ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘করোনার বিরুদ্ধে শিল্প’ প্রদর্শনী শিল্পকলায়

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
‘করোনার বিরুদ্ধে শিল্প’ প্রদর্শনী শিল্পকলায় ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: যেকোনো আন্দোলন, সংগ্রাম ও জাতি গঠনে শিল্প-সংস্কৃতির ভূমিকা অপরিসীম। শিল্প আন্দোলন সব সময়ই আলোড়িত করেছে মূল ধারার আন্দোলনকে।

তাইতো মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে চরম দুর্ভিক্ষের সময়টাও শিল্পীর রং-তুলিতে এখনো উজ্জ্বল। সেই ধারাবাহিকতাতেই এবার শিল্প তার নিজস্ব গড়নে আন্দোলন শুরু করলো বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) করোনার বিরুদ্ধে শিল্পকর্ম নিয়ে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় শুরু হলো মাসব্যাপী ‘আর্ট এগেইন্সট করোনা’ শীর্ষক প্রদর্শনী। বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।  

এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল আরেফীন এবং চিত্রশিল্পী জামাল আহমেদ।  

একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব মো. নওসাদ হোসেন।

আয়োজনে ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। করোনার এই দুর্যোগে প্রমাণ করেছি আমরা ‘বিজয়ী’ জাতি। মহামারি প্রতিরোধসহ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছি যা সারা বিশ্বের কাছেই দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাংক বলেছিল এই দুর্যোগে পৃথিবীর কোনো দেশই ৩ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। বাংলাদেশ ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এটা অভাবনীয়।

তিনি বলেন, করোনাকালে আমাদের খাদ্য সংকট হয়নি, কেউ না খেয়ে থাকেনি। সরকারি হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা দিয়ে চলেছে। আর দেশের জন্য সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেভাবে কাজ করেছে, তা আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, শিল্পকর্মের মাধ্যমে আমাদের শিল্পীরা মহামারির বিরুদ্ধে লড়েছেন। তাদের ছবি আমাদের ভাবায়, প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। তাদের ক্যানভাসে উঠে এসেছে আমাদের নানা পর্যায়ের লড়াইয়ের চিত্র। পৃথিবীর আর কোনো দেশের শিল্পীরাই করোনার বিরুদ্ধে এভাবে সাড়া দেয়নি যেভাবে বাংলাদেশের শিল্পীরা দিয়েছেন। আর করোনার বিরুদ্ধে প্রদর্শনী বাংলাদেশে তো বটেই, পৃথিবীতেও সম্ভবত এটাই প্রথম।

উদ্বোধনী আলোচনা শেষে কবি পার্থ মুখার্জীর কবিতা ‘শঙ্খচিল ও কবি মীনার বসুনিয়ার ‘তিনি তোমাদের একার ঈশ্বর নন’ কবিতার অংশ বিশেষ আবৃত্তি করেন বরেণ্য বাচিক শিল্পী লায়লা আফরোজ। কবি রীতা নাহারের কবিতা ‘পৃথিবীর অসুখে তুমি যে মানবতার ঢাল’ আবৃত্তি করেন বরেণ্য বাচিক শিল্পী মীর বরকত। ‘মঙ্গল হোক এই শতকে মঙ্গল সবার’ গানের কথায় আইরিন পারভীনের নৃত্য পরিচালনায় এবং সাইফুল ইসলাম ইভানের নৃত্য পরিচালনায় লিয়াকত আলী লাকীর কথা ও সুরে ‘এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের’ দু’টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে  বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। এছাড়া ফিফা চাকমার নৃত্য পরিচালনায় সম্প্রীতির নৃত্য পরিবেশন করে চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীরা।

উদ্বোধনী আয়োজন শেষে প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, ইন্সটলেশন আর্টে শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরী তুলে ধরেছেন করোনাকালের হারিয়ে যাওয়া মানুষের মুখ। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনসহ আরও অনেকের মুখই ভেসে উঠেছে এই ইন্সটলেশন আর্টে। করোনা আক্রান্ত পিতাকে কাচের দেয়ালের ওপার থেকে দেখছেন তার সন্তান, কিন্তু ছুঁতে পারছেন না।

করোনাকালের এমন ভয়াবহতা ক্যানভাসে তুলে ধরেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী জামাল আহমেদ। অন্যদিকে এই ভয়াবহতার মধ্যেই মানুষকে ভালোবাসার কথা শিল্পকর্মে তুলে ধরেছেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। করোনাকালের এমন সব শিল্পকর্ম নিয়ে সাজানো হয়েছে মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ১ ও ২ নম্বর গ্যালারির এ প্রদর্শনীতে নবীন, প্রবীণ ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের ৩২৫টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। দেশীয় শিল্পীর পাশাপাশি প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে বেশ কয়েকজন বিদেশি শিল্পীর শিল্পকর্মও।

গ্যালারিতে প্রদর্শনীর পাশাপাশি অনলাইনে এ প্রদর্শনী দেখা যাবে। শিল্পকলা একাডেমির ফেসবুক পেজে এ প্রদর্শনীর ভার্চ্যুয়াল ডিসপ্লে করা হয়েছে। মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার জন্য উন্মুক্ত।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।