ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

পাহাড়ের ভাঁজে পৌনে ৪ দিন

জাকারিয়া মন্ডল, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৪
পাহাড়ের ভাঁজে পৌনে ৪ দিন ছবি: খন্দকার হাসিবুজ্জামান ও সালাম ফারুক

বান্দরবান থেকে ফিরে: মারমা কটেজের ঝুল বারান্দায় দাঁড়াতেই চোখ জুড়িয়ে এলো। কাঠের পাটাতনের নিচে যেন গড়িয়ে নেমে গেছে ঘাস আর গাছ-গাছালি ছাওয়া পাহাড়ের এবড়ো-থেবড়ো শরীর।

কয়েকশ’ ফুট নিচে চিলতে চিলতে উপত্যকা।

তারপর আরো পাহাড়। পাহাড়ের ওপাশে পাহাড়। কোনটা পূর্ব থেকে এসে পশ্চিমে মুখ বুজেছে দুই পাহাড়ের কোলে। কোনটাবা পশ্চিম থেকে এগিয়ে গেছে পূবে সাঙ্গুর তীর পর্যন্ত।

এখান থেকে বান্দরবান শহরের দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। কিন্তু অসংখ্য পাহাড়ের সমাবেশে দৃশ্যমান বুনো সৌন্দর্যে ওই দূরত্ব ঠাহর করারই জো নেই। দৃষ্টিসীমায় দাঁড়িয়ে থাক‍া বৃক্ষবহুল পাহাড়ের সারি অনেকটা প্রাকৃতিক প্রাচীরের আদল নিয়ে মনে করিয়ে দেয় পাহাড় ঘেরা পাহাড়ের ভাঁজেই আছি আমরা।

মারমা ঐতিহ্যে গড়া এই কেঠো কটেজের পেছনে কয়েক ভাঁজে আরো উঠে গেছে পাহাড়ের শরীর। সামনে পাহাড়ের খাড়া শরীর ও ভাঁজে ভাঁজে সেগুন বন, কলাবাগান। মাঝেমধ্যে পাতাহীন গাছে ঝুলে আছে সজনে ডাঁটা। মিশ্র ফলের ক্ষেত এ দিকটায় তুলনামূলক কম।

রিসোর্টের পশ্চিম ঘেঁষে বান্দরবান থেকে বেরিয়ে আসা চিম্বুক রোড। ওই রোডেই দেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তা পিক-৬৯। তারপর নীলগিরি। তার আগেই শৈল্য প্রপাত পড়বে পথের ধারে। লামা, থানচি, নাইক্ষ্যংছড়ি বা রুমা যাওয়ার রাস্তাও এই একটাই। ও পথেই যাওয়া যায় বগা লেক আর ক্রেওক্রাডংয়ে।

ঝুল বারান্দা থেকে সরাসরি তাকালে একটু পূবে দুই পাহাড়ের গড়িয়ে নামা শিরার ফাঁকে সাঙ্গু নদীর চিকচিকে জল।      

পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেবে এই এপ্রিলই বারোমাসী প্রবাহের এ নদীর সবচেয়ে শুকনো মৌসুম। সেকেন্ডে মাত্র ১ ঘনমিটার পানি বয়ে যায় এখন। গভীরতা নেমে আসে মাত্র এক মিটারে। অথচো বর্ষাকালে পাহাড় বেয়ে নামা পানিতে ফুলেফেঁপে উন্মত্ত হয়ে ওঠে সাঙ্গু। জুলাই-আগস্টে সেকেন্ডে ২ হাজার ৭শ’ ঘনমিটার পানি বয়ে যায় সাঙ্গুর বুক বেয়ে। শুকনো মৌসুমের ১ মিটার গভীরতা বেড়ে হয়ে যায় ১৫ মিটার।

এই সাঙ্গুই পার্বত্য এলাকার প্রধান নদী। এর দৈর্ঘ্য ১৮০ কিলোমিটার। বান্দরবানে প্রস্থ ১৫০ মিটার। এর অববাহিকার আয়তন ১ হাজার ২৭৫ বর্গ কিলোমিটার।

বহুমুখী বিশেষণে স্বত্যন্ত্র এ নদীর অন্যতম বৈশিষ্ট হয়ে আছে অবাক করা প্রবাহ পথ। দেশের আর সব নদীই উত্তর থেকে বয়ে গেছে দক্ষিণে। কিন্তু মায়ানমারের আরাক‍ান পর্বত থেকে উৎপন্ন সাঙ্গু নদী বান্দরবানের থানচিতে বাংলাদেশে প্রবেশের পর উজান বেয়ে উঠে এসেছে উত্তরে বান্দরবান পর্যন্ত। তারপর কখনো পশ্চিম, কখনো উত্তর-পশ্চিমে এগিয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালী পেরিয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে।

এ নদীর তীরেই থানচি, রুমা আর বান্দরবান শহর। বলা চলে, মিলনছড়িতে সাড়ে তিন দিনের জন্য আমাদের আড্ডাগাড়া রিসোর্টটিও এক অর্থে ওই সাঙ্গুরই তীরে।

পাহাড়ের কোলে এভাবে পৌনে চার দিন কাটিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা যারপরনাই উদ্বেলিত, উচ্ছ্বসিত।

‘ট্যোবাকো কনট্রোল ওয়ার্ক শপ ফর সিনিয়র জার্নালিস্ট’ কর্মসূচিতে অংশ নিতেই এই পাহাড়ের ভাঁজে আসা। হিলসাইড রিসোর্টে ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো কনট্রোল ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি-ট্যোবাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজক।

সকালের খবরের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার তৌহিদুর রহমান মারমা-২এ আমার রুমমেট। চমৎকার মানুষ। গুনগুনিয়ে মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর শচীন দেব বর্মন আওড়ান সারাক্ষণ। গলাটাও বেশ মিষ্টি। দুই কক্ষ বিশিষ্ট মারমা কটেজের অপর রুমটিতে মাছরাঙা টেলিভিশনের নিউজ এডিটর হামিদুল হক ও কালের কণ্ঠ’র সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিক মারুফ।

এ রিসোর্টের মোট সাতটি কটেজের মধ্যে হানিমুন কটেজ হিসেবে পরিচিত ময়নাই কেবল মারমা কটেজ থেকে কিছুটা নিচে। মারমার খোলা বারান্দায় দাঁড়ালে হাতের বাঁয়ে পাহাড় বেয়ে কিছুটা নামলে ময়না কটেজ। কটেজটি দোতলা। সেখানে এক রুমে ঘাঁটি গেঁড়েছেন নয়াদিগন্তের ডেপুটি এডিটর আযম মীর ও অর্থনীতি প্রতিদিনের নিউজ এডিটর হুমায়ুন সাদিক চৌধুরী। অপর রুমে সমকালের নিউজ এডিটর সবুজ ইউনূস ও  দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর নিউজ এডিটর সাজ্জাদ হোসেন।

মারমা কটেজের ডান পাশে অনেকটা সমান্তরালে ধনেশ। সিটিএফকে এর কান্ট্রি ডিরেক্টর তাইফুর রহমান ওই কটেজের বাসিন্দা।
sajne_1
বাকি সব কটেজ পাহাড়ের আরো উপরে। মারমা থেকে পাহাড় বেয়ে কিছুটা উঠলে হাতের ডানে বম কটেজ। প্রজ্ঞা’র প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর হাসান শাহরিয়ার, মিডিয়া লিয়াজোঁ অফিসার খন্দকার হাসিবুজ্জামান ও ইভেন্ট ম্যানেজার ওয়ালি নোমান ঐতিহ্যবাহী এই বম কটেজের অস্থায়ী অতিথি।

বম কটেজ ছাড়িয়ে পাহাড় বেয়ে আরো উঠে গেলে হাতের বাঁয়ে টুনটুনি কটেজ। এর এক রুমে এটিএন বাংলার নিউজ এডিটর শাহনাজ মুন্নী ও বাংলাভিশনের নিউজ এডিটর শারমীন রিনভী। আর এক রুমে বিডিনিউজের নিউজ এডিটর গাজী নাসির উদ্দিন খোকন ও আরটিভির ডেপুটি চিফ নিউজ এডিটর রাজিবুল হাসান খান।

এ সারির অপর কটেজ শ্যামার প্রথম রুমটিতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির নিউজ এডিটর মহিদুল ইসলাম রাজু ও যুগান্তরের অ্যাসিসট্যান্ট এডিটর সূচি সৈয়দ, দ্বিতীয়টিতে ডেসটিনির চিফ রিপোর্টার অনিল সেন এবং বাংলাভিশনের সিনিয়র নিউজ এডিটর ও আত্মা’র আহবায়ক রুহুল আমিন রুশদ, তৃতীয়টিতে সিটিএফকে’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইভা নাজনীন ও প্রোগ্রাম সাপোর্ট অফিসার সেলিনা আক্তার এবং চতুর্থটিতে প্রজ্ঞার প্রোগ্রাম অফিসার ফারজানা ববির আবাস।

মুনিয়া কটেজটির অবস্থান রিসিপশনের একেবারে সামনে ফুট বিশেক ওপরে। এর এক রুমে চ্যানেল আই এর নিউজ এডিটর জাহিদ নেওয়াজ খান ও গাজী টিভির অ্যাসিসট্যান্ট নিউজ এডিটর সালাম ফারুক। অপরটিতে সস্ত্রীক এনটিভির চিফ নিউজ এডিটর জহিরুল আলম।

রিসিপশনের সঙ্গেই রিসোর্টের রেস্তোরাঁ রিগ্রি খিয়ং। সত্তরটির মতো বাঁশবাঁধানো মাটির সিঁড়ি বেয়ে তবে উঠতে হয় এখানে। রেস্তোরাঁর বারান্দায় দাঁড়ালে চোখের সামনে চলে আসে অসংখ্য পাহাড় বেষ্টিত ছোট ছোট সবুজ উপত্যকা। মারমা কটেজের বারান্দায় দাঁড়ালে যে পাহাড়ি সৌন্দর্য নজরে আসে তা আরো ভালো দৃশ্যমান হয় এখান থেকে।

এই বারান্দা আর রেস্তোরাঁর ছাদ প্রতিরাতেই আনন্দ মঞ্চ হয় আমাদের। সারাদিনের দৌড়ঝাঁপ আর কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি ভুলে সিনিয়র সাংবাদিক আযম মীর কখনো হন আযম খান, কখনো মান্না দে। তার সুরেলা গলায় আমরা বিস্মিত ও বিমোহিত হই। উৎসাহ দিই হাততালি দিয়ে। ওয়ান মোর এর বদলে টু মোর বলে উৎসাহ দিই আরো গাওয়ার।

প্রথম রাতে জাহিদ নেওয়াজ খান- ‘আমাদের শিল্পী রিনভী কোথায়’ বলে বারবার হাঁক কেন দিচ্ছিলেন তা বুঝা গেলো গান শুরু হওয়ার পর। রিনভীর দরাজ গলার গানে চাপা পড়ে যাচ্ছিলো রাতজাগা পাহাড়ি ঝিঁঝিঁর ছন্দোবদ্ধ ডাক। প্রয়াত কালজয়ী কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কল্যাণে নাগরিক শ্রোতাদের কাছে পরিচিতি পাওয়া উকিল মুন্সী যেন কিশোরগঞ্জের হাওর থেকে বান্দরবানের পাহাড় চূড়ায় উঠে এলেন রিনভীর গলায় ভর করে। প্রতিদিনের প্রধান শিল্পী হয়ে রইলেন রিনভীই।

তবে সবসময়ের জন্য সবাইকে জমিয়ে রাখা মানুষটি হলেন মহিদুল ইসলাম রাজু। কি আসরে, কি কাফেলায় সদাই সপ্রতিভ এই সিনিয়র সাংবাদিক সবসময়ই চলন্ত বিনোদনের বিষয় হয়ে রইলেন আমাদের কাছে।  

কখনো ঐতিহাসিক চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে তার পদভারে প্রকম্পিত হলো পাহাড় চূড়োর ঝুলন্ত বারান্দা। কখনো কেঁদেকেটে বইয়ে দিলেন অট্টহাসির রোল। কখনোবা রাজনীতিকদের সত্য ঘটনা সাবলীল ঢঙে তুলে ধরে করলেন নির্মল কৌতূকের আয়োজন। কখনো হেঁড়ে গলায় গাইলেন গানও।

প্রতি আসরের যবনিকা নামতেই ফের যে যার ঘরে। মারমা কটেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ছোপ ছোপ আঁধারের সৌন্দর্য দেখি। ভরা পূর্ণিমায় ভেসে যায় পাহাড়ের চূড়া আর সরু উপত্যকা। দূরে সাঙ্গুর ওপারে এই পূর্ণিমাতেও আলো ঝমকানো বুদ্ধ জাদি। নাক বরাবর চার কিলোমিটার দূরে বান্দরবান শহরের আলো এখান থেকে  বেশ বুঝা যায়।

হঠাৎ সে আলো ছাপিয়ে ওঠে জুমের আগুন। রাতের আঁধার চিরে পাহাড়ে পাহাড়ে যেন আগুন জ্বলছে। পূর্ণিমার আলোয় ধোঁয়ার কুণ্ডলি পাক খেয়ে উপরে উঠে যেতে দেখা গেলো।

কাঠের পাটাতনের নিচে কেথাও তক্ষক ডাকছে। একটা, দুটা, এক সঙ্গে কয়েকটা। মনে হলো যেন, ডাক-চিৎকারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে তক্ষক দল। একটু দূর থেকে ভেসে এলো ডাহুকের ডাক। বহু দিন পর ডাক শুনলাম ডাহুকের। জুমের আগুন পেরিয়ে আসা বাতাসে তবুও শীতের পরশ। বাথরুমে বাঁশের চাটাইয়ে ঝুলে আছে সোনালী রঙের অদ্ভূত সুন্দর এক ব্যাঙ। এমন রঙের ব্যাঙ জীবনে এই প্রথমবার দেখলাম। নিঃশ্বাসে যেন গাল ফোলাচ্ছে ব্যাঙবাবাজি। চোখ পিটপিটিয়ে দেখছে।

শেষ দিন এসে অসাবধানে পায়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল থেঁতলে গেলো আমার। পাহাড়ের সঙ্গে সম্পর্কটা আরো গভীর হলো যেন। এর আগে প্রথম দিনই পা কেটেছিলো শারমীন রিনভীর। চাঁদের গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলেন পায়ে। তৃতীয় দিন এসে দেখা গেলো ঠাণ্ডায় নাস্তানাবুদ হয়ে আছেন সেলিনা আক্তার।

পাহাড়ের আবহাওয়াটাও যেন অদ্ভূত। রোদের তাপকে বাতাস ঠিকঠাক বসতে না দিলেও তীব্র গরম ঠিকই টের পাওয়া যাচ্ছিলো দিনে। কিন্তু রাতে ঘুমাতে হলো কম্বল মুড়ে।

এরই ফাঁকে একদিন রাতে আমাকে পাহাড় বেয়ে বেড়াতে নিয়ে গেলেন হাসান শাহরিয়ার। চারদিকে পাহাড়ি নিরবতা। ক্রমশ উঁচু হয়ে উঠে যাওয়া পিচঢালা রাস্তা বেয়ে আমরা একটু ঢালু উপত্যকায় পৌঁছুলাম। নিচে আলোহীন আদিবাসী গ্রাম। হু হু করে বাতাস আসছে উপত্যকা ছুঁয়ে। কিছু সময় বাতাস গায়ে মেখে পাহাড়ি পান চিবুতে চিবুতে ফিরে এলাম রিসোর্টে। মাথার ওপর সঙ্গী হয়ে রইলো আলোময় চাঁদ।

তাইফুর রহমান আর ইভা নাজনীনের মধ্যে একটা অদ্ভ‍ূত মিল আছে। দু’জনেই সদাপ্রসন্ন। এই পাহাড়ি পথের টানা ক্লান্তিতেও কখনো কাউকেই ক্লান্ত হতে দেখা গেলো না।

পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান নেওয়া অতিথিদের মধ্যে সবসময়ই যোগাযোগ রক্ষার কাজ সুচারুভাবে পালন করে গেলেন খন্দকার হাসিবুজ্জামান। রাতে রুমে ফেরার পর তিনি একবার এসে খোঁজ নিয়ে যান কে কেমন আছে। জানতে চান কিছু লাগবে কি না। সকালে ফের তার ডাকেই ঘুম ভাঙে। তার তাগাদাতেই নাস্তার জন্য ছুটি রিগ্রি খিয়ং রেস্তোরাঁয়। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে অনবরত ওঠানামা করতে করতে শরীরের ঘাম যেন শুকানোর সময় পায় না বেচারার।
শেষ দিন রাত চারটার পর তার ডাকেই ভাঙলো কাঁচা ঘুম।

তড়িঘড়ি গোসল সেরে চলে এলাম রিসিপশনের সামনে। সেখানে সজনে ডাঁটার অনেকগুলো আঁটি রাখা। গত পৌনে চার দিনে যে ক’বেলা ভাত খেয়েছি এখানে প্রতিবারই ডালের সঙ্গে ছিলো এই সজনে ডাঁটা। বেশ হৃষ্টপুষ্ট। প্রিজারভেটিভ থাকার প্রশ্নই আসে না। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ পাহাড়ি গাছ থেকে পেড়ে আনা এই সজনে ডাঁটা উপহার দিচ্ছে সবাইকে। এমন উপহার পেয়ে খুশি সবাই। সজনে ডাঁটার আঁটি বগলে চেপে পৌনে একশ’ পাহাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলো সবাই।

গাড়িতে ওঠার মুখে শেষ রাতের আবছা আলোয় ক’টি সজনে গাছ দেখলাম শেষবারের মতো। পাতা নেই। শুধু মাথা নিচু করে ঝুলে আছে বিভিন্ন সাইজের সজনে ডাঁটা। এ যেন পাহাড় থেকে মাথা নুইয়ে বিদায় অভিবাদন।  

চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দরে গোল বাঁধলো এই সজনে ডাঁটা নিয়েই। কর্তৃপক্ষ কিছুতেই সজনে ডাঁটা সঙ্গে রাখতে দেবে না। বাধ্য হয়ে ত‍াই ট্যাগ লাগিয়ে লাগেজ বেল্টে তুলে দেওয়া হলো সজনে ডাঁটার সব ক’টা আঁটি। রসিক হুমায়ুন সাদিক চৌধুরী কৌতূক করে বললেন, ওরা সম্ভবত এসব ডাঁটাকে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করছে। আর যাই হোক, এসব দিয়ে তো কাউকে দেদারছে পেটানো যাবে।

আসার সময় মিনিট পঁচিশেক বসিয়ে রাখলেও ফিরতি পথে যথাসময়েই উড়লো উড়োজাহাজ। তবে ইউনাইটেড এয়ারের ‘গরুর গাড়ি’ সার্ভিসে উঠেই প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করতে লাগলাম। সবার শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে। বিমানবালারা তবু এমন গরমেও কি করে যেন ঠিক রেখেছেন মেকাপ।

১২ হাজার ফুট উপর দিয়ে ৫০ মিনিট উড়ে উড়োজাহাজ নামলো ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে।

তৌহিদুর রহমান বললেন, সজনে ডাঁটা সবাই কষ্ট করে কেনো নিয়ে যাবেন? তার চেয়ে উত্তরায় রেখে যান।

কেউ একজন স্মরণ করিয়ে দিলেন, উত্তরাতেই বাসা তৌহিদুরের।
এ তথ্য শুনে মুখ খুললেন রসিক মহিদুল ইসলাম রাজু। এবার তার সপ্রতিভ উত্তর, কাউকে সজনে ডাঁটা বেচার সুযোগ দেওয়া যাবে না। এতোজনেরটা তো সে বাসায় নিতে পারবে না। নিশ্চয়ই বেচবে।

এমন মন্তব্যে আরো একবার হাসির রোল পড়লো সবার ভেতর।

নেমে এসে সবাই লাগেজ বেল্টের কাছে দাঁড়ালাম। সজনে ডাঁটা আসছে। মিলনছড়ির পাহাড়ের ভেজালহীন সজনে ডাঁটা।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৪

** জীবন পুড়ছে তামাকের আগুনে
** কোম্পানিকে লাভে রেখে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।