ে প্রতিটি ট্যুর অপারেটর আর্থিকভাবে দারুণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনে সুন্দরবনের স্টেক হোল্ডার ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে মত বিনিময়ের মাধ্যমে পর্যটন খাতের রাজস্ব পুনঃনির্ধারণ করে তা বস্তবায়ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বন বিভাগ বিগত ২০১৮ সালে প্রাণী কূলের প্রজনন মৌসুমের কথা বলে জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল এবং তা প্রত্যাহারের দাবিতে ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা তা অবহিত করেছিলাম। তার কোন সুরাহা আজও হয়নি। সুন্দরবনে সারা বছর ধরে পর্যটক আসলেও এ সময় সীমিত আকারে গুটিকয়েক পর্যটকবাহী নৌ-যান চলাচল করে থাকে। কিন্তু সুন্দরবনের নদীগুলিতে এ সময় পর্যটকবাহী নৌযান বাদে সব ধরনের নৌ-যান চলাচল করে থাকে। তাই আমরা দাবি জানাই, এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টোয়াসের উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম বাচ্চু, সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম জমাদ্দার, সহ-সভাপতি আলা আমিন লিটন, বাংলাদেশ ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের (টিগাব) সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম বুলু, টোয়াসের যুগ্ম সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম কচি, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ জামান খান পপুল, খুলনার রূপসী বাংলা ট্যুরিজমের স্বত্বাধিকারী কাজী মনজুর-উল-আলম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।