ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদে (পর্ব-৫)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৬
ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদে (পর্ব-৫)

এই বর-কনের বরের বয়স মধ্য ত্রিশের কোঠায়, গালে খড়খড়ে দাড়ি। বেচারার শুকনো মুখের দিকে তাকালে মনে হয় কেন যেন এই বিয়েতে তার মতি নেই।

অন্যদিকে ছবি তোলাসহ সব উদ্দীপনা সেই মেয়েটির মাঝে, নিজের বিশাল গাউনটিকে কোনোক্রমে ধরে বেশ কসরতে তাকে চলতে হচ্ছে। বাগানের মেঠোধুলোয় ধূসরিত হচ্ছে তার শুভ্র গাউনের নিম্নাংশ।

ছবি তোলার এক ফাঁকে মেয়েটির গাউনের নিচে কি করে যেন এক গুবরে পোকা ঢুকে যায়, সেই নিয়ে তাকে বেশ নাজেহাল হতে হয়। কারণ বিশাল সেই গাউনের ঝালর ঘেঁটে একটি পোকাকে খুঁজে বের করা তো আর সহজ কোনো কম্ম নয়। আমি সে সময়ে লক্ষ্য করি মেয়েটি ওর বিয়ের অঙ্গুরি পরেছে ডান হাতের অনামিকায়। তবে কি বলকানের মেয়েরা বিয়ের অঙ্গুরি বাঁ হাতের অনামিকায় না পরে ডান হাতের অনামিকায় পরে নেয়?

কৌতূহল চাপতে না পেরে সেই এদিক ওদিক ফটোর ঝিলিকের মাঝেই মেয়েটিকে সে প্রশ্ন করি আমি। উত্তরে জানতে পারি, হ্যাঁ এটাই নাকি এ অঞ্চলের রীতি। যদিও আমি ভেবে বসি, হয়তো এমন হবে যে বলকানের অর্থোডক্স খ্রিস্টান রমনীদের মাঝেই এ ধারাটি বিদ্যমান। কিন্তু পরে বসনিয়ার বিবাহিতা মুসলিম নারীদের মধ্যেও এই ডান হাতের অনামিকায় বিয়ের অঙ্গুরি ধারণ করার প্রচলনটি খেয়াল করেছি, আর তা থেকেই বুঝে নিয়েছি মূলত এটি কোনো বিশেষ ধর্ম বিশ্বাসের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, বরং বলকানে প্রচলিত একটি রীতি বিশেষ।

 

বেশ কিছু ছবি তোলার পর সব পক্ষই কিছুক্ষণের জন্যে ক্ষান্ত দেয়, আমার পাশে এসে বসে সেই ভুঁড়ি-সর্বস্ব হেড ক্যামেরা-ম্যান। এখনও বেশ রোদের তাপ থাকায় ভদ্রলোক চেক শার্টের উপরের একটি বোতাম খুলে মাথার হ্যাটটি খুলে নিজেকে একটু হাল্কা বাতাস করে নেন। ঘটনাক্রমে তার হাতে থাকা ক্যামেরা আর আমার ক্যামেরার মডেল একই, তাই ভদ্রলোক কিছুটা উৎসুক হয়ে জানতে চান আমিও কি তার লাইনের লোক কিনা।

জবাবে জানাই এই কাজটিকে পছন্দ করলেও ঠিক এটিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা এখনও ভাবিনি। তারপরও হয়তো তিনি আমাকে সমগোত্রীয় ভাবেন, নিজের ঝোলা থেকে এক ব্যাগ বের করে তার মাঝ থেকে কয়েকটি ফল বের করে বলেন, “কুমলা, খাও, খাও, খাসা ফল”। কুমলা? হুম নামে তো এটি কমলার কাছাকাছি, কিন্তু দেখতে তো মোটেও তেমন নয়। কালচে বর্ণের কিছুটা বৃহদাকার কুলের মতো এ ফলটি খেতে কিন্তু বেশ। যদিও এর ইংরেজি প্রতিশব্দ সেই ক্যামেরা ওস্তাদের কাছ থেকে বের করতে পারি না, কিন্তু বেশ খানিকটা খাবার পর বুঝি এ আসলে অত্র অঞ্চলের ডুমুর ফল।

 

একটা সময় বহু দূর দিগন্তে সূর্য তার বিদায়ী রশ্মিগুলোকে ভাসিয়ে দিয়ে অস্তের পথে যাত্রা করে, আমি তাই দেখে পাহাড় থেকে নামবার প্রস্তুতি নেই। ঢাল বেয়ে নামার পর্যায়ে এক নাছোড়বান্দা মাঝি আমাকে ছেঁকে ধরে, তার প্রস্তাব হলো ঠিক এই মুহূর্তের চেয়ে নাকি ভালো কোনো নৌকাভ্রমণের সময়ই হয় না। তাকে দু আনা বেশি দিলে গোধূলি বেলার এই রক্তিম আভায় অখ্রিদের বুক থেকে ঝিমিয়ে থাকা এই শহরটিকে দেখবার পুরো বন্দোবস্তই সে করে দেবে। তার প্রস্তাব আমার মনে ধরে। মাঝি আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দ্বিতীয় কোন যাত্রীর আশায়, কিন্তু সে মুহূর্তে আর কাওকে জোটাতে না পেরে অবশেষে আমাকে নিয়েই তার ইঞ্জিন বোটের যন্ত্র চালু করে।
চলবে....

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৬
এএ

**ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদে (পর্ব-৪)

** ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদে (পর্ব-১)
** ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদে (পর্ব-২)
** ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদে (পর্ব-৩)

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।