ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

ইউনাইটেডের প্লেন কেনায় জালিয়াতির হোতা তাসবির

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪
ইউনাইটেডের প্লেন কেনায় জালিয়াতির হোতা তাসবির

ঢাকা: জালিয়াতি করে উড়োজাহাজ কেনার হোতা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী।  

প্রচলিত আইন অনুযায়ী উড়োজাহাজ কেনার কথা থাকলেও সব নিয়ম ভেঙে জালিয়াতি করে উড়োজাহাজাজ কেনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্যাপ্টেন তাসবির।

শুধু তাই নয়, উড়োজাহাজ কেনার নাম করে অনিয়মের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৪১৫ কোটি টাকা তোলার পাশাপাশি ২০ বছরের পুরনো উড়োজাহাজ কিনেছেন আন্তর্জাতিক দর থেকে অনেক বেশি দামে। এতে দেশ থেকে বাইরে অর্থপাচারের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
 
প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী, খুচরা যন্ত্রাংশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে ক্রয় করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ দরপত্র ছাড়া শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের একক সিদ্ধান্তে উড়োজাহাজ কিনেছে।   

ইউনাইটেড এয়ারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পায়, বিমান সংস্থাটি ২০ বছরের পুরনো উড়োজাহাজ কিনেছে আন্তর্জাতিক দর থেকে অনেক বেশি দামে। এছাড়া একই সময় কেনা একই মডেলের উড়োজাহাজ তারা কিনেছে ভিন্ন ভিন্ন দামে।
যেমন- এমডি-৮৩ মডেলের তিন জাহাজের মূল্য ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৭৬ লাখ ২০ হাজার ডলার, ৮৮ লাখ ২৪ হাজার ৫৮০ ডলার এবং  ৭৬ লাখ ডলার। অন্য তিনটি মডেলের ক্ষেত্রেও একই রকম করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে।  

ওই সময় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কোম্পানির উড়োজাহাজের সংখ্যা ছিল আটটি। কিন্তু মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয় চারটির তথ্য। বাকি চারটির তথ্য তারা গোপন করে। এর মাধ্যমে তারা এসইসির আইন লঙ্ঘন করে।

এই অনিয়মের তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে দুদক ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে জানতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে তারা দুদককে জানায়, কোম্পানির লিখিত কোনো ক্রয় নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। ক্রয় নীতিমালা প্রনয়ণের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।

নীতিমালা প্রণয়ন না হলেও কোম্পানির প্রয়োজনে ৯টি উড়োজাহাজ কেনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এমডি-৮৩ মডেলের তিনটি উড়োজাহাজ। এতে ব্যয় হয় দুই কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮০ ডলার। দুইটি এয়ারবাস কেনা হয় দুই কোটি ৬২ লাখ ৫৫ হাজার ডলারে। দুটি এটিআর উড়োজাহাজ কেনা হয় এক কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ডলারে এবং ড্যাশ-৮ মডেলের দুটি উড়োজাহাজ কেনা হয় এক কোটি এক লাখ ২০ হাজার ৭৯৬ ডলারে।

এই ৯টি ঊড়োজাহাজ কী পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রয় করা হয়েছে -এ ব্যাপারে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী জানান, গত ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদ উড়োজাহাজ ও উড়োজাহাজের খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় করার জন্য তাকে ক্ষমতা দেয়।

দুদকের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী, খুচরা যন্ত্রাংশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে ক্রয় করা হয়ে থাকে। কিন্তু ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজ ক্রয়ের কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান ছাড়াই শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের দেওয়া ক্ষমতা বলে একক সিদ্ধান্তে ৯টি উড়োজাহাজ কেনে।

তাছাড়া এসব উড়োজাহাজ জ্বালানি সাশ্রয়ী নয় এবং উড়োজাহাজ চলাচলের উপযুক্ত করতে সি-চেক, ইঞ্জিনিয়ার ও কেবিন ক্রুদের প্রশিক্ষণ -সবকিছু নতুন করে করতে হয়েছে। প্রতিটি উড়োজাহাজ ক্রয় প্রক্রিয়াটি প্যাকেজ আকারে ফিনিক্স এয়ার ক্রাফট লিজিং থেকে নেওয়া হয়। কিন্তু কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে উড়োজাহাজ ক্রয় এবং এর যন্ত্রাংশসহ আনুষঙ্গিক খরচ আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক বিমান বাহিনীর প্রকৌশল পরিদপ্তরের এক উইং কমান্ডারকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তিনি অনুসন্ধানে উড়োজাহাজ কেনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছেন।

** ইউনাইটেড এয়ারের চেয়ারম্যান তাসবিরুলের পদত্যাগ

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।