ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

পালাকারের নতুন নাটক ‘উজানে মৃত্যু’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৮
পালাকারের নতুন নাটক ‘উজানে মৃত্যু’ উজানে মৃত্যু নাটকের দৃশ্য। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: দেশের নাট্যাঙ্গনের অন্যতম নাট্যদল ‘পালাকার’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্টুডিও থিয়েটারভিত্তিক নাট্যচর্চায় অগ্রগামী এ দল এবার নিয়ে এলো আরও একটি নতুন মঞ্চনাটক; ‘উজানে মৃত্যু’। 

প্রবাদপ্রতীম সাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অপ্রকাশিত এ নাটক শুক্রবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হয়। এ নাটকের নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন শামীম সাগর।

নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, চরিত্রগুলোর নাম না থাকলেও নাট্যকার চিহ্নিত করেছেন- নৌকাবাহক, সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তি, কালো পোশাক পরিহিত ব্যক্তি হিসেবে। এ তিন চরিত্র শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। স্ত্রী, তিন ছেলে, বেঁচে থাকার জন্য উর্বর জমি; সবই ছিলো নৌকাবাহকের। কিন্তু কালে কালে সে হয়ে গেছে শূন্যহস্ত। তাই সে তার নৌকা বয়ে চলছে উজানের দিকে।

সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তি নৌকাবাহকের সহযাত্রী ও তার বাল্যবন্ধু। জীবন সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া নৌকাবাহকের অনুরূপ। আর কালো পোশাক পরিহিত ব্যক্তি উজানে যাত্রায় ভীত। কেননা প্রথাবদ্ধ অস্তিত্বহীন জীবনে তার কোনো সংশয় নেই।

নাট্যকার চরিত্র তিনটির কোনো নাম না দিলেও অবয়ব দিয়েই নাটকে তাদের প্রাণস্পন্দন পাওয়া যায়। এই দুই ব্যক্তির সংলাপে পরবর্তীতে নৌকাবাহকের পরিচয় পাওয়া যায়।  

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যচেতনার অন্যতম হলো মৃত্যুচেতনা। যা তার গল্প উপন্যাসে প্রায়ই পাওয়া যায়। ‘উজানে মৃত্যু’ নাটকে নাট্যকার এই চেতনার প্রকাশ দেখিয়েছেন দারুণ মুন্সিয়ানায়। উজানে মৃত্যু নাটকের দৃশ্য।  ছবি: বাংলানিউজনাটকের নির্দেশক শামীম সাগর বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ‘পালাকার’ স্টুডিও থিয়েটারভিত্তিক নাট্যচর্চায় দেশের নাট্যপ্রেমীদের মাতিয়ে আসছে। রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’, সেলিম আল দীনের ‘বাসন’, উডি অ্যালেনের ‘ডেথ নকস’, ব্রেটল্ড ব্রেখটের ‘রাইফেল’, ফ্রানজ জ. ক্রোয়েটজের ‘রিকোয়েস্ট কনসার্ট’সহ নানা বিষয়-বৈচিত্র্যের ও নিরীক্ষাধর্মী নাট্যপ্রযোজনা উপহার দিয়ে আসছে তারুণ্যদীপ্ত এ থিয়েটার সংগঠন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত নাটক ‘উজানে মৃত্যু’ নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হওয়া।

এ নাটক সম্পর্কে নির্দেশক বলেন, ‘অ্যাবস্ট্র্যাক্ট’ এবং ‘অ্যাবসার্ড’ সমার্থক নয়; তবে কিছুটা নৈকট্য আছে। ওয়ালীউল্লাহর ‘উজানে মৃত্যু’ নাটকটি বিমূর্ততা ও অ্যাবসার্ডিটির মাঝামাঝি পরিসরে পরিভ্রমণ করে। আশা করছি, একদল নবীন কর্মীর অভিনীত এ নাটক আবারও স্টুডিওকে সরব করে তুলবে। আর নাট্যপ্রেমীরা পালাকারের স্বভাবজাত নিরীক্ষার এ প্রযোজনায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে নতুন করে চিনবেন।

বিমূর্ততা ও কাব্যিক আবহের এ নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান শুভ (নৌকা বাহক), সাজ্জাদ হোসেন নিষাদ (সাদা পোশাকধারী), চারু পিন্টু (কালো পোশাকধারী), শতাব্দী সানজানা (বউ, বাইচাল, কোরাস), সোনিয়া আক্তার (ডুবে মরা ব্যক্তি, কোরাস) ও নির্ভানা ইভা (মহাজন, বাঁশে বিদ্ধ ব্যক্তি, কোরাস)।

সোজাসাপ্টা গল্পের এ নাটকের ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে রয়েছে অন্তঃশীলা নির্ঝরিণীর মতো আশ্চর্য সব দর্শন আর অন্তর্বাস্তবতার কথকতা। সেই কথকতার সঙ্গে শৈল্পিকতায় যুক্ত হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতাংশ ও বেশকিছু মনোমুগ্ধকর গানের অংশবিশেষও। তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন শেখজাদা প্রিয়ঙ্কর শুদ্ধ, অধরা হাসান ও সাব্বির।

নাটকটির শিল্প নির্দেশনায় আছেন আমিনুর রহমান মুকুল, কোরিওগ্রাফিতে অনিকেত পাল বাবু, সংগীত পরিকল্পনায় অজয় দাশ, আলোক পরিকল্পনায় বাবর খাদেমী, পোশাক পরিকল্পনায় ফাহমিদা মল্লিক শিশির এবং প্রপস্ পরিকল্পনায় আছেন চারু পিন্টু।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৮
এইচএমএস/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।