ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

তবুও রবীন্দ্রনাথ...

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০
তবুও রবীন্দ্রনাথ...

সল্টলেক (কলকাতা) থেকে: কলকাতায় পা রাখলেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা হয়। সেটা ছবি, ভাস্কর্য কিংবা সড়কের নামকরণের মাধ্যমে। কলকাতার মানুষেরা তার সৃজনে কতটুকু আকৃষ্ট, সে উত্তর জানা কঠিন। তবে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা প্রাঙ্গণে বিশ্বভারতীর স্টলে ভিড় সার্বক্ষণিক। যেখানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই তো রয়েছেই, তার সঙ্গে আছে তাকে নিয়ে লেখা গুণীজনের বই।

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ষাট বছর পেরিয়ে যাওয়ায়, তার কোনো লেখার এখন কপিরাইট নেই। কলকাতা তো বটেই বাংলাদেশেও বিভিন্ন প্রকাশনী রবীন্দ্রনাথের নানা বই, এমনকি পূর্ণাঙ্গ রচনাবলীও ছাপিয়ে ফেলেছে।

তবে রবীন্দ্রপ্রেমীদের কাছে এখনও রবীন্দ্র রচনাবলীর বিষয়ে ভরসা রাখেন তারই হাতে গড়া বিশ্বভারতীর ওপরে।

এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় দুইভাবে বিশ্বভারতী বিক্রি করছে রবীন্দ্র রচনাবলী। রেক্সিনে বাঁধাই করা ৩৬ খণ্ডের রবীন্দ্র রচনাবলীর দাম ১৩ হাজার ৪৫২ রুপি। তবে মেলা উপলক্ষে তা পাওয়া যাচ্ছে ১২ হাজার ১০৭ টাকায়। যাদের জন্য এ টাকাটা ‘চাপ’ হয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে সুলভ রবীন্দ্র রচনাবলী। যা পাওয়া যাচ্ছে চার হাজার ৮০০ টাকায়। এছাড়া ৩৬ খণ্ডের স্বরবিতান সূচিসহ দাম সাত হাজার ৭০ টাকা। মেলা উপলক্ষে পাওয়া যাচ্ছে ছয় হাজার ৩৬৩ টাকায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ণাঙ্গ জীবনী লিখেছিলেন প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়। চার খণ্ডের রচিত সেই রবীন্দ্র জীবনীও রয়েছে বিশ্বভারতীর স্টলে। চার খণ্ডের দাম একসঙ্গে দুই হাজার ৭৮০ টাকা। মেলা উপলক্ষে যা পাওয়া যাচ্ছে দুই হাজার ৫০২ টাকায়।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বিশ্বভারতীর স্টলে গিয়ে দেখা গেলো ভিড়। উপচে পড়া না হলেও, কর্মদিবসে এমন ভিড় আশা জাগানিয়া। পাঠকেরা আসছেন। কবিগুরুর বই কিনছেন। তার আগে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন বইয়ের পাতায়।

এমনই এক পাঠক সল্টলেটের বাসিন্দা দেবদূত বাসু। বাংলানিউজকে তিনি বললেন, রবীন্দ্রনাথ না পড়লে কি চলে? তিনি তো সার্বক্ষণিক সঙ্গী।

রবীন্দ্রনাথের এত রচনার মতো কোনটি তার পছন্দের শীর্ষে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, কবিতা। কবিগুরুর কবিতা আমার কাছে বন্ধুর মতো।

মেয়েকে নিয়ে বোসগঞ্জ থেকে এসেছিলেন চুমকি সরকার। নেড়েচেড়ে দেখছিলেন। এরই ফাঁকে কথা হলো তার সঙ্গে। বললেন, দেখুন, রবীন্দ্রনাথ কিন্তু এখনও প্রাসঙ্গিক। নানা সঙ্কটে কিন্তু এখনও তার রচনা থেকে আমরা প্রেরণা পাই। কিন্তু এই ফেসবুক-টুইটারের যুগে আমাদের ছেলেমেয়েরা কিন্তু তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এজন্যই মেয়েকে নিয়ে আসা।

বইমেলার ৪০০ নম্বর স্টল বিশ্বভারতীর। এখানে রবীন্দ্রনাথের বইগুলো পেপারব্যাক আকারে বিক্রি হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে গীতাঞ্জলি, শেষের কবিতা, বাংলাভাষা-পরিচয়, সহজপাঠ, গোরা, ঘরেবাইরে, জীবনস্মৃতিসহ প্রায় সব বই। যার দামও হাতের নাগালে। ১০০ থেকে ১৫০ রুপির মধ্যে এসব বই পাওয়া যাচ্ছে। গেরুয়া রঙের প্রচ্ছদের সবগুলো বই। যাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বাক্ষরও রয়েছে।

মাত্র ১০০ রুপিতে পাওয়া যাচ্ছে গীতাঞ্জলি ও নৈবেদ্যর একটি সংগ্রহ। রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে  বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ থেকে ১৯৮১ সালে যা প্রকাশিত হয়েছিলো। রূপালী বর্ণের বক্সে করে বই দুটি একসঙ্গে মিলছে। যাতে উইলিয়াম রোটেনস্টাইন অঙ্কিত একটি রবীন্দ্র প্রতিকৃতিও রয়েছে।

মঙ্গলবার না হলেও বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বভারতীয় স্টলের দায়িত্বে থাকা পার্থ সাহার সঙ্গে আলাপ হলো। তিনি বিশ্বভারতীর গ্রন্থনবিভাগের দায়িত্বেও রয়েছে।

তিনি বলেন, ৪৪ বছর ধরে এ বইমেলা হচ্ছে, ৪৪ বছর ধরেই বিশ্বভারতী এতে অংশ নিচ্ছে। প্রতিদিনই পাঠক আসছেন, দেখছেন, কিনছেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে গল্পগুচ্ছ, সঞ্চয়িতা, শেষের কবিতা। আর বাচ্চাদের জন্য রচিত সহজপাঠ বইটির প্রতি পাঠকের বিশেষ চাহিদা রয়েছে।

‘রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ৬০ বছর পরে তার সকল রচনার কপিরাইট উঠে গেছে। এরপর অনেকেই অনেকভাবে তার বই বের করেছেন। কিন্তু সচেতন পাঠক বিশ্বভারতীর বই ছাড়া কিনতে চান না। এজন্য সব সময়ই এখানে পাঠকের ভিড় থাকে। ’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বইয়ের বাইরে রবীন্দ্র পরিবারের সদস্যদের বইও রয়েছে এখানে। সে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ও শান্তি নিকেতন নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইও রয়েছে স্টলটিতে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২০
ডিএন/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।