ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

অপেক্ষার নিশুতি | আবু উবায়দাহ তামিম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
অপেক্ষার নিশুতি | আবু উবায়দাহ তামিম

নিনিদের বয়স এখন নয়-দশ কী এগারো হবে। ওদের বাড়ি থেকে খানিকটা এগোলেই ইচ্ছাময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন।

নিনিদ এই স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ে। সে নিয়মিত স্কুলে আসতো, সবার সঙ্গে খেলাধুলা হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকতো। লেখাপড়াতেও অনেক ভালো ছিলো সে। তবে এই কয়েকটি দিন ওর চেহারাটা খুব বিষণ্ন দেখাচ্ছে। এখন স্কুলে এসে নিনিদ আগের মতো কারও সঙ্গে মেশে না, কথাবার্তা বলে না। হাসিখুশি ভাব যেনো তার ভেতর থেকে পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। ক্লাসে এসে একদম চুপচাপ বসে থাকে। আনমনা হয়ে থাকে সারাক্ষণ।

ক’দিন আগে নিনিদের মামনির একটা নতুন বাচ্চা হয়েছে, আর নিনিদের এই বিষণ্নতাও শুরু হয়েছে তার কয়েকদিন পর থেকে। বাচ্চাটি ছেলে হওয়াতে সারাবাড়ি খুশির আমেজ চলছে, মিষ্টি খাওয়া-খাওয়ি হচ্ছে। বাচ্চার এখনও কোনো নাম দেওয়া হয়নি, তাই আপাতত সবাই ‘বাবুসোনা’ বলেই ডাকছে। মামনির মুখে, বাবার মুখে তো ‘বাবুসোনা’ ছাড়া আর কোনো কথা নেই। নিনিদও প্রথম প্রথম খুব আনন্দ পেয়েছিলো নতুন ভাইকে পেয়ে, কিন্তু পরে বিশাল এক স্নেহশূন্যতা অনুভব করলো। আগে তার বাবা-মামনি খুব আদর করতো তাকে, কিন্তু এখন সেই আদর তো দূরের কথা, খোঁজখবর নিতেই যেনো তারা ভুলে গেছে। আগে নিনিদ রাতের বেলা মামনি আর বাবার পাশে ঘুমাতো। যে রাতে মামনির বাচ্চা হলো, সে রাতেই নিনিদের বিছানা পরিবর্তন করে পাশের ঘরে শুতে দেওয়া হলো। নিনিদ সেখানে একা একা থাকে, এই দুঃখে সারা রাত যেনো তার চোখের পাতাদু’টি মিলতে চায় না। খুব কষ্ট করে রাত পার করে সে। ব্যথায় ছোট্ট বুকটা চিনচিন করে ওঠে তার।

নিনিদ এখন যাদেরকে বাবা আর মামনি বলে ডাকে, তারা কেউই নিনিদের আপন বাবা-মা নয়। নিনিদ ছোট থাকতেই তার বাবা-মাকে হারিয়েছে। তবে তার বাবার ছোটভাই হাসিম উদ্দিন তাকে এমন আদর-স্নেহের মধ্যে রেখেছিলো যে, নিনিদ কখনও তার বাবা-মা হারানোর ব্যথা অনুভব করেনি। সে হাসিম উদ্দিনকে বাবা বলে ডাকতো।

হাসিম উদ্দিন একসময় বিয়ে করে ঘরে নতুন বউ আনলো। তবে হাসিম উদ্দিনের বউটা সুন্দরী হলেও আশপাশের দু’চার ঘরের বউয়ের মতো নয়। সে ব্যবহার-চরিত্রের দিক থেকে অনেক উন্নত আর সৎ। নিনিদ যেহেতু হাসিম উদ্দিনকে বাবা বলে ডাকতো, তাই হাসিমুদ্দিনের বউকে সে মামনি বলে ডাকা শুরু করলো। সেও নিনিদকে খুব ভালোবাসতো, আদর-যত্ন সব করতো। কিন্তু দেড়-দু’বছরের মাথায় গিয়ে পরিবারে নতুন একজন অতিথি আসায় হঠাৎ করেই তার সব আদর-যত্ন পাওয়া যেনো বন্ধ হয়ে গেলো। ক’দিন আগেও নিনিদকে তার মামনি স্কুলে দিয়ে আসতো, আবার ছুটি হলে নিয়ে আসতো। কিন্তু এখন নিনিদকে একাই স্কুলে যেতে হয়। নিনিদের এভাবে মোটেও স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে না। সে মনে মনে কারও সঙ্গ চায়। কিন্তু কে দেবে তাকে সঙ্গ? তারা-তো অনেক আগেই চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে।

আজও স্কুল ছুটির পর সবাই যে যার বাড়ি চলে এলো। কিন্তু নিনিদ স্কুলের বারান্দায় রাখা পুরনো বেঞ্চের উপরে দুই পা উঠিয়ে বসে থাকলো একা একা। সে যেনো কার অপেক্ষায় বসে আছে স্কুলের সরু পথ চেয়ে। সময় চলে যাচ্ছে তার নিজ গতিতে। কিন্তু নিনিদের অপেক্ষার নিশুতি যেনো আর ফুরাতে চায় না। ওভাবেই গড়িয়ে আসছে বিকেলের পর সন্ধ্যে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।