ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শিল্পাচার্যের ১০৮তম জন্মদিন আজ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
শিল্পাচার্যের ১০৮তম জন্মদিন আজ

ঢাকা: শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৮তম জন্মদিন আজ (২৯ ডিসেম্বর) । ১৯১৪ সালের এই দিনে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন বিশ্ব বরেণ্য এই বাঙালি চিত্রশিল্পী।

তার বাবার নাম তমিজউদ্দীন আহমেদ, মায়ের নাম জয়নাবুন্নেছা। শৈশব থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক। রঙ-তুলির খেলায় ফুল-ফল, বৃক্ষ, লতাপাতা, মাছ, পাখিসহ নানা বিষয়কে মেলে ধরতেন ক্যানভাসে। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে বেড়ে উঠা জয়নুল তার শিল্পী সত্ত্বা দিয়ে বার বার পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছেন।

এদিকে শিল্পাচার্যের জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ বুধবার থেকে তিন দিনব্যাপী জয়নুল উৎসবের আয়োজন করেছে। সকাল পৌনে ১০টায় শিল্পাচার্যের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। েএরপর সকাল ১০টায় শুরু হয় উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

এছাড়া  শিল্পাচার্যের জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।

ছবি আঁকার টানেই ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে বাড়ি  থেকে পালিয়ে ডান জয়নুল আবেদিন। আশ্রয় নেন কলকাতায়। সেখানে ভর্তি হন গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসে।

১৯৩৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই চলে শিল্পাচার্যের চারুশিক্ষার দীক্ষা। ১৯৩৮ সালে ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে অর্জন করেন স্নাতক ডিগ্রি। ততদিনে শিল্পী হিসেবেও শিল্পরসিকদের স্বীকৃতি অর্জন করে নেন। স্থান করে নেন মুষ্টিমেয় আধুনিক ভারতীয় শিল্পীর তালিকায়। এরপর তিনি কলকাতা থেকে চলে আসেন ঢাকায়।

শিল্প আন্দোলনের পুরোধা জয়নুল আবেদিনের অক্লান্ত চেষ্টাতেই বাংলাদেশে আধুনিক শিল্পকলার বিকাশ ঘটে। অসাধারণ শিল্প দক্ষতায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন তিনি।

১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জনসন রোডে চালু করা জয়নুল আবেদিনের স্বপ্নের আর্ট স্কুলই ১৯৮৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাবির চারুকলা ইনস্টিটিউটে পরিণত হয়। ঢাকায় আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্যই শুধু নয়, পূর্ববাংলায় শিল্প শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু চেষ্টার জন্য সম্মান জানাতেই তাকে শিল্পাচার্য উপাধি দেওয়া হয়।

তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, মই দেওয়া, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি। শিল্পীজীবনে রঙ-তুলির ছোঁয়ায় জয়নুল আবেদিন ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে এঁকেছেন দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র। ১৯৬৯ সালে তার ক্যানভাসে উঠে আসে গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট। ১৯৭০ সালে এঁকেছেন ৬৫ ফুট দীর্ঘ বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘নবান্ন’। একই বছরে মনপুরা নামে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের হৃদয়স্পর্শী চিত্র সৃজন করেছেন। শিল্পীর এসব কালজয়ী শিল্পকর্ম দেশের সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পেয়েছে ব্যাপক প্রশংসা ও স্বীকৃতি।

নিজের অনবদ্য শিন্পকর্মের জন্য ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রাইড অব পারফরম্যান্স পুরস্কারে ভূষিত হন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করেন।

১৯৭৬ সালের ২৮ মে মৃত্যুবরণ করেন বিশ্ব বরেণ্য শিল্পী জয়নুল আবেদিন। পরে ঢাবির চারুকলা ইনস্টিটিউটে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
এসএমএকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।